বাঁচাতে হবে মানুষ বাঁচাতে হবে প্রতিষ্ঠান

51

ভাষ্যকার

শহরতলীর অদূরে সীতাকুন্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কদমরসুল এলাকায় সাবেক কাশেম জুট মিলের চব্বিশ একর জায়গার উপর গড়ে তোলা হয়েছিল বেসরকারি ইনল্যান্ড কন্টেনার টার্মিনাল বিএম কন্টেইনার ডিপো। নেদারল্যান্ড ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই কন্টেইনার ডিপোতে গত শনিবার সংঘটিত হয় ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনা। ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বর্ণদ্বার চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে বিকাশমান বেসরকারি কন্টেইনার ইয়ার্ড খাতে বিএম কন্টেইনার ডিপো অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। গত এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে বেসরকারি খাতে সুনামের প্রসারও ঘটাতে সক্ষম হয় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত এ কন্টেইনার ডিপোটি।
গত শনিবার রাতে কন্টেইনার ডিপোতে প্রথমে অনাকাক্সিক্ষত অগ্নিকান্ড তারপর থেকে থেমে থেমে একের পর এক বিস্ফোরণে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় কর্মচঞ্চল ওই এলাকায় নেমে এসেছে শোকবিহŸল ভূতুড়ে পরিবেশ। অগ্নিদুর্ঘটনায় ধ্বংসস্ত‚পের মধ্যে ফায়ার ফাইটার ও সেনাবাহিনীসহ উদ্ধারকর্মীদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নিহতদের মরদেহের সৎকার ও আহতদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের কেউবা দুর্ঘটনাস্থলে আবার কেউ হাসপাতালে ছুটে এসেছেন। নিজের তাগিদে তারা উদ্ধার কাজে বা আহতদের চিকিৎসায় রক্তদানে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। হাসপাতালের বাইরে অনেকে অপেক্ষা করছেন- কখন কার ডাক আসে। এমন মানবিক সহযোগিতার প্রসারিত হাতের বিপরীতে দোষারোপের কদর্য চেহারাও পরিলক্ষিত হচ্ছে কোথাও কোথাও। তবে ভয়াবহ এ অগ্নিদুর্ঘটনার পর হতাহতদের উদ্ধার করে জীবন বাঁচানোই এই মুহূর্তে সকলের প্রধানতম করণীয়। পাশাপাশি নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করে মরদেহ হস্তান্তর এবং হতাহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের পদক্ষেপও ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে দুর্ঘটনা তদন্তে পৃথক চারটি কমিটিও করা হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন কার্যদিবসে এসব কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদনও দাখিল করতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বিকাশমান বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনাল খাতে এর আগে এত বড় দুর্ঘটনা আর কখনও ঘটে নি। তবে, চীন ও ভারতসহ বিশ্বের দেশে দেশে সংঘটিত এরকম বা এর চেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর ইতোমধ্যে গণমাধ্যমের বদৌলতে অনেকের নজরে এসেছে। তারা কীভাবে এসব ঘটনা মোকাবেলা করে থাকে- সেই অভিজ্ঞতাকে দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে কাজে লাগানো যেতে পারে। জীবন বাঁচানোকে অগ্রাধিকারে রেখে প্রতিষ্ঠান বাঁচানোর ব্যাপারেও আমাদের সচেতনতা জরুরি। যে কোনও দুর্যোগ-দুর্বিপাকের মত দুর্ঘটনা মোকাবেলায়ও প্রয়োজনীয় সক্ষমতা প্রদর্শনে সজাগ থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, সীতাকুন্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কদমরসুল এলাকায় নেদারল্যান্ড ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি ইনল্যান্ড কন্টেইনার টার্মিনাল বিএম কন্টেইনার ডিপোর অভ্যন্তরে লোডিং শেডে গত শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে আগুন লাগে। এরপর রাত ১১টা থেকে সেখানে রাসায়নিকের কন্টেইনারে একের পর এক বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। অগ্নিকান্ড ও বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, দগ্ধ ও আহত দুই শতাধিক ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।