বিদায় নিচ্ছে মৌসুমি বায়ু

27

তুষার দেব

বাংলা বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী গতকাল রবিবার ছিল আশ্বিনের শেষদিন। এর মধ্য দিয়ে ঋতুচক্রে বিদায় নিয়েছে শরৎ। কার্তিকের হাত ধরে যাত্রা শুরু হলো হেমন্তের। কাগজে-কলমে শরতের বিদায়ের সাথে সাথে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাততাড়ি গুটাতে শুরু করেছে। চলতি অক্টোবর মাসের বাকি কয়েকদিনে মৌসুমি বায়ু সম্পূর্ণভাবে বিদায় নেয়ার পর নভেম্বরে ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে দিন ও রাতের তাপমাত্রা। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনমাস মেয়াদে সাগরে একাধিক নিম্নচাপের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় ও শৈত্যপ্রবাহের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাতাসের গতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চলতি মাসের শেষ দিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রত্যন্ত জনপদে তাপমাত্রা কমে শীতল হাওয়া অনুভূত হতে শুরু করবে। তবে চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ বড় বড় শহরগুলোতে শীত আসতে আরও সময় লাগবে। দেশের গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। এছাড়া যানবাহন চলাচল ও শিল্প-কারখানার কারণে শহরাঞ্চলের তাপমাত্রাও সবসময় তুলনামূলক বেশি থাকে। এ কারণে গ্রামাঞ্চলে শীতের আবহাওয়া দেখা দিলেও শহরে এর প্রভাব পড়তে সময় লাগে। আবার বাতাসের যে পরিবর্তন সেটি শুরু হয় দেশের উত্তরাঞ্চল হয়েই। এই কারণে ওইসব এলাকায় আগেই শীতের দেখা মেলে। তবে এবারও গতবছরের মত যথাসময়েই শীত আসছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
চলতি মাসের শুরুতে দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রকাশিত তিন মাস মেয়াদী আবহাওয়ার পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে, অক্টোবরে স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাত ছাড়াও এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। মাসের দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে বিদায় নিতে পারে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা)। বৃষ্টিপাতের মতই এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকতে পারে। নভেম্বরে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সাথে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়েও রূপ নিতে পারে। এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে। আর বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে রাতের তাপমাত্রা কমে গিয়ে চেনারূপে ধরা দেবে শীত ঋতু। এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দুটি মৃদু বা মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদী অববাহিকায় মাঝারি বা ঘন এবং অন্যত্র হালকা বা মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক পূর্বদেশকে বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে বিদায় নিয়েছে। দেশের অবশিষ্টাংশ থেকে মৌসুমি বায়ু বিদায় নেয়ার আবহাওয়াগত অবস্থা অনুক‚লে রয়েছে। ফলে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বিক্ষিপ্তভাবে সারাদেশে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছিল, সেটি একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে। তবে আগামী পাঁচদিনের আবহাওয়ার অবস্থার শুরুতে আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার আলামত বিদ্যমান রয়েছে। লঘুচাপ সৃষ্টি হলে তার প্রভাবে উপকূলে বৃষ্টি হতে পারে। মৌসুমি বায়ুর বিদায়ের কবে নাগাদ শীত নামতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলতি মাসের শেষ দিকেই উত্তরাঞ্চলের দিকে বাতাসের গতির পরিবর্তন ঘটবে। এরপর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে তাপমাত্রা। তবে অন্য এলাকার তাপমাত্রা কমতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে বলে। তিনি জানান, গত বছরের মত যথাসময়েই শীত আসতে শুরু করবে, আপাতত আমাদের পর্যবেক্ষণে এমনটাই মনে হচ্ছে। তবে বাতাসের গতি পরিবর্তনের উপরই সবকিছু নির্ভর করছে।
প্রকৃতিপ্রেমী বা আবহাওয়াদিরা মনে করেন, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি নিজের বৈশিষ্ট্য ও আচরণে বর্ষপঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডারে ছাপানো মাসভিত্তিক ঋতু বা কালের হিসাব মেনে চলাকে শিকেয় তুলে রেখেছে সেই কবে। মৌসুমের হিসাবেও সময়ের চেয়ে এখন অসময়ের চর্চাই বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এরপরও ষড়ঋতুর দেশে হেমন্ত মানেই প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা। পালাবদলের এ দোলায় কেবল জীবজগতই নয়, গা ভাসায় বৃক্ষরাজিও। বদলে যায় মানুষের জীবনধারা। ঝরে পড়ে গাছের পত্রপল্লব। শহর কিংবা গ্রামে ধুনকরদের ব্যস্ততা বাড়ে। লেপ-তোষক তৈরি ও মেরামত কিংবা শীত মোকাবেলার প্রস্তুতির উপযুক্ত সময় হেমন্ত। ক’দিন বাদে প্রকৃতিতে ধানের ডগা কিংবা দুর্বাঘাসের মাথায় জমতে শুরু করবে শিশির বিন্দু। নদী অববাহিকায় আবছায়া হয়ে নামবে হালকা কুয়াশার চাদর। কাল বা ঋতুচক্রের হিসাবে পৌষ-মাঘ দুই মাস শীতকাল হলেও দেশে শীত শুরু হয় কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে। শরতের বিদায়, হেমন্তের আবির্ভাব। দিনের দৈর্ঘ্য হ্রাস। রাতের তাপমাত্রা কমতে থাকা- এ যেন দুয়ারে শীতেরই কড়া নাড়া।