বরকতময় মাস মাহে রমজান

4

আবু নাছের মুহাম্মদ তৈয়ব আলী

মাহে রমজান ইবাদত বন্দেগীতে অগ্রণী হওয়ার মাস। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এ পবিত্র মাসে ইবাদত বন্দেগী করার জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। এ মাসের ইবাদত বন্দেগী করার জন্য সকলকে উৎসাহ দিতেন। সাহাবায়ে কেরাম রমজান মাস আসার অনেক পূর্ব হতে মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে, ‘প্রিয় নবী শা’বানের ২৯ তারিখে এক ভাষণ দান করেন। তিনি ইরশাদ করেন, হে লোক সকল! একটি বরকতময় মাস তোমাদের সম্মুখে উপস্থিত। এ মাসে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত রয়েছে, যে রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ পাক এ মাসের রোযা ফরজ করেছেন। এ মাসের রাতে ইবাদত বন্দেগী করা অনেক বেশি সওয়াবের। এ মাসে কোনও লোক যদি নফল ইবাদত করে তবে তার সওয়াব বা শুভ পরিণাম হবে অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য। আর এ মাসের একটি ফরযের সওয়াব অন্যান্য মাসের সত্তরটি ফরযের সমতুল্য।’ এ মাস সবর বা ধৈর্যের, আর ধৈর্যের প্রতিদান হলো বেহেশত। এ মাস পরস্পরের মধ্যে সদ্ব্যবহার করার ও সকলের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের। এ মাসে মুমিনের রিযিক বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে তার গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে এবং তাকে দোযখ থেকে নাজাত দেয়া হবে। এতে ইফতারকারী রোজাদারের সওয়াবে কোন কমতি হয় না। উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন! ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম! সকলে রোযাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য রাখেনা, প্রিয় নবী ইরশাদ করলেন শুধু একটি খেজুর বা একটু দুধ বা পানি দ্বারা ইফতার করানোই যথেষ্ট হবে। এ মাহে রমজানের প্রথম দশদিন রহমতের, দ্বিতীয় দশ দিন মাগফিরাতের, আর তৃতীয় দশদিন দোযখ থেকে মুক্তি লাভের। যে ব্যক্তি তার অধীনস্থ লোকদের প্রতি সদয় ব্যবহার করে তার গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
এ হাদিসের অনুসরণে বিত্তশালী মুসলমানদের উচিৎ সাধ্য পরিমাণ দান-খায়রাত, অভাবী মুসলমান ভাইদের রোযা পালনে সহায়তা স্বরূপ চাল-ডাল সহ ইফতার সামগ্রী দান করা। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে অনেক গরীব অভাবী লোক যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে মাহে রমজানে একটু ভাল খাবার যোগাড় তাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। তাই সামর্থবানদের উচিত অসচ্ছল আত্মীয়স্বজনদের মাঝে উপহার প্রদান ও গরিব-অভাবীদের সহয়তায় এগিয়ে আসা। এতে পরস্পরের যে ভ্রাতৃত্ববন্ধন সৃষ্টি হয় এটা মূলত মাহে রমযানের সিয়াম সাধনার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। হযরত মুফতি আহমদ এয়ার খান (রহ.) তফসিরে নঈমী শরীফে বর্ণনা করেন এ মাসের সর্বমোট চারটি নাম: ১. মাহে রমজান ২. মাহে সবর, ৩. মাহে মুওয়াসাত সহমর্মিতা জ্ঞাপন ও উপকার সাধনের মাস ৪. মাহে ওয়াসাআতে রিজিক, জীবিকা প্রশস্ত হবার মাস। মুওয়াসাত মানে উপকার করা যেহেতু এমাসে সমস্ত মুসলমানের সাথে বিশেষ করে পরিবার-পরিজন ও নিকটাত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যব্যবহার করা বেশি সওয়াবের কাজ তাই এ মাসকে মাহে মুওয়াসাত বলা হয়। এতে জীবিকা প্রশস্ত হয়। ফলে গরীবরাও নেয়ামত ভোগ করে। এজন্য এর নাম রিজিক প্রশস্ত হবার মাসও। আল্লাহ আমাদের যে ধন-সম্পদ দিয়েছেন সেখান থেকে অভাবি গরীব দুঃখিদের প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা করা, প্রতিবেশীর প্রতি দয়াবান হওয়া অতি সওয়াবের কাজ। হাদীস শরীফে রয়েছে, দয়াপ্রদর্শন কারীর উপর আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা জমিনে বসবাস কারীদের উপর দয়া করো, তা হলে আসমান ওয়ালা তোমাদের উপর দয়া করবে। (আবু দাউদ)। অতএব পাড়াপ্রতিবেশি নিকটাত্মীয় যারা অভাবগ্রস্থ তাদের জন্য সদাসর্বদা সাহায্যের দ্বার উম্মুক্ত করা বড় পুণ্যময় কাজ। এতে দয়াময় আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নিশ্চয় কিয়ামত দিবসে আল্লাহ বলবেন, একে অপরের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন কারীরা কোথায়, আমার সম্মানের শপথ, আজ যখন আমার রহমত-দয়া ছাড়া কোন ছায়া নাই, তাদেরকে আমি আমার রহমতের ছায়ার নিচে আশ্রয় দেব। আল্লাহ আমাদের সকলকে মাহে রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে অতিবাহিত করার তৌফিক দিন। আমিন।