বিদ্রোহীদের দাপটে নৌকার প্রার্থীরা কোণঠাসা

55

কক্সবাজারে উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে টেনশনে পড়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। বিএনপির কোনো প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে না থাকলেও নিজ দলের শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাপটে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। জেলার ৮টি উপজেলার মধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী। বাকি ৬ উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থীর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এতে করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা চরম বেকাদায় রয়েছেন।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেন দলীয় প্রার্থী ছাড়া দলের কেউ নির্বাচন করতে পারবে না এমন কোনো নির্দেশনা এবার নেই। তাছাড়া দলের সাধারণ স¤পাদক ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দিয়েছেন, দলীয় প্রার্থী ছাড়াও দলের যেকেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হলে তাকেও স্বাগত জানানো হবে।
চকরিয়া, রামু, মহেশখালী, পেকুয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজার সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দলের মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে বিভক্ত হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কোনো কোনো উপজেলায় নেতাকর্মীরা তিনভাগেও ভাগ হয়ে নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বিশেষ করে টেকনাফে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে লড়ছেন সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম ও টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আলম। জাফর আলম সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ঘনিষ্টজন হিসাবে পরিচিত। নুরুল আলম টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশরের ছোট ভাই। তিন প্রার্থীর পক্ষে টেকনাফের নেতাকর্মীরা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
মহেশখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহিম। আর বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শরীফ বাদশা ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক সাজেদুল করিম। এ দুইজন নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তারা। তিন প্রার্থীর পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
একইভাবে চকরিয়া উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিদ্রোহী প্রার্থী ফজলুল করিম সাঈদী। চকরিয়ার নেতাকর্মীরা দু’নেতার পক্ষে বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে কাজ করছেন।
পেকুয়ায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম। অনেক নেতাকর্মী বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বেকায়দায় আছেন আবুল কাসেম।
রামু উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ রিয়াজুল আলমের বিপক্ষে শক্তভাবে অবস্থান নিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল। এখানেও অধিকাংশ নেতাকর্মী বিদ্রোহী প্রার্থী সোহেল সরওয়ার কাজলের পক্ষে জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
কক্সবাজার সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাইছারুল হক জুয়েল। তিনি বঙ্গবন্ধু ঘনিষ্ট সহচর প্রয়াত জননেতা মোজাম্মেল হকের পুত্র। তার পক্ষে নেতাকর্মীদের বড় অংশ কাজ করলেও তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও কক্সবাজার পৌরসভার ৪ বারের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার।
উল্লেখ্য, আগামী ১৮ মার্চ চকরিয়া, ২৪ মার্চ রামু, মহেশখালী, পেকুয়া, উখিয়া, টেকনাফ, কুতুবদিয়া ও ৩১ মার্চ কক্সবাজার সদর উপজেলায় ভোট হবে। গত ২৬ ফের্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে ৮৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৮ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৫ জন মনোনয়ন জমা দেন। এর মধ্যে কুতুবদিয়া এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও উখিয়ায় অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৬ উপজেলায় দল মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি বিদ্রোহীরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা বলেন, এখনও বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে করণীয় নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনও দিক-নির্দেশনা আসেনি। দলীয় নেতাকর্মীদের নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী যাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন, তিনিই আওয়ামী লীগ প্রার্থী। আমরা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
এদিকে, জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, কক্সবাজারে অতীতের সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। এবারও উপজেলা পরিষদের নির্বাচন যাতে অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে স¤পন্ন হয় সেজন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আশা করি, চলতি মাসে আরও একটি ভালো নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব হবে।