বড় মাওলানা আমিন উল্লাহ (রহ.)

293

মহান আল্লাহ্ ও নবী করিম (সা.) এর দেখানো পথের প্রদর্শক মহান অলিয়ে কামেল, চট্টলগৌরবকুল মহান সাধাক পুরুষ, শিক্ষাবিদ, চট্টগ্রামের বড় মাওলানাখ্যাত হযরত মাওলানা আমিন উল্লাহ্ (রহ.) এর ১১৪ তম বার্ষিক ওরশ শরীফ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। তিনি আজ হতে ১১৪ বছর আগে আলোর পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করে মহান আল্লাহর কাছে চলে যায়। চন্দনাইশ উপজেলা সদরে তাঁহার মাজার শরীফ রয়েছে। মাজারসংলগ্ন বিশাল জামে মসজিদ, এতিমখানা ও বড় আকারের কবর স্থান রয়েছে। প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে শত শত পুণ্যার্থী এই মহান সাধক অলির দরবারে এসে প্রার্থনায় মিলিত হন। জেয়ারত করে মনের বাসনা পূরণের ইচ্ছায় সামিল হন। হযরত মাওলানা আমিন উল্লাহ্ (রহ.) কে বলা হয় চট্টগ্রামের বড় মাওলানা ছাহেব। তিনিই জীবন্ত অবস্থায় প্রাচীন চট্টগ্রাম মিরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত অঞ্চলে সব ধর্মের লোকের কাছে সম্মানিত ছিলেন। তিনি সবাইকে শান্তি ও মানবতার কথা বলতেন। হযরত মাওলানা আমিন উল্লাহ্ সাহেবের উক্তি ছিল ‘স্রষ্টারই এবাদত কর- সৃষ্টির কল্যাণ কর- নিজেকে মানুষ রূপে যোগ্য করে গড়ে তোল’ এই বাক্যের মাধ্যমে তিনি ধর্ম-বর্ণ-জাতির সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য মুরব্বী হিসেবে সম্মানের পাত্রের অধিকারী হন। কি হিন্দু, কি মুসলিম, কি বৌদ্ধ ধর্মের লোক, সবার কাছে মাওলানা আমিন উল্লাহ্ সাহেব বড় মাওলানা রূপে পরিচিত হন। মাওলানা আমিন উল্লাহ্ (রহ.) প্রকাশ বড় মাওলানা হুজুর ইন্তেকালের ১১৪ বছর অতিক্রম করলেও এখন তাহার মাজার শরীফে সব ধর্মের লোকজন দোয়ার আশায় হাজির হন। কর্ম ও আদর্শবান জীবনের মাধ্যমে মানুষ যে স্মরণীয়-বরণীয় হয় তার জ্বলন্ত প্রমাণ মাওলানা হযরত আমিন উল্লাহ্ (রহ.) প্রকাশ বড় মাওলানা ছাহেব। তিনি দুনিয়াতে অর্থ কড়ি রেখে যাননি। তাঁর এলম ও ইবাদত বন্দিগির পরিপূর্ণ জীবনকে মানুষ ও মানবতার কল্যাণে বিলিয়ে দিয়েছেন। রেখে গেছেন কর্মের উজ্জ্বল নমুনা। সেই আলোকিত জীবন বর্তমান সময়ে মানুষ সেই পথ ধরে চলছে। হক-হালাল চিনার উপায় পেয়েছে। কোরআন-হাদিসের দেখানো পথেই মানুষ চলছে। হিতাহিত ও জ্ঞানগরিমা বুঝার অধিকারী হচ্ছেন। হযরত মাওলানা আমিন উল্লাহ্ শাহ (রহ.) এর জন্ম স্থান চন্দনাইশ সদরে (সাবেক পটিয়া থানার পূর্ব জোয়ারা গ্রামে)। হযরত মাওলানা আমিন উল্লাহ্ (রহ.) এর পিতা ছিলেন আরেক জগৎ বিখ্যাত আলেম ও সুফি মাওলানা সানাউল্লাহ (রহ.), মাতা- বদরুন নেসা (রহ.), মাওলানা আমিন উল্লাহ্ সাহেবের জন্ম তারিখ সম্পর্কে জানা যায়, আলহাজ মোহাম্মদ মাহ্ফুজুল করিম চৌধুরী (কাঞ্চন) রচিত- হযরত শাহ্ সুফি মৌলানা আমিন উল্লাহ্ (রহ.) (বড় মৌলানা) এর পবিত্র জীবনী গ্রন্থে। এখানে উল্লেখ করা হয়- মহান এই সাধক পুরুষ সুফি সানা উল্লাহ্ (রহ.) ও বদরুন নেসা (রহ.) এর ঘরে সন ১২৪৮ হিজরী মোতাবেক ১২৩৭ বাংলা, ১৮৩০ ইংরেজি, ১১৯২- ২৬ মাঘ মাসের সোমবার সুবহে সাদেকের সময় জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি খোদা ভক্তির মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত করেন। পারিবারিক শিক্ষা ও স্থায়ী শিক্ষা শেষে তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য ১২৬৪ হিজরীতে কলিকাতা গমন করেন। সেখানে তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। জীবনে তিনি ফরজ, নফল ইবাদতসহ প্রায় সময় রোজা রাখতেন। তিনি শিক্ষকতা করতেন। তবে কোথায় তাহা জানা যায়নি। তিনি নিজ এলাকাতে মসজিদ, মকতব, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, কক্সবাজার, উত্তর চট্টগ্রামের অনেক জায়গায় হুজুরের ছাত্র ছিলো। তাঁরা পরবর্তীতে বড় আলেম ও দ্বীন ইসলামের খেতমত করে মহান সাধকে পরিণত হয়েছেন। হুজুরের জীবনী গ্রন্থে তাহার দুজন ছাত্রের নাম উল্লেখ করেছেন- তাঁরা হলেন জগৎ বিখ্যাত আলেম ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা- মহান অলিয়ে কামেল মাওলানা আবদুল হামিদ ফখরে বাংলা ও পীরে কামেল মৌলানা নজীব উল্লাহ্ শাহ্ (রহ.)। হুজুরের জীবন কর্ম ছিলো মানুষ, মানবতা ও মহান খোদার ইবাদত এর জন্য। তিনি উচ্চ মাপের সুফি সাধক ছিলেন।
হযরত মাওলানা আমিন উল্লাহ্ শাহ্ (রহ.) ইংরেজি ১৯১০, হিজরী ১৩২৮, বাংলা ১৩১৭-১৩৮ মঘী-২৬ মাঘ শুক্রবার তিনি মহান খোদার ডাকে সাড়া দিয়ে অন্যপারে চলে যায়। হাজার হাজার ছাত্র ও ভক্ত অনুরাগী আজও তাঁহার আদর্শ ও দেখানো পথে চলে মানবতার কল্যাণ ও ইহকাল-পরকালের মুক্তির জন্য কাজ করছেন। মহান এই সাধক পুরুষের ন্যায় ঘরে ঘরে মানবতাবাদী সৃষ্টি হোক এই প্রার্থনা।

লেখক : প্রাবন্ধিক