বাস ছাড়া চলছে সব যানবাহন

33

সপ্তাহখানেক আগেও রাঙ্গুনিয়ায় এ রকম অবস্থা ছিলনা। সবখানেই পুলিশের তল্লাশি ছিল। দীর্ঘ ২ মাস ধরে সামাজিক দূরত্ব মানার জন্য মানুষ অনেকটা সরকারি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল। মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রতি ভয় ছিল। মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের তেমন হয়নি। প্রশাসনের কড়াকড়িতেই রাঙ্গুনিয়া অনেকটা রক্ষিত ছিল। বাজারে সবজি ও ঔষধের দোকান ছাড়া সব দোকানই বন্ধ ছিল। বাজারে মানুষের ভিড় ছিল না।
গণপরিবহন চলাচলে ছিল নিষেধাজ্ঞা। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে তেমন গণপরিবহন চলাচল করেনি। সড়কে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল ছিল। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সবকিছু পাল্টে গেছে। এখন সড়কে পুলিশের অবস্থান ও তল্লাশি নেই। বাস ছাড়া সব পরিবহন চলছে। বাজারে নেই পুলিশের অবস্থান। উপজেলার সব বাজারে সব দোকানই খোলা। বাজারে মানুষের উপস্থিতি প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস পাওয়ার আগের যে অবস্থা ছিল এখন সে অবস্থায়। মানুষ প্রয়োজন ছাড়াই ঘর থেকেই বের হচ্ছে। সামাজিক দূরত্বের কথা মানুষ ভুলে গেছে। পাড়া-মহল্লায় মানুষের জটলা। রাতে ও দিনে যুবক সমাজ জড়ো হয়ে ফেসবুক নিয়ে উল্লাস করছে রাঙ্গুনিয়ায় গত সপ্তাহে উপজেলা সদরে ১ জনের করোনা ভাইরাস পাওয়ার পরও মানুষের টনক নড়েনি। মানুষ করোনার ভয়ে ঘরে থাকছেনা। সামাজিক দূরত্বকে পাত্তাই দিচ্ছেনা। তাদের মতে ২ মাস সব কিছু মেনেছি, কিছুই হয়নি। সামনের দিনগুলোতে কিছু হবেনা। এখন প্রশাসনের টহল, অবস্থান কিংবা কড়াকড়ি নেই। সড়কে যার যেমন ইচ্ছা সেভাবে চলছে।
সপ্তাহখানেক আগেও চন্দ্রঘোনা লিচুবাগানে কিংবা কাপ্তাই সড়কে মানুষের চলাচলে প্রশাসনের কড়াকড়ি ছিল। যানবাহন চলাচল করেনি। পুলিশ ও সেনাবাহিনী টহলে মানুষের মনে ভীতি ছিল। লিচুবাগান থেকে কোন যানবাহন চলাচল করেনি। এখন বাস ছাড়া সব যানবাহনই চলাচল করছে। আর মানুষ যানবাহনে করে তাদের গন্তব্যে যাওয়া আসা করছে অনায়াসে। পুলিশের অবস্থান না থাকাতে চন্দ্রঘোনা, লিচুবাগান, দোভাষী বাজার, রোয়াজার হাটসহ উপজেলার ১৫টি বাজারে ঈদের কেনা কাটা চলছে। পরিবার পরিজন নিয়ে দোকানে ভিড় করে পছন্দের জামা কাপড় কিনছে।
গতকাল চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে সব দোকানই খোলা। সব দোকানেই ক্রেতার ভিড়। পরিবার পরিজন ও আত্মীয়স্বজন নিয়ে বাজার করছে। সব মার্কেটে চলছে ঈদের বেচাকেনা। মানুষের সমাগম সে আগের মতই। হঠাৎ করে পুলিশের গাড়ি টহল দিতে বাজারে গেলে মুহূর্তের মধ্যে দোকানের সামনে বসা কর্মচারী দোকানের সামনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। দোকানের ভেতরে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। তখনও দোকানের ভিতরে নারী পুরুষের অবস্থান। পুলিশের গাড়ি ৫ মিনিট পর চলে গেলে আবার পুরোদমে দোকান খুলে জমজমাট বেচাকেনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে দোকানিরা। উপজেলার প্রায় বাজারে সেলুনের দোকানে নানা মানুষের ভিড়। অন্যান্য যে দোকানগুলো সরকার খুলতে নিষেধ করেছিল সেগুলোও খোলা। দর্জির দোকানে ভিড়। আর চায়ের দোকানের আড়ালে চলছে মুদি দোকানের ব্যবসা। প্রায় চা দোকানে এখন মুদি দোকানের পসরা সাজানো। আবার অনেক স্থানে চায়ের দোকানে বসে খোশগল্পে মেতে থাকতে দেখা যায়। পাড়া-মহল্লায় বিশেষ করে কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা দিনেরাতে সমান তালে আড্ডা দিচ্ছে। সাথে ফেসবুক নিয়ে গেইম ও জটলা পাকিয়ে মাতিয়ে থাকতে দেখা যায়।
চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান খাজা হোটেলের মালিক মোহাম্মদ হাছান সওদাগর জানান, আমরা বেঁচে থাকার জন্য হোটেল ব্যবসা বন্ধ করে এখন হোটেলের কর্মচারী দিয়ে হোটেলের সামনে মুদি দোকান খুলে দিয়েছি। প্রায় হোটেল এখন মুদি দোকান করছে। পরস্থিতি বদলালে আমরা আবার হোটেল ব্যবসয়ায় ফিরে যাব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দোভাষী বাজারের শাড়ি কাপড়ের দোকানের মালিক বলেন, পুলিশ আমাদের ক্ষতি করে না। আমরা সেনাবাহিনীকে ভয় পায়। আমাদের চলতে হবে। আমরা এই সময়ে গত রমজানে প্রতি দোকান কম হলেও প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছি। আর এখন ১০ থেকে ২০ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারিনা।
লিচুবাগান এলাকায় কথা হয় অটোরিকশাচালক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বললেন, ৪৩ দিন ধরে লকডাউন চলছে। আর কত দিন ঘরে বসে খাবেন? বসে খেলে রাজার গোলাও শূন্য হয়, আর তিনি তো অটোরিকশা চালক। জানালেন, গত ১০-১২ দিন অটোরিকশা চালাচ্ছেন। ভাড়া পাচ্ছেন দিনে ৮ থেকে ৯শ’ টাকা। মালিককে ৪শ’ টাকা জমা দেন। বাকি যা থাকে তা দিয়ে সংসার চালান। এ ছাড়া তার আর উপায় নেই। অনাহারে মরার চেয়ে কাজ করে খেয়ে মরা ভালো। আর সড়কে পুলিশের আগের মত কড়াকড়ি নেই।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান জানান, আমরা মানুষকে ঘরে নিরাপদে সুরক্ষিত রাখার জন্য নিজেরা ঘরের বাইরে ছিলাম। মানুষের মাঝে সচেতেনতা আসতে হবে। নিজেকে রক্ষা করতে ঘরে থাকতে হবে। আমরা সব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি সামাজিক দূরত্ব রক্ষার করার জন্য।