বাঁশখালীর রাজাকারপুত্র সাইফুলকে খুঁজছে পুলিশ

51

বাঁশখালীর সাধনপুরের ইউনিয়নে মাদকের প্রকোপ বেড়েছে। প্রতিদিন ইউনিয়নের কোনো না কোনো স্থানে মাদকের আখড়া বসাচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্র। গত ২০ আগস্ট বাণীগ্রাম নতুন পাড়া থেকে চোলাই মদসহ দুইজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের পর এ চক্রের সন্ধান পায় পুলিশ। গ্রেপ্তার দুই মাদক ব্যবসায়ী জানান, পুরো বাণীগ্রামে মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন পশ্চিম বৈলগাঁও এলাকার মো. ইউনুছের পুত্র সাইফুল ইসলাম। সাইফুলের পিতা ইউনুছের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আছে।
বাঁশখালী রামদাস হাট পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মামুন হাছান পূর্বদেশকে বলেন, ‘সাইফুলের বিরুদ্ধে কয়টি মামলা আছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারবো না। তবে যেগুলো আছে সবগুলোই মাদকের মামলা। এখনো সে মাদক বেচাকেনার সাথে যুক্ত। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছি। সে এলাকায় কখন আসে, কখন যায় সে বিষয়ে খোঁজখবর রাখছি। তাকে গ্রেপ্তার করা গেলেই এলাকায় মাদক নির্মূল হবে।’
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সাইফুল ২০১৭ সালে সাধনপুরের পূর্ব বৈলগাঁও এলাকা থেকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল। মূলত এ ঘটনার পর থেকে সাধনপুর ইউনিয়নে মাদক ব্যবসায়ীর হদিস পায় পুলিশ। এ মামলায় কিছুদিন কারাগারে থাকলেও বেরিয়ে এসে আবারো মাদকের কারবারে জড়িয়ে পড়ে সাইফুল। নিয়মিত এলাকায় থেকে উঠতি যুবক ও অশিক্ষিত লোকদের বশে নিয়ে ইয়াবার সা¤্রাজ্য গড়ে তুলেছে। সাধনপুর ইউনিয়ন ছাড়াও উত্তর বাঁশখালীর পাঁচটি ইউনিয়নে সাইফুলের মাদকের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। বিশেষ করে বাঁশখালী উপকূলের দুই ইউনিয়নে ইয়াবা সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সাইফুল। বাবা রাজাকার থাকলেও কোনো অনুশোচনা ছাড়াই ক্ষমতাবানদের সাথে সখ্যতা রেখে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। স্থানীয়রা সাইফুল তার পিতা ইউনুছ ও ভাই জসীমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং থানায় অভিযোগ দিলেও তেমন সুফল মেলেনি। পরবর্তীতে তাদেরকে হুমকি-ধমকির শিকার হতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় দুই ব্যক্তি জানান, সাইফুল মাদক ব্যবসায়ী তা সবাই জানে। তার বাবা ইউনুছ বড় রাজাকার। ভাই জসীমের বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না। কেউ বাধা হলে দাঁড়ালেই নেমে আসে নির্যাতন। রাজাকার পরিবারের সদস্য হলেও তাদের দাপটে স্থানীয় লোকজন অসহায়। সাইফুলকে গ্রেপ্তার করা গেলে পুরো এলাকার মাদক সা¤্রাজ্যের পতন হবে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড থেকে বের হওয়া কয়েকটি বইয়েও রাজাকার ইউনুছের বিষয়ে তথ্য আছে।
চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক পূর্বদেশকে বলেন, ‘ইউনুছ কুখ্যাত রাজাকার। বাণীগ্রামে ’৭১ সালের ১৭ মে যে ২১ জনকে হত্যার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল ইউনুছ রাজাকার। এখনো সে বেঁচে আছে শুনলে কষ্ট পাই। এখনো অনেকের সাথে নাকি তার সখ্যতা আছে। অথচ এই ইউনুছ ও সিরাজ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বাণীগ্রামে সাধারণ মানুষকে যুদ্ধকালীন সময়ে নির্যাতন করা হয়েছিল।’