প্রিয় অভিভাবকের চিরবিদায়

38

স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ ও দেশবাসীর অকৃত্রিম বন্ধু; বাঙালির হৃদয় গভীরে প্রোথিত অত্যন্ত প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব শ্রী প্রণব মুখার্জী। বিশ্বজুড়ে করোনা অতিমারির এই দুঃসময়ে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি সম্পর্কে গণমাধ্যম প্রাপ্ত সংবাদে বাংলাদেশের আপামর জনগোষ্ঠী যারপরনাই ভারাক্রান্ত ছিল। তাঁর মহাপ্রয়াণ অপরিমেয় শোক ও অসীম ক্রন্দনের করুণ অনুরণন তৈরি করেছে। নিবন্ধের সূচনায় তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ এবং মহান স্রষ্টার কাছে কায়োমনোবাক্যে তাঁর আত্মার সদ্গতি প্রার্থনা করছি। প্রাসঙ্গিকতায় বিশ্বকবি রবীঠাকুরের ‘যেতে নাহি দিব’ কবিতার কয়েকটি পংক্তি উচ্চারণ করতে চাই – ‘ধ্বনিতেছে চিরকাল অনাদ্যন্ত রবে, ‘যেতে নাহি দিব। যেতে নাহি দিব।’ সবে কহে, ‘যেতে নাহি দিব।’ তৃণ ক্ষুদ্র অতি তারেও বাঁধিয়া বক্ষে মাতা বসুমতী কহিছেন প্রাণপনে, ‘যেতে নাহি দিব।’ আয়ুক্ষীণ দীপমুখে শিখা নিব-নিব্লআঁধারের গ্রাস হতে কে টানিছে তারে, কহিতেছে শতবার ‘যেতে দিব না রে’।’
বিগত কয়েক মাসে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বিস্তার ও প্রাণ সংহারে আমরা বিশ্ব এবং দেশ বরেণ্য অনেক মহান ব্যক্তিকে হারিয়েছি। সাম্প্রতিক প্রণব মুখার্জী মহোদয়ের রোগাক্রান্ত এবং গতকাল না ফেরার দেশে তাঁর অন্তিমযাত্রার বিষয়টি বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষের সকল নাগরিকের কাছে কঠিন এক দুঃসংবাদ বলে আমার বিশ্বাস। বাংলাদেশ ও ভারতের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক, সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বের সুদৃঢ় বন্ধনে প্রণব মুখার্জী মহোদয়ের অবদান অবিস্মরণীয়। এখনো এই দুই দেশের মধ্যে নানাবিধ সংকট, বিরাজমান সমস্যা সমাধানে এবং সম্পর্কের অটুট বন্ধনকে অধিকতর শক্তিময় করার জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভিভাবক হিসেবে তাঁর ভূমিকা ছিল অপরিহার্য। মুক্তির মহানায়ক ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রণব মুখার্জী মহোদয়ের অনুপ্রেরণা, সহমর্মিতা এবং সার্বিক সহযোগিতা বাঙালি জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠা, প্রায় এক কোটি শরণার্থীর আশ্রয়, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিংসহ সর্বোপরি মুক্ত-স্বাধীন দেশ অর্জন পর্যন্ত ভারতের তৎকালিন ক্ষমতাশীল দল ‘কংগ্রেস’, সরকার প্রধান পরম শ্রদ্ধেয় প্রয়াত শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী এবং ভারতের সকল সম্মানিত জনগণের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের শ্রদ্ধা ও নিরন্তর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কোন চৌহদ্দি নেই। এসব কর্মযজ্ঞের পিছনে প্রণব মুখার্জী মহোদয়ের দৃঢ়চেতা সমর্থন আমাদের চিরঋণী করে রেখেছে। ২০১৮ সালে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিনি বাংলাদেশ সফরে আগ্রহ প্রকাশ করলে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ মর্যাদার ব্যক্তিত্ব হিসেবে সকল প্রকার নিরাপত্তা এবং আনুষঙ্গিক বিষয়সমূহ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সফরকালে তিনি চট্টগ্রামে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের গ্রাম পরিদর্শনের ইচ্ছা-পোষণ করেন। এই সুবাদে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের পরামর্শ ও সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে প্রাশন্ত্যস্বাগত জানানোর সামগ্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তাঁর আগমনকে বিশ্ববিদ্যালয়েরগৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে সূচিত করার লক্ষ্যে বিশেষ সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়।
