মর্ত্যলোক ছেড়ে কৈলাশে ফিরলেন দেবী, সম্প্রীতির প্রার্থনা ভক্তদের

23

পূর্বদেশ অনলাইন
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো। বুধবার (৫ অক্টোবর) প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মর্ত্যলোক ছেড়ে কৈলাসে ফিরে গেলেন দেবী দুর্গা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেওয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলো বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এই আয়োজনের উদ্দেশ্য। চণ্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠী তিথিতে ‘আনন্দময়ীর’ আগমনে গত ১ অক্টোবর থেকে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা হয়। পরবর্তী ৫ দিন রাজধানীসহ দেশব্যাপী পূজামণ্ডপে পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে ভক্তরা দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়। এবার দেবী দুর্গা জগতের মঙ্গল কামনায় গজে (হাতি) চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসেন। এতে ঝড়, বৃষ্টি হবে এবং শস্য ও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে স্বর্গে বিদায় নেন নৌকায় চড়ে। যার ফলে জগতের কল্যাণ সাধিত হবে। বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা শেষে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়েছে। বুধবার (৫ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটায় শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। তেল-সিঁদুর পরিয়ে, পান, মিষ্টি মুখে দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ভিড় করেছেন ভক্ত ও অনুরাগীরা। নানা ধর্মের, শ্রেণি ও পেশার মানুষের অংশগ্রহণে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান হাজারো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। সকাল থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ থেকে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ট্রাকবাহী প্রতিমা নিয়ে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ভক্তরা জড়ো হতে শুরু করেন পতেঙ্গা সৈকতে। এরপর শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জনের পালা। এর আগে সকালে দশ উপাচারে দেবীর বিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জন সম্পন্ন হয়। এর মধ্য দিয়েই শেষ হয় শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। পরে দেবীর চরণে ফুল, সিঁদুর, বেলপাতা ও মিষ্টি দিয়ে বিভিন্ন আচার পালন করে ভক্তরা। লাল রঙকে শক্তির প্রতীক হিসেবে মনে করে নারীরা একে অপরের মাথায় সিঁদুর ছোঁয়ান। দীর্ঘায়ু কামনা করেন পরিবারের সদস্যদের। এদিকে প্রতিমা বিসর্জন নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন। পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুর রহমান জানান, শান্তিপূর্ণভাবে সাগরে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নির্বিঘ্নে প্রতিমা বিসর্জন দিতে পারবেন। সৈকত ও আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, এবছর চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান পূজামণ্ডপ জেএম সেন হলসহ ১৬টি থানায় ব্যক্তিগত, ঘটপূজাসহ ২৮২টি পূজামণ্ডপে পূজা উদযাপন হয়। পরিষদের পক্ষ থেকে সবাইকে বুধবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ধর্মীয় রীতি মেনে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, নেভাল-২, অভয়মিত্র ঘাট এবং কালুরঘাট সেতু এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর করোনার কারণে পূজার্থীরা প্রতিমা বিসর্জনে স্বতঃস্ফূত অংশ গ্রহণ করতে পারে নি। এ বছর কোনো বিধি নিষেধ না থাকায় সকলে নির্বিঘ্নে বিসর্জন দিতে পারবে আশা করি।