ভুল চিকিৎসায় শিক্ষকের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের শাস্তি দাবি

72

রোগ নিরুপণকেন্দ্রের মনগড়া প্রতিবেদন ও ভুল চিকিৎসায় সাতকানিয়া মডেল হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সৈয়দ ফজলুল রহমান মুরাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী চিকিৎসকদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্কুলের সাবেক ছাত্র ও সর্বস্তরের জনতা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন করে এ দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে বিদ্যালয়ের কয়েকশ ছাত্র ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে এবং কালো ব্যাজ পরে অংশ নেন। ফেস্টুনে লেখা ছিলো, ‘আমাদের শিক্ষক কবরে কেন ডা. জিল্লুর ও তাপস মিত্রের কাছে জবাব চাই’। আরেকটি ফেস্টুনে কচি হাতে লেখা ‘মুরাদ স্যার মরলো কেন, বিচার চাই-বিচার চাই’।
সাতকানিয়া মডেল হাই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র এনামুল হকের সভাপতিত্বে ও কেএম হেলালের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সাবেক
ইউপি চেয়ারম্যান লায়ন ওসমান গণি চৌধুরী, প্রাক্তন ছাত্র মো. আমান উল্লাহ আমান, শহিদুল ইসলাম লিটন, আরিফুল হক কাইছার, মো. জায়েদ, মো. চুট্টু, আবদুল আহাদ, হারুনুর রশিদ, গালিব, রুহুল আমিন, হাসান মুরাদ, জায়েদ, হামিদ, রায়হান, শাকিল, জাবেদ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, শিক্ষক মুরাদ যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাপস মিত্র, ডা. মো. জিল্লুর রহমান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. শিমুল কুমার ভৌমিক ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়েছে দাবি করে তাকে কেমোথেরাপি দেন। এতে ওনার অবস্থার অবনতি হয়। পরবর্তীতে মুরাদ স্যারকে ভারতের এ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডাক্তার তার শরীরের কোথাও ক্যান্সার নেই বলে জানান। যক্ষা রোগীকে কেমো দেওয়ার কারণে রোগী ঝুঁকিতে বলে জানান তারা। পরে ১২ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওনার মৃত্যু হয়।
বক্তারা আরো বলেন, তিনজন চিকিৎসকের মনগড়া রিপোর্টের কারণে আজকে একজন শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। একাধিক ক্লিনিকে পরীক্ষায় ভিন্ন ধরনের রিপোর্ট আসলেও এ তিন চিকিৎসক তাতে কর্ণপাত করেননি। তারা এসময় ভুল চিকিসার জন্য দায়ী চিকিৎসকদের চাকরি থেকে অপসারণ, বিএমডিসি সনদ বাতিল, গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একইসঙ্গে দায়ী রোগ নিরুপণ-কেন্দ্রের লাইসেন্স বাতিলেরও দাবি জানান।
বক্তাদের অভিযোগ, গত ১২ নভেম্বর শিক্ষক সৈয়দ ফজলুল রহমান মুরাদ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম এ সাত্তারের শরণাপন্ন হন। তিনি যক্ষা রোগের চিকিৎসা প্রদানসহ প্রয়োজনীয় ঔষধ দেন। একই সাথে তিনি সহযোগী অধ্যাপক ডা. শিমুল কুমার ভৌমিকের মাধ্যমে কিছু পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। সে মোতাবেক শিমুল কুমার ভৌমিক ১৫ নভেম্বর বুকের বাম পাশে ফুসফুসে ক্যান্সার সন্দেহে ক্ষতস্থান থেকে মাংস নিয়ে বায়োপসি করান। সংগ্রহীত নমুনাটি প্যাথলোজি ডিপার্টমেন্ট হেড ডা. জিল্লুর রহমানের কাছে পাঠান। ডা. জিল্লুর রহমান রিপোর্টে ফুসফুসে ক্যান্সার আছে বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু শেভরণ ল্যাবরেটরি থেকে সিটি স্কেন করার পর বিপরীত রিপোর্ট আসে। তারপরও ডা. শিমুল কুমার ভৌমিক রোগীর ফুসফুসে সংগৃহীত নমুনায় কোনো প্রকার যক্ষার পরীক্ষা করার পরামর্শ না দিয়ে ক্যান্সার আছে বলে থেরাপি সার্জন ডা. সৈয়দ আমিনুল লেলিন ও ডা. তাপস মিত্রের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তাপস মিত্র রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়ার পরামর্শ দেন। ২৪ ও ২৫ নভেম্বর রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। এতে তার অবস্থার অবনতি হয়। পরে ভারতের চেন্নাই হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে ক্যান্সারের উপস্থিতি পাননি ডাক্তাররা। তাদের রিপোর্টে যক্ষার জীবানুর উপস্থিতি ধরা পড়ে।