সাধারণত সমাবর্তন বা বিশেষ সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের মাননীয় আচার্য মান্যবর রাষ্ট্রপতি মহোদয়। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তাঁর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি গ্রহণ অনেকটা দুরূহ ব্যাপার ছিল বলে আমাকে বিশেষ সমাবর্তনে তাঁর পক্ষ থেকে প্রণব মুখার্জী মহোদয়কে সম্মানীয় ডি. লিট ডিগ্রি প্রদানের সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেন। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বাাংলাদেশ সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, সামরিক-বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণ এই বিশেষ সমাবর্তন ছিল চট্টগ্রাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাধ প্রীণন। ২০১৫ সালে ১৫ জুন উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই স্বল্প সময়ের মধ্যেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে সম্ভবত চট্টগ্রামের সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনে বঙ্গবন্ধু চত্বর প্রতিষ্ঠা করি। অত্যন্ত নান্দনিক পরিবেশে এটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোর নির্বিশেষে বিপুল সংখ্যক জনগণ প্রতিনিয়ত এটি পরিদর্শনে আসেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রী প্রণব মুখার্জীর কর্মসূচির প্রথমেই ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। এই বঙ্গবন্ধু চত্বর ঘিরে অপূর্ব পরিবেশ দেখে তিনি অভিভূত ও আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তাঁর কন্যাসহ তাঁকে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরিয়ে দেখানো; বিশেষ করে দীর্ঘ সময় পরে বিশ্বব্দ্যিালয়ের ক্যাম্পাসে প্রথম মাস্টারদা সূর্যসেনের আবক্ষমূর্তি স্থাপন এবং ১৯৭৫ সালের১৫ আগস্ট বঙ্গমাতাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের শাহাদাত বরণকারী শহীদ সদস্যদের স্মৃতি রক্ষার্থে বিভিন্ন স্থাপনা প্রতিষ্ঠার জন্য ভূয়সী প্রসংশা করে সন্তানতুল্য আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে অপরিমেয় আশীর্বাদে পরিপুষ্ট করেন। বিশেষ সমাবর্তন আনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে তিনি সম্মানিত সুধীমন্ডলীর উপস্থিতি এবং তৌর্যত্রিক বর্ণাঢ্য আয়োজনেএতবেশি বিমুগ্ধ হয়েছিলেন যে; বারবার তিনি আমাকে মোহনীয় আদরের সাথে তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করছিলেন।
উল্লেখ্য যে, এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তৎকালীন মাননীয় ভারতীয় হাইকমিশনার; বর্তমানে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্রী হর্ষবর্ধন শ্রিংলাসহ ঢাকা ও চট্টগ্রাম হাইকমিশনের সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এই সমাবর্তন অনুষ্ঠান এবং তাঁকে সম্মানীয় ডি. লিট ডিগ্রিপ্রাবরণ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বিপুলভাবে প্রচারিত হয়। তাঁর ভাষণের নির্যাস তথা উপমহাদেশসহ বিশ্বপরিমন্ডলের সমসাময়িক আর্ত-সামাজিক, রাজনৈতিক পরাবর্ত বিষয়সমূহের প্রতি সকলের গভীর মনোযোগ নিবিষ্ট হয়।ভারতবর্ষের অন্যতম প্রাচীন ও জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায় পরদিন বিদেশ পৃষ্ঠায় সংযুক্ত ছবিসহ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ডি.লিট দিল প্রণববাবুকে’ এবং ছবির ক্যাপশন ছিল ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সমাবর্তনে উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর হাত থেকে ডি.লিট সম্মান গ্রহণ করছেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।’
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ছিল- ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ডি.লিট দেওয়া হল ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে। ডিগ্রি পেয়ে প্রণববাবু বললেন, ‘আমার মতো এক জন সাধারণ মানুষকে ডি. লিট দিয়ে সম্মানিত করলেন আপনারা। আমি কৃতজ্ঞ, অভিভূত।’ এই দিন সকালে চট্টগ্রাম পৌঁছোন প্রণববাবু। বিমানবন্দর থেকে রাস্তার দু’পাশে তাঁকে দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। প্রণবের সফর উপলক্ষে চট্টগ্রামের প্রধান দৈনিক সংবাদপত্রটি বিশেষ ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করে। