বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্প পাঁচ একর জায়গা বুঝে পাচ্ছে চসিক

118

ভূমি অধিগ্রহণ দীর্ঘসূত্রিতায় আটকে আছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্প। এর মাঝে প্রকল্পটি দ্বিতীয় সংশোধনীর চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ব্যয় বেড়েছে সাড়ে চার গুণ। সময় ক্ষেপন হয়েছে দীর্ঘ সাত বছর। এবার খালটি খনন করতে প্রস্তাবিত ২৫ দশমিক ১৬৬৬২ একর জায়গার পাঁচভাগের একভাগ বুঝিয়ে দিবে জেলা প্রশাসন। আগামী সোমবার এ পরিমাণ জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রকল্পটির পরিচালক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরহাদুল আলম পূর্বদেশকে জানান, আগামী সোমবার জেলা প্রশাসন আমাদের ৫ একরের মত জায়গা বুঝিয়ে দিবে। ঠিকাদার নিয়োগ করা আছে। তাই প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করা যাবে। ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া যত দ্রুত হবে খাল খনন তত তাড়াতাড়ি করা যাবে। সিটি করপোরেশন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত রয়েছে। প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনীর বিষয়ে তিনি আরও জানান, একনেকে উঠার আগে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিঠির সভায় সবধরনের শর্ত, সংশোধনী পূরণ করা হয়েছে। সভায় প্রস্তাবিত সংশোধনী পাস হয়েছে। এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উঠবে।
জানা গেছে, নতুন খালটি নগরীর বারইপাড়ার চাক্তাই খাল থেকে শুরু করে শাহ্ আমানত রোড হয়ে নুর নগর হাউজিং সোসাইটির মাইজপাড়া দিয়ে পূর্ব বাকলিয়া হয়ে বলির হাটের পাশে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়বে। খালটির দৈর্ঘ্য হবে আনুমানিক ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৬৫ ফুট। খালটির মাটি উত্তোলন, সংস্কার ও নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে উভয় পাশে ২০ ফুট করে ২টি রাস্তা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ করার কথা রয়েছে। প্রকল্পের প্রধান অংশ ২৫ দশমিক ১৬৬৬২ একর ভ‚মি অধিগ্রহণ। সম্ভাব্য ভ‚মিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে পৃথক পাঁচটি মামলা হয়েছে জেলা প্রশাসনের এল এ শাখায়। ভূমি অধিগ্রহণ করতে দুই কিস্তিতে সরকার থেকে ৯১৪ কোটি কোটি ৮৭ লাখ টাকা অর্থছাড় করে। সব বুঝে পেয়ে জেলা প্রশাসন ২০১৯ সালের জুন থেকে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ড্রেনেজ মহাপরিকল্পনায় তিনটি নতুন খাল খননের সুপারিশ করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। ২০১০ সালে নতুন একটি খাল খননের প্রকল্প গ্রহণ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। ২০১৪ সালে ২৪ জুন ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় নগরীর বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদীয় সংযোগ খালের প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। তবে এ সময়ের মধ্যে ব্যয় তিনগুণ বেড়ে হয়েছে ১২৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া তিনদফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও দ্বিতীয় বারের সংশোধনীতে ১১৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন শতভাগ জিওবি (সরকারি অর্থ) অর্থায়নে প্রকল্পটির সংশোধনী চাইলেও ৯৫ ভাগ জিওবি অর্থায়নের সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এসবের চূড়ান্ত ফয়সালা হবে প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব একনেক সভায় উঠলে।
এদিকে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি নগরীর ওয়াইজ পাড়া এলাকায় স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছিল প্রকল্পটির। এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে ৬ জন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া এ ঠিকাদার নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে অনেকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিটি করপোরেশন মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রেরণ করে। তারমধ্যে বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পের অগ্রগতি দেখানো হয় ৭৩ শতাংশ। অথচ উদ্বোধনের পর থেকে খাল খননের কোনো ভৌত অগ্রগতি হয়নি বলে জানা গেছে।