প্যাঁচা দিবান্ধ, মানুষ দিব্যান্ধ!

17

 

কোথায়,কখন কি বলব; কা’কে কতটুকু মান্যতা দিব,
বড়দের সম্মান, ছোটদের স্নেহ প্রাজ্ঞজনদের যথোপযুক্ত শ্রদ্ধা ও মান্য করা এবং তদনুগ চলনে প্রবৃত্ত হওয়াই তো স্থিতিশীল শুদ্ধ সমাজ বিনির্মাণের সহায়ক। পথ চলতে সতর্ক থাকা নিজের সুখ,আনন্দ, উল্লাস যেন অন্যের দুর্ভোগ বা কষ্টের কারণ না হয়; উপকারে না থাকি অপকারে যেন প্রবৃত্ত না হই,সৎ চিন্তায় নিমগ্ন থেকে চেতনার চৈতন্য ঘটানো, বর্তমানকে উপভোগ করতে গিয়ে অতীতকে ভুলছি কিনা,অতীত ভুলে ভবিষ্যতের সর্বনাশ করছি কিনা, ধর্ম বিজ্ঞানে এত টানাটানি, তুলনা, উপমা; কারো ক্ষমতা বা সক্ষমতা পরিমাপে অযথা সময় ব্যয় না করে,কে কি করছে তা চিন্তায় না এনে, আমি কি করছি তা ভাবা সমীচীন। কারো ভুলের বিবেচনা না করে,নিজের ভুলের পরিমাপে নিয়োজিত থাকা অধিকতর শ্রেয়। পিতা, মাতা, আত্মীয়, বন্ধু, অনাত্মীয় সজ্জনদের ভালো রাখায় কি করছি,কি করণীয় তা ভাবনায় আনা, জন্মের সার্থকতা কীসে তা ভেবে এবং তদনুগ কার্য্যে নিজেকে প্রবৃত্ত রাখায় তো মানবজীবনের অন্যতম সিদ্ধি। নিজেকে সৎকর্মে পর্যবসিত করে,সমাজে একটা দাগ রেখে যাওয়া, তাতে সম্পৃক্ত রেখে পথ চলায় তো সার্থকতা। ধর্মে থেকে অধর্ম করা,বাহিরে এক ভেতরে অন্য,স্থান নিয়েছি দেশনায়, চলেছি বিব্রত-বিভ্রান্তি প্রতারণা আর বিধ্বস্তির দিকে। গায়ে জড়িয়েছি শুদ্ধতার নামাবলী, ঠগ বাটপারে পথ চলছি।চালাকি আর চতুরতার মারপ্যাঁচে অজানদের দুর্গতি আর দুর্ভোগে রেখে বাহাদুরি দেখাচ্ছি। অর্থ,যশ,মান এর অদম্য স্পৃহায় টেনে নামাচ্ছি বা টেনে ধরছি চমৎকার, অপূর্ব, অসাধারণের সস্তা জনপ্রিয়তায় গা ভাসাচ্ছি। মনুষ্যত্ব, মহত্ব,মানবিকতা ঐ সকল আবর্জনায় ঢেকে দিচ্ছি। বাহবা হাততালির উন্মাদনায়, তুলে দিয়ে সিঁড়ি সরিয়ে নিচ্ছি। অনিত্য বস্তুর রঙিন ঝলকানিতে নিত্য ভুলে আছি। মাতোয়ারা প্রাপ্তিতে, নেই সেবা আর ত্যাগের অত্যুজ্জ্বল আবেশে। খুঁদ ধরা,সমালোচনা(যা বিনষ্টি বা বিধ্বংসি)নিত্যকর্ম।এগিয়ে নিতে, এগিয়ে দিতে মন চাই না।সময় শেষে বিশাল শূন্যতার অতল গহŸরে হাবুডুবু খেয়ে নিকষ কালো অন্ধকারে খুঁজে ফিরি এতটুকু আলো।সময় যে নেই…..সাধনা যেখানে ডিগ্রি, সিদ্ধি সেখানে চাকরি। এই বৃত্ত থেকে কি আমরা বেড়িয়ে আসতে পারব না।আমরা কি সনদপত্রধারী শিক্ষিত হব, নাকি মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টির জন্য, মানব অস্তিত্ব রক্ষায় নিজেদের গড়ে তুলব।যে হারে দেশে শিক্ষিতের হার বাড়ছে, তার বিপরীতে ক্রমাগত বাড়ছে মানবতার অপমান আর লাঞ্ছনা।আমার মনে হয় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কোথাও গÐগোল রয়ে গেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সামগ্রিক অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে আমাদের কাজ করা উচিত। তথাকথিত তাত্তি¡ক ধারণা নিয়ে কাজ করলে বিপর্যয় নেমে আসবে। যা নিরোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। নিজ নিজ কৃষ্টি সংস্কৃতি এবং এই ভূখÐের পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আঞ্চলিকতা থেকে আন্তর্জাতিকতায় যেন আমরা পৌঁছুতে পারি তা মাথায় রেখে এগিয়ে যাওয়া হোক লক্ষ্য। একটা কথা মনে রাখা দরকার – শিরে সর্পাঘাত করলে তাগা বাঁধব কোথায়?
মুখে যতই বলি অসা¤প্রদায়িক, প্রগতিশীল, লক্ষ্য করলে দৃষ্ট হয় তা শুধু বলার জন্য বলা।এখনো সে (সা¤প্রদায়িক, প্রতিক্রিয়াশীল) বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি।শত বিপত্তি, সংকট,দুর্যোগ আমাদের চরিত্রের এতটুকু পরিবর্তন আনতে পারেনি। এত বড় বড় সনদ বা ডিগ্রি নিয়েও আমাদের মানসিক দৈন্যতা ঘোচাতে পারিনি। চিন্তা চেতনায় এখনো আমরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন। আধুনিকতা,সভ্যতা, সুশিক্ষা এসকল শুধুমাত্র বইয়ের পাতায়। আমাদের আচরণিক পরিবর্তনে, চরিত্রের শুদ্ধতা আনয়নে এসবের কোনো সংযুতি নেই। বড় বড় সনদ আর ডিগ্রি নিয়ে বলদের মত মাংস বাড়াচ্ছি, প্রজ্ঞার অমৃতত্তে¡ ভাস্বর হয়ে উঠতে পারছি না। তাই প্রতীয়মান হয় সভ্যতাই সংকট।যতই বলি সভ্যতায় এগুচ্ছি, আধুনিকতায় সমৃদ্ধ হচ্ছি, তথ্য প্রযুক্তিতে বিকশিত হচ্ছি, জীবন মানের উন্নয়ন ঘটাচ্ছি, হয়ত আপাতদৃষ্টিতে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছি, কিন্তু বিশাল এক অসাড়তার দিকে ধাবিত হচ্ছি। উন্নয়ন আর সমৃদ্ধায়নের আড়ালে অস্তিত্বের দেউলিয়াপনায় নিমজ্জিত হচ্ছি। অসংযত আচরণ, অস্থির চলন, অমানবিক কর্ম পুরস্কারে যোগ্য বলে বিবেচিত হওয়া এক অশনি সংকেত। আসুন মানুষ হয়ে মানুষের অবমাননা থেকে বিরত থাকি। মানুষ হিসেবে জন্মের সার্থকতা প্রমাণ করি। মানবিকতায় পথ চলি মনুষ্যত্বের বুনিয়াদ রচনা করি। প্রজন্ম রক্ষা করি। ইতিহাসে অমরতা লাভে সচেষ্ট থাকি।