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বিশেষ বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীকে হারিয়েছিলাম। ঠিক একই ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার তিন বছরের মাথায় ঘাতকের নৃশংস আক্রমণে বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন। এ ভাবে প্রায় জন্মলগ্নের মুহূর্ত থেকেই একটি জাতিকে কেন নেতৃত্বশূন্য করে দেওয়া হচ্ছে, তা আমাদের জানা দরকার।’ নিরন্তর গবেষণার মধ্যে দিয়েই এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে, আশা প্রণববাবুর। তিনি বলেন, ‘রাস্তা যদি চিনে নিতে পারি, তা হলে চলার পথ সহজ হয়ে যাবে।” ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির সম্মানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। খাদ্য তালিকায় ছিল চট্টগ্রামের বিশেষ ২৯টি পদ।’
প্রণব মুখার্জী মহোদয়ের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক জীবনের কিছুটা পরিচয় উত্থাপিত না হলে স্বল্প পরিসরের এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ভারতীয় হাইকমিশন প্রদত্ত তথ্যসূত্রে জানা যায়, ভারতের ১৩তম মহামান্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি ২০১২ সালের ২৫ জুলাই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে ভারতের পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সাল থেকে পরপর পাঁচ বার ভারতের রাজ্য সভার সদস্য এবং ২০০৪ সাল থেকে দুই বার লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি প্রায় তেইশ বছর সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ভারতের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত তথা প্রশাসনিক সংস্কার, তথ্য অধিকার, শ্রম অধিকার, খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, তথ্য-প্রযুক্তি ও টেলিকমিউনিকেশন, মেট্রোরেলসহ মন্ত্রী পরিষদের প্রায় ৯৫টি কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
একজন খ্যাতিমান বক্তা-পন্ডিত-প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক তীক্ষ্নবুদ্ধি সম্পন্ন শ্রদ্ধেয় মুখার্জী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আর্থিক বিষয়াদি এবং সংসদীয় প্রক্রিয়ায় তাঁর অবদানের জন্য ছিলেন বিশ্ব নন্দিত সমাদৃত। পশ্চিম বাংলার বীরভূম জেলার মিরাতী গ্রামের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মহান মুক্তিযোদ্ধা পিতা শ্রী কমদাকিংকর মুখার্জী এবং মাতা রাজলক্ষীর ঘরে তিনি জন্ম নিয়েছিলেন ১৯৩৫ সালের ১১ ডিসেম্বর। তাঁর পিতাও একজন খ্যাতিমান কংগ্রেস নেতা ছিলেন এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভূমিকা পালনের জন্য বহুবার কারাভোগ করেছেন। ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আইন বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রিধারী এই কৃতি রাজনীতিক একজন কলেজ শিক্ষক এবং সাংবাদিক হিসেবে তাঁর পেশা জীবন শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে প্রিয় জনকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজ্য সভায় সদস্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবনকে সমৃদ্ধ করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর প্রগাঢ় আস্থা-বিশ্বাস অর্জন এবং রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট এই কিংবদন্তী নেতা ভারতের বহু মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। তিনি ভারতের অর্থনীতি ও জাতি গঠনে বিপুল সংখ্যক পুস্তকেরও প্রণেতা। ২০০৮ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক পদক ‘পদ্মভূষণ’, ১৯৯৭ সালে ‘শ্রেষ্ঠ সাংসদ’ পদক এবং ২০১১ সালে ‘শ্রেষ্ঠ প্রশাসক’ পদক লাভ করেন।তিনি বিশ্বের এবং ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমধিক সংখ্যক সম্মানীয় ডক্টরেট এবং ডি.লিটডিগ্রি অর্জন করেন।
ভারতের প্রাক্তন মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের অপরোক্ষ অভিভাবক শ্রী প্রণব মুখার্জীর মতে- ‘On 30 March, Indira Gandhi moved a resolution in both Houses of Parliament on the happenings in East Pakistan, and outlined the approach of the Government of India:
