ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা তৈরি হচ্ছে

40

রাহুল দাশ নয়ন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ২০২৩। চলতি বছরের শেষদিকে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। এলক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের ১৬টি আসনেও ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা তৈরির কাজ চলছে। আগামী মার্চ মাসে ভোটারের হালনাগাদ তালিকা প্রকাশের পরপরই ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও ভোটার এবং ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়তে পারে বলেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রামের সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন পূর্বদেশকে বলেন, ‘ইসির নির্দেশনামতে উপজেলায় ভোটকেন্দ্রের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করার নির্দেশনা দিয়েছি। উপজেলা কর্মকর্তারা এখন সেই কাজটিই করছেন। মার্চ মাসে ভোটার তালিকা হালনাগাদ হলেই ভোটকেন্দ্র নিয়ে চূড়ান্ত কাজ শুরু হবে। আপাতত গত নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবন ঠিক আছে কিনা সেগুলো দেখা হচ্ছে। এরমধ্যে নদীভাঙন কিংবা পরিত্যক্ত হয়েছে এমন কেন্দ্রগুলো বাদ যাবে। আবার নতুন প্রতিষ্ঠান হলে সেগুলোকে ভোটকেন্দ্র করা যাবে। ভোটার সংখ্যার উপর ভোটকেন্দ্র ও কক্ষের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। মূলত, শেষদিকে গিয়ে যেন আমরা কাজের চাপে না পড়ি সেজন্য আগেভাগেই কিছু কাজ শেষ করে রাখছি।’
একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সে হিসেবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইতোমধ্যে গত বছরের জুলাই মাসে জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য প্রশাসনিক এলাকা সৃজন, বিয়োজন ও সংকোচন সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়। পরে এ সংক্রান্ত কোন পরিবর্তন না থাকায় সীমানা নির্ধারণের গেজেট প্রকাশ হয়। গত বছরের ২০ মে থেকে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ২ মার্চ হালানাগাদকৃত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপরেই ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করবেন নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, গত নভেম্বর মাসে নির্বাচন কর্মকর্তাদের সাথে অনুষ্ঠিত মাসিক সভায় ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। সে হিসেবে আটটি উপজেলা থেকে ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা জমা পড়েছে। বাকি উপজেলাগুলো এখনো ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরির কাজ শেষ করতে পারেনি। গত ১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত মাসিক সভাতেও একই নির্দেশনা পুনরায় দেয়া হয়েছে। চলতি মাসেই এ তালিকা জমা দেয়ার মৌখিক নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে এক হাজার ৮৪১টি ভোটকেন্দ্র ও কক্ষ ছিল ৯ হাজার ৮৭০টি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র বেড়ে দাঁড়িয়েছিল এক হাজার ৮৯৯টি এবং কক্ষ ছিল ১০ হাজার ৬৮৬টি। সর্বশেষ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১ আসনে ১০৪টি, চট্টগ্রাম-২ আসনে ১৩৬টি, চট্টগ্রাম-৩ আসনে ৭৯টি, চট্টগ্রাম-৪ আসনে ১০৮টি, চট্টগ্রাম-৫ আসনে ১৪০টি, চট্টগ্রাম-৬ আসনে ৮৪টি, চট্টগ্রাম-৭ আসনে ৯৬টি, চট্টগ্রাম-৮ আসনে ১৭০টি, চট্টগ্রাম-৯ আসনে ১৪৪টি, চট্টগ্রাম- ১০ আসনে ১১৭টি, চট্টগ্রাম-১১ আসনে ১৪৩টি, চট্টগ্রাম- ১২ আসনে ১১১টি, চট্টগ্রাম-১৩ আসনে ১০৬টি, চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ১০৪টি, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে ১৪৭টি, চট্টগ্রাম-১৬ আসনে ১১০টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রামে ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৪৬৫ জন ভোটার আছেন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২৯ লাখ ১২ হাজার ৭৫ জন এবং নারী ভোটার ২৭ লাখ ২৫ হাজার ৩৯০ জন। এ হিসেবে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে এবারও ভোটকেন্দ্র বাড়বে তা অনেকটা নিশ্চিত।
সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-আধা-সরকারি, স্বায়ত্ত¡শাসিত প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, সরকারি অফিস, ক্লাবকেই ভোটকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এবারও বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রগুলো নদীভাঙনসহ অন্যকোন কারণে বিলুপ্তি কিংবা পরিত্যক্ত না হলে পূর্বের কেন্দ্রগুলো অপরিবর্তিত থাকবে। তবে ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণেও নতুন ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। আগামী জুন মাসের মধ্যেই প্রতিটি ভোটকেন্দ্র চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ সুবিধাদি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আগেভাগেই খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ইসির নিয়মানুযায়ী গড়ে ২৫০০ ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র এবং আনুমানিক ৬০০ জন পুরুষ ও ৫০০ জন নারী ভোটারের জন্য একটি কক্ষ নির্ধারণ করতে হবে। ইভিএমের ক্ষেত্রে ৪৫০ জন পুরুষ ভোটার ও ৪০০ জন নারী ভোটারের জন্য একটি কক্ষ নির্ধারণ করতে হবে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাতায়াতের সুবিধা ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা এবং ভোটার এলাকাগুলো যেন ভোটকেন্দ্র সংলগ্ন ও সুনিবিড় হয় ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। পাশাপাশি দুটি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে দূরত্ব ৩ কিলোমিটারের অধিক হওয়া যাবে না। কোনো এলাকার ভোটারদের যেন নিকটস্থ ভোটকেন্দ্র অতিক্রম করে দূরবর্তী স্থানে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে গমন করতে না হয় তা বিবেচনা করেই ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত করতে ইসির নির্দেশনা রয়েছে।