বাংলাদেশ ভারতের উন্নয়ন অংশীদার

14

পূর্বদেশ ডেস্ক

ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেছেন, ভারতের উন্নয়ন অংশীদার বাংলাদেশ। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব ব্যাপক এবং প্রাণবন্ত। আমরা যোগাযোগের ওপর জোর দিচ্ছি। গতকাল বুধবার হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে তার হোটেল স্যুটে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন। সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
ভারতীয় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ আরও বলেন, তিনটি মেগা ইভেন্ট উদযাপনে অংশীদার হতে পেরে তিনি খুবই খুশি ।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও দেশ দুটির মধ্যে ক‚টনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে, এমন একটি সময়ে তিনি এই অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত থাকতে পেরে খুবই আনন্দিত।’
ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বাংলাদেশে মুজিব শতবর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বিজয় দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিন দিনের সফরে গতকাল বুধবার ঢাকা এসেছেন।
বাংলাদেশে কেউ ‘সংখ্যালঘু নয়’: ভারতের রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনায় শারদীয় দুর্গাপূজার সময় বাংলাদেশে সহিংসতার প্রসঙ্গ উঠে আসে এসময় প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে সংখ্যালঘু হিসাবে কাউকে ট্রিট করা হয় না। সকলের সমান অধিকার দেওয়া হয়।’
শেখ হাসিনার জন্য এনেছেন মিষ্টি, কেক ও বিস্কুট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য উপহার হিসেবে মিষ্টি, কেক আর বিস্কুট নিয়ে এসেছেন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ, যা তৈরি হয়েছে তারই বাসভবনে।
শেখ হাসিনা বুধবার বিকালে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় তাকে এই উপহার দেন কোবিন্দ। এর আগে ‘সুস্বাদু ও মিষ্টি’ আম উপহার পাঠানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগে রাম নাথ কোবিন্দের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। পরে সাংবাদিকদের সামনে বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরেন তারা।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘গতবার আম পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেছেন, সেগুলো খুব সুস্বাদু, ও মিষ্টি ছিল। প্রধানমন্ত্রীর জন্য উনি উনার রাষ্ট্রপতি ভবনে নিজেদের তৈরি করা মিষ্টি, কেক এবং বিস্কুট নিয়ে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী যেন নিজে সেগুলি গ্রহণ করেন, সেই অনুরোধ তিনি করেছেন।’
তার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ভারতের রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এমন ¯েøাগানের প্রশংসা করেছেন ভারতীয় রাষ্ট্রপতির সফরসঙ্গী আসামের দুই সংসদ সদস্য। তারা বলেছেন, ভারতবর্ষের সবাই এক বাক্যে এটা বলে, সব লোক এটা পছন্দ করেছে।’ কানেকটিভিটি ও রোহিঙ্গা সঙ্কটের মত বিষয়গুলোও আলোচনায় এসেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন ও সীমান্ত হত্যার মত অমীমাংসিত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- সেই প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রীও তার বৈঠকে বলেছেন যে, আমরা অনেক সমস্যার সমাধান করেছি। বাকি যেগুলি আছে, মোটা দাগে সবগুলিকে এক জায়গায় নিয়ে এসে উনি বলেছেন, আমরা আলোচনার মধ্য দিয়ে এগুলি সমাধান করতে পারব।’
বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উনাকে বলেছি, আমাদের দুদেশের মধ্যে যে সোনালী অধ্যায়, সেটা অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয়। আমরা সব ধরনের বড় বড় সমস্যা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান করেছি। আমি বলেছি, আগামী ৫০ বছরে বিভিন্ন দিকে মিউচুয়ালি একে অপরকে সাহায্য করে আমরা সবাই উন্নতির শিখরে পৌঁছাব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ‘অভাবনীয় সাফল্যের’ কথাও আলোচনায় স্থান পেয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কানেকটিভিটির কথা আমরা তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি, ভারতের সাথে আমাদের গভীর সম্পর্ক। এই সম্পর্কের ফলেই এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অব্যাহতভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের কোঅপারেশন এই রিজিওনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে এবং আরও অনেক দূর যাবে। গরিবি হটানোতে আমাদের দুদেশের কোঅপারেশন আরও দরকার।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ খুবই দুঃখপ্রকাশ করেছেন, শোক প্রকাশ করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের আত্মত্যাগ নিয়ে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আশ্রয় দিয়েছিলেন, সেজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন :
বাংলাদেশে সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ঢাকা পৌঁছেই দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে একটি হেলিকপ্টারে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান এবং সেখানে পুস্পস্তবক অর্পণ করে জাতীয় বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
সেখানে পৌঁছালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল কমান্ডিং অফিসার (জিওসি) মেজর জেনারেল শাহীনুল হক এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা ভারতের রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান।
এসময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে, এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।
ভারতের রাষ্ট্রপতি স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে একটি অশোক গাছের একটি চারা রোপণ করেন এবং দর্শনার্থীদের বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
লাল গালিচা সংবর্ধনা: মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের আয়োজনে যোগ দিতে তিন দিনের সফরে গতকাল বুধবার সকালে ঢাকায় পৌঁছান ভারতের রাষ্ট্রপতি। এসময় তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট সকাল ১১টা ১০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করে।
ঢাকায় কোবিন্দের প্রথম সফরে তার সঙ্গে রয়েছেন ফার্স্টলেডি শ্রীমতি সবিতা কোবিন্দ, তাদের মেয়ে স্বাতী কোবিন্দ, ভারতের শিক্ষামন্ত্রী এবং দুইজন সংসদ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিমানবন্দরে ফুলের তোড়া দিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান এবং রাশিদা হামিদও ভারতীয় ফার্স্ট লেডিকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান।
মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল ২১ বার তোপধ্বনিসহ গার্ড অব অনার ও লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
এ সময় উভয় দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং এ সময় উভয় দেশের রাষ্ট্রপতি নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, মুজিবর্ষের সমাপনী এবং ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে রামনাথ কোবিন্দ স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় এসেছেন। ভারতের ১৪তম রাষ্ট্রপতি সে দেশের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা একমাত্র বিদেশি সম্মানিত অতিথি। তিন দিনের রাষ্ট্রীয় এ সফরে ঢাকায় এসেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা : দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নন্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মতি জাদুঘরের উদ্দেশ্যে স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করেন কোবিন্দ। সেখানে তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ। এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা তাকে ম্বাগত জানান।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেয়ার পর শেখ রেহানা ভারতীয় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখান। পরে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে রাখা পরিদর্শন বহিতে হিন্দি ভাষায় তার মন্তব্য লিখেন।
সফরকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন রামনাথ কোবিন্দ। এ সময় ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি টি-৫৫ ট্যাংক এবং একটি মিগ-২৯ যুদ্ধ বিমান বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে উপহার হিসেবে প্রদান করবেন।
সফরের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর রামনাথ কোবিন্দ ঢাকার রমনাস্থ কালী মন্দিরের সদ্য সংস্কারকৃত অংশের উদ্বোধন করবেন এবং মন্দিরটি পরিদর্শন করবেন। ওইদিন দুপুরে তিনি দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।