“This house expresses its profound sympathy for and solidarity with the people of East Bengal in their struggle for a democratic way of life. Bearing in mind the permanent interests which India has in peace, committed as we are to uphold and defend human rights, this House demands immediate cessation of the use of force and the massacre of defenseless people… This House records its profound conviction that the historic upsurge of the 75 million people of East Bengal will triumph. The House wishes to assure them that their struggle and sacrifices will receive the wholehearted sympathy and support of the people of India”
শ্রী প্রণব মুখার্জী রচিত ২০১৫ সালে প্রকাশিত ‘The Dramatic Decade – the Indira Gandhi Years’ গ্রন্থে আরো লিখেছেন, “On 3 December 1971, at twilight, Pakistan launched pre-emptive air strikes against India. “Border battles between India and Pakistan have erupted into full-scale war. Jets from West Pakistan have attacked at least four Indian airports, with reports [stating that] eight airfields have been struck … Initial reports of the Pakistani air attacks were unclear but both capitals confirmed the Indian airports of Amritsar, Pathankot, Avantipur and Srinagar were hit … The Indian Government has declared a state of emergency.”
সৎ ও সত্যবাদী নেতা হিসেবে ২০১৭ সালে প্রকাশিত তাঁর আরেকটি বিখ্যাত ‘The Coalition Years 1996 – 2012’ গ্রন্থে তিনি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সুদৃঢ় অবস্থানকে সুস্পষ্ট করেছেন। বিশেষ করে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে মুম্বাইয়ের বোমা বিস্ফোরণ, ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাই জঙ্গি আক্রমণ ইত্যাদির জন্য তিনি পাকিস্তানকে দায়ী করেন। এই উপমহাদেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ লালন-পালন, আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং সহিংস ঘৃণ্য অপকৌশল ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করে মানব জীবন-সম্পদ ধ্বংসের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর ছিলেন। সে সময় পাকিস্তানের দাবি ছিল; এসব কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হচ্ছিল রাষ্ট্রহীন নায়কদের (Non-state actor) মাধ্যমে। এই দাবির প্রেক্ষিতে শ্রী মুখার্জী বলেছিলেন, রাষ্ট্রহীন জঙ্গি নায়কেরা স্বর্গ থেকে আসেনা। তারা বিশেষ দেশের নির্দিষ্ট ভূখন্ড থেকেই আবির্ভূত হয়। উনি আরো বলেছেন, করাচি বন্দর থেকেই এসব সন্ত্রাসীদের আগমন।
উল্লেখিত গ্রন্থে তিনি লিখেন, ‘After the incident, the first call (of the many I received) was from the US Secretary of State, Condoleezza Rice. She was concerned about the fallout. I told her, “The situation is grave. I do not believe in romanticizing relations or indulging in any sort of adventurism, but there is a limit to one’s patience. We are truly concerned.” I also insisted that the US exert pressure on Pakistan to stop cross-border terrorism. I took strong exception to the sale of sophisticated arms and equipment to Pakistan by the US. I refused to buy their argument that these weapons were supplied to Pakistan for limiting the threats from terrorist groups like al-Qaeda and Taliban, and pointed out that they were actually being used against India’
নিবন্ধের এই পরিক্রমায় বিষয়সমূহের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরতে পারছি না বলে দুঃখিত। শ্রী প্রণব মুখার্জীর জীবন-আদর্শ-সমাজ-রাজনীতি-সংস্কৃতির চর্চা ও পরিচর্যায় এক জন উঁচুমার্গের বরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদি অন্যতম বিশ্বশীর্ষ এই রাজনীতিকের জীবন-বৃত্তান্ত এতবেশি প্রশস্ত যে; তার বর্ণনা-বিশ্লেষণ কয়েকটি গ্রন্থেও সংকুলান হওয়ার নয়। নিবন্ধের শেষে এই মহান অভিভাবকের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।