মহাকাব্যের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় ‘প্রত্যাশা অনন্তকাল’

13

 

বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) চট্টগ্রাম কেন্দ্র ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে নির্মাণ করল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লিখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ১২৫ পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু নিয়ে টেলিফিল্ম ‘প্রত্যাশা অনন্তকাল…’। সম্প্রতি চট্টগ্রামের শিল্পী ও কলাকুশলীদের নিয়ে চট্টগ্রামে বিভিন্ন লোকেশনে টেলিফিল্মটির দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। আগামী ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে এই টেলিফিল্মটি প্রচার করবে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র রাত ৯টায়। এখনকার প্রজন্ম বিষয়বস্তুর গভীরে ঢুকতে চায় না। এখন ইন্টারনেট নির্ভর তরুণ সমাজের জানার পরিধি শুধুমাত্র গুগল। তাই এই প্রজন্ম ও আগামী প্রজন্মকে ইতিহাস জানাতে মূল বিষয়বস্তুর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তার মধ্যে কিছু কল্পনাযোগে একটা গল্প তৈরি করে দেশের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। ১৯৪৭ সনের দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে বিভাজিত হওয়া বাঙলা ভাষাভাষী মানুষ তথা ‘বাঙালি’ মনে প্রাণে কখনো পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক শাসনব্যবস্থা মেনে নেয়নি।
এ অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ভাষী মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের উপর শোষণ উৎপীড়নে নির্লজ্জ থেকেছে তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী। সেই থেকে মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের চিন্তা ভর করে শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যায়ে। দেশ বিভাগের পর এ দেশের মাটি ও মানুষের মাঝে বেড়ে উঠা একজন অকুতোভয় ‘বীর’ যাঁর বজ্র কন্ঠে প্রতিধ্বনিত হলো বাঙলার মুক্তি সংগ্রামের কথা সেই ‘মহাকবি’ মহানায়কের আগুন দীপ্ত কিরণ মধুমতী ধানসিঁড়ি নদীর তীর ধরে পদ্মা মেঘনা যমুনার জনসমুদ্রের মাঝে প্রজ্বলিত হয়েছে আশার প্রদীপ হয়ে। তাঁর সাহসী ভ‚মিকা মুক্তিকামি জনতাকে নিয়ে গেছে মুক্তির সোপানে। তাঁর আত্মজীবনের পরতে পরতে মেহনতী খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জীবন বোধের কথা উঠে এসেছে বারবার।
বঙ্গবন্ধুর মুক্তির মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তি সংগ্রামে বিজয়গাঁথার কাব্য রচিত হয়েছে। অথচ ১৯৭৫ এ একটি কুচক্রী মহল মহান নেতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্যে দিয়ে বাঙালির যাপিত জীবনে হাহাকার এনে দেয়। বাংলা হারায় তার পরম সম্পদ পরম রত্ন। বাঙালির জীবনে ঘটতে থাকে চরম নৈরাজ্য। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচারণ বর্ণনাতে ‘মাতমে’র দৃশ্যপট ভেসে ওঠে। গুমরে উঠে বুকফাটা কান্নার শব্দহীন আর্তনাদ। প্রজন্মকে জানতে হবে আমাদের জন্মের ইতিহাস। জানতে হবে মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহাসিক বাস্তবতা। অনুধাবন করতে হবে সঠিক ঘটনা প্রবাহ। ’৭৫ এর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর স্ব পরিবারে নৃশংস হত্যাকান্ড সংঘটিত হবার পর ততকালীন জনগোষ্ঠীতে যে অস্থিরতা বিদ্যমান ছিল তারই একটি প্রামাণ্য ইতিহাস নির্মাণ হয়েছে টেলিফিল্ম ‘প্রত্যাশা অনন্তকাল’এ। আজও স্বাধীন সার্বভৌম এই দেশে সেই অস্থিরতার নেপথ্য ক‚টকৌশলীরা বিদ্যমান। ক‚টকৌশল থেকে বেরিয়ে এসে বঙ্গবন্ধুর অসা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সাহসী ভ‚মিকায় জাগ্রত থাকতে হবে। সে দিন যারা রমনা রেসকোর্সের জনসভায় উপস্থিত ছিলেন তাদের জন্য সেটি এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। তর্জনী উঁচিয়ে বঙ্গবন্ধু বক্তৃতায় বলেন এ বারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এ বারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। সেই থেকে জনসমুদ্রের স্বাধীনতা শব্দটি একান্তভাবে আমাদের। কী অসাধারণ রাষ্ট্র চিন্তা ও রাজনৈতিক দর্শন সম্বলিত এ ভাষণ। পেছনে বন্দুকের নল সামনে লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর শ্রোতা। বঙ্গবন্ধু দীপ্ত প্রত্যয়ে একটি জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। একটি নিরস্ত্র জাতিকে সুসংগঠিত ও সশস্ত্র করে গড়ে তুলতে এমন একটা আশ্চর্য জাদুকরী পান্ডুলিপিহীন ভাষণ যা তাঁর সম্পূর্ণ চিন্তাশীল মনন জগত হতে উতসরিত। যা হয়ে গেল রাজনীতির অমর কবিতা। ‘মহাকাব্য’। বজ্রকন্ঠের এই ভাষণ বাঙালি জাতিগোষ্ঠীকে দেখিয়েছে আশার আলো ও দিকনির্দেশনা।
প্রত্যয়মন্ত্রে জেগেছে বাঙালি। সেই ধারাবাহিকতায় ন’মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেদিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সন্তানেরা ছিনিয়ে আনে লাল সবুজের বাংলাদেশ। আহা! ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই। যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই। তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা। মহাকাব্যের ‘মহানায়ক’কে নিয়ে এতো বড় আয়োজন দায়বদ্ধতার এবং গৌরবের। এর প্রশংসার দাবীদার বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার শ্রী নিতাই কুমার ভট্টাচার্য, নির্মাতা অরিন্দম মুখার্জি সহ এর সকল কলাকুশলী। দেওয়ান হামিদুজ্জামান বাচ্চুর সংলাপে এবং অরিন্দম মুখার্জী বিংকুর চিত্রনাট্য ও প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে ১৫ আগস্টের এই বিশেষ টেলিফিল্ম ‘প্রত্যাশা অনন্তকাল…’। এই ধরনের বিষয়বস্তু ও ইতিহাসকে কেন্দ্র করে আরো অনুষ্ঠান নির্মাণ যেন অনন্তকাল বিদ্যমান থাকে এ প্রত্যাশা সর্বস্তরের দর্শকের। বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের এই উদ্যোগ প্রজন্মান্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অনুশীলন ও অনুধাবন করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাঁর আদর্শ বুকে ধারণ করে আমাদের যেতে হবে বহু দূর।
লেখক: নাট্যকর্মী ও সাংবাদিক