বিদ্যুৎ উন্নয়নে নতুন পালক

59

রাহুল দাশ নয়ন

দেশে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র ১৩২০ মেগাওয়াটের এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট জাতীয় গ্রিডের সাথে যুক্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুর ১টা ৫৬ মিনিটে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যুক্ত হয়। বাঁশখালীর গন্ডামারার বঙ্গোপসাগর উপকূলে ৬০৬ একর জমিতে দেশের খ্যাতনামা শিল্পগ্রæপ এস আলম ও চীনের সেপকো থ্রি যৌথ মালিকানায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করেছে। আগামী ৩১ মে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্যে আগামীকাল সোমবার মূল উৎপাদনে যেতে কমিশনিং শুরু হবে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ায় দেশের বিদ্যুৎ উন্নয়নে যুগান্তগারী অর্জন বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট ও এস আলম গ্রæপের পরিচালক শহীদুল আলম বলেন, ‘এটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প হলেও সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কারণে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা নেই। এই প্রযুক্তিতে কম কয়লা পুড়িয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। বাংলাদেশের শতভাগ বিদ্যুতায়ন ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই প্রকল্প।’
গতকাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে জাতীয় গ্রিডের ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনে যুক্ত করার লক্ষ্যে সরকার গঠিত ব্যাক ফিড কমিটির নয়জন সদস্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে উপস্থিত হন। এ কমিটির প্রধান ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশের প্রধান প্রকৌশলী মোরশেদ আলম খান সুইচ চালু করে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংযোগ ঘটান।
এসময় মোরশেদ আলম খান বলেন, ‘এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট আজকে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হলো। পর্যায়ক্রমে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সব ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। প্রকল্পের কাজ ৯৭ শতাংশ শেষ হয়েছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে রাস্তা ও নালার কাজ শেষ হলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাকি কাজও শেষ হবে। আগামী এপ্রিল মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পুরোপুরি প্রস্তুত হবে। এটি সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির প্রকল্প হওয়ায় পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা কম।’
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেন, এ প্রকল্পটি বাংলাদেশ ও এস আলম গ্রুপের জন্য বিশাল অর্জন এবং মাইলফলক। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাথে বাস্তবায়িত পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট (পিপিএ) এবং বাংলাদেশ সরকার ও পিজিসিবির সাথে বাস্তবায়িত ইমপ্লিমেন্টেশন এগ্রিমেন্ট (আইএ) অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে পারবে। বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পিজিসিবি, পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সকল স্টকহোল্ডারদের সার্বিক সহযোগিতা এবং সমর্থনের কারণেই প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেছে বলে জানান।
২০১৬ সালে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় এই বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও এসএস পাওয়ারের মধ্যে চুক্তি সই হয়। পাশাপাশি বিদ্যুৎ কেনাবেচা সংক্রান্ত চুক্তিও সই হয়। ওই বছরই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ যৌথভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। গত বছরের জুনে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করেছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। এ সময় গত ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা জানানো হয়েছিল।
জানা যায়, ২ দশমিক ৫০৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয়ে এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টটি নির্মাণে এস আলম গ্রæপ ৭০ শতাংশ ও চীনের সেপকো থ্রি ৩০ শতাংশ পৃষ্ঠাপোষকতা করছে। এ প্রকল্পের ঋণের পরিমাণ ১ দশমিক ৭৮২ বিলিয়ন ইউএস ডলার। এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজে গড়ে পাঁচ হাজার মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। যা উৎপাদন পর্যায়ে এক হাজার ২০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরকার সর্বনিম্ন মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা কয়লায় চলবে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছেই সাগরতীরে তৈরি করা বড় জেটিতে এসব কয়লা খালাস করা হবে। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বাঁশখালী থেকে চট্টগ্রামের মদুনাঘাট পর্যন্ত সঞ্চালন লাইনের ১৯৮টি টাওয়ার বসানো হয়েছে। মদুনাঘাট সাব-স্টেশনে যে গ্রিড আছে, সেই গ্রিডে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হবে। সঞ্চালন লাইনটি তৈরি করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক মো. শামীম হাসান পূর্বদেশকে বলেন, ‘বাঁশখালীর ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোপুরি উৎপাদনে গেলে লোড ক্রাইসিসের যে সম্ভাবনা আছে তা কেটে যাবে। দুটি গ্রেড মিলিয়ে গরমকালে আমাদের যে চাহিদা থাকে সেটিতেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। সামনে সেচ মৌসুম, বিশেষ করে মার্চ-এপ্রিলের দিকে অতিরিক্ত বিদ্যুতের যে চাপ যায় সেটি নিরসনে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।’