বলী খেলা সরিয়ে মেলা করা যেতো

56

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ও শিল্প সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে জব্বারের বলী খেলা। সর্বশেষ ২০১৯ সালে বলী খেলার ১১০তম আসর অনুষ্ঠিত হয়। মাঝখানে দুটি বছর ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা ও মেলা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় চলতি বছর মেলাকে ঘিরে চট্টগ্রামবাসীর আগ্রহ ছিল। বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে ক্রেতা-বিক্রেতারাও সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু মেলা কমিটি জানিয়েছে, লালদিঘি মাঠের স্মৃতি রক্ষায় সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পটি উদ্বোধন না হওয়ায় এবারো সেখানে জব্বারের বলী খেলা ও মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
সংস্কৃতিকর্মীরা বলছেন, জব্বারের বলী খেলা ও মেলা না করার মধ্যদিয়ে চট্টগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে চেপে রাখা হচ্ছে। সবকিছুতে যেভাবে বন্ধ রাখা হচ্ছে তারই ধারাবাহিকতায় বলী খেলাও বন্ধ রাখা হয়েছে।

উন্নয়ন কী সংস্কৃতিকে নষ্ট করে দিবে : আহমেদ ইকবাল হায়দার
উন্নয়ন কী সংস্কৃতিকে নষ্ট করে দিবে? এমন প্রশ্ন রেখেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যব্যক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দার। তিনি বলেছেন, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেখছি সবকিছু টোটালি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ৪টার স্থলে ২টায় চলে আসছে। অথচ এর আগেও রোজায় পহেলা বৈশাখ হয়েছে। আসরের নামাজ শুরু হওয়ার আগেই শেষ করেছি। এখন ২টার মধ্যে শেষ করার নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। তার মানে অনুষ্ঠান করতে না দেয়া। মঙ্গল শোভাযাত্রা জনগণের কল্যাণে হবে না। একটা ঘেরার মধ্যে পড়ে গেছে এই শোভাযাত্রা। কেন এমনটা হচ্ছে জানি না। বলা হচ্ছে, জঙ্গি। জঙ্গি আক্রমণতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগে থেকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে। পহেলা বৈশাখ আসলেই কেন এমন হয়। জব্বারের বলী খেলা ঐতিহ্যবাহী শত বছরের পুরানো। এ খেলা সংক্ষিপ্ত আকারে করা যেতো। লালদিঘি পাড়ে না হোক বিকল্প কোনো জায়গায় করা যেতো। সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে জানি না।
শুধু চট্টগ্রাম নয়, বাংলাদেশেই সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে হবে। এটি রক্ষায় মনযোগ দিতে হবে। এখন যেগুলো হচ্ছে সবকিছু সংস্কৃতির অভাবেই হচ্ছে। শিক্ষার অভাব, ভাবনার অভাব। লালনকে নিয়ে পড়াশোনা হচ্ছে। আমরা কি করেছি, সংস্কৃতির শিকড়টা অনেক গভীরে ছিল। পৃথিবীতে যেসব দেশ উন্নত হয়েছে সবার সংস্কৃতি শক্তিশালী। আমাদের সংস্কৃতিও শক্তিশালী। কিন্তু ধরে রাখতে পারছি না। আমরা শিল্পীরা অনুদানের জন্য বসে থাকছি। আমাদেরকে সুযোগটা করে দিলেই অনুদান লাগবে না। উন্নয়ন কি আমাদের সংস্কৃতিকে নষ্ট করে দিবে? অবশ্যই একটা বিকল্প জায়গায় বলী খেলা হতে পারতো। সিআরবিতে হতে পারতো বলী খেলা।

বলী খেলা বন্ধ করে সংস্কৃতিকে বন্ধ করা হলো : সাইফুল আলম বাবু
চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাট্য ব্যক্তিত্ব সাইফুল আলম বাবু বলেন, ‘চট্টগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে জব্বারের বলী খেলা। কিন্তু পার্ক নির্মাণের কারণে বলী খেলা না হওয়াটা দুঃখজনক। অথচ বলী খেলাটা অন্য জায়গায় করে মেলাটা সেখানে করা যেতো। এটি শুধু জব্বারের বলী খেলা নয়, সেখানে বসে বৃহত্তম লোকজ মেলা। যে মেলার সাথে সারাদেশের মানুষের পরিচিতি আছে। মেলাকে কেন্দ্র করে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ পণ্য বিক্রি করতে আসে। আর সারাবছরের গৃহস্থালী পণ্যগুলো এই মেলা থেকেই কিনে নেয় লোকজন। প্রয়োজনে তিনদিনের জায়গায় দু’দিন হোক মেলা। তবুও প্রাণের এই খেলা ও মেলা না হওয়াটা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। এমনিতেই সবকিছু সংকুচিত করা হচ্ছে। জঙ্গিদের ভয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে সীমাবদ্ধতা আনা হয়েছে। এখন মৌলবাদী গোষ্ঠীর হুমকিতে যদি সংস্কৃতির দুয়ার বন্ধ করা হয় তাহলে আমরা তাদেরকে ভয় পেয়ে গেলাম। তাদেরকে মোকাবেলা করেই প্রতিরোধ করতে হবে। এখন বলী খেলা বন্ধ করা মানে সংস্কৃতিকে বন্ধ করা।

মাঠটি প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরেই মেলা হবে : জহরলাল হাজারী
আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও মেলা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, ‘মাটি ও মানুষের খেলা এই জব্বারের বলী খেলা। করোনার কারণে দুই বছর এই খেলা হয়নি। এ বছর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ বছরও আমরা আয়োজন করতে পারছি না। বহু ইতিহাসের সাক্ষী লালদিঘি মাঠেই বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালে লালদিঘি ময়দানকে ঘিরে ঐতিহাসিক ছয় দফার স্মৃতি সংরক্ষণে মাঠ সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। তাই মাঠটি উন্মুক্ত করা হয়নি। যদি এটি আগামী বছর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় তাহলে আমরা মেলার আয়োজন করবো।’