পুলিশের অস্ত্র মামলা অব্যাহতি পেলেন সেই সমর চৌধুরী

28

অস্ত্র আইনে পুলিশের সাজানো মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বহুল আলোচিত শিক্ষানবীশ আইনজীবী সমর কৃষ্ণ চৌধুরী। এক বছর আগে ‘অস্ত্র ও ইয়াবাসহ’ সমর চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। একই গ্রামের লন্ডন প্রবাসী এক ব্যক্তির প্ররোচনায় পুলিশ সমরকে ফাঁসায় বলে অভিযোগ করেছিল তার পরিবার।
তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অস্ত্র উদ্ধারের সঙ্গে সমরের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। গতকাল বুধবার জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেন পিবিআইয়ের প্রতিবেদন গ্রহণ করে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন। এনিয়ে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা তিনটি মামলায় অব্যাহতি পেলেন সমর চৌধুরী।
জানা যায়, গত বছরের ২৭ মে বোয়ালখালী থানা পুলিশ সমর কৃষ্ণ চৌধুরীকে নগরীর লালদিঘির পাড় এলাকা থেকে আটক করে। এরপর তাকে গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের দক্ষিণ সারোয়াতলী গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। তার গ্রামের বাড়ি থেকে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে দাবি করে পুলিশ বোয়ালখালী থানায় দুটি মামলা দায়ের করে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করে।
গ্রেপ্তারের পর সমরের পরিবার দাবি করে আসছিল-তাদের গ্রামের লন্ডন প্রবাসী সঞ্জয় দাশের সঙ্গে তার প্রতিবেশি স্বপন দাশের জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ আছে। স্বপন দাশকে আইনি পরামর্শ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সঞ্জয় দাশ পুলিশকে ব্যবহার করে সমরকে দুটি মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, শুরুতে মামলাটি বোয়ালখালী থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরবর্তীতে আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পিবিআই’র উপর অর্পণ করে। পিবিআই দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে। প্রতিবেদনে পিবিআই এর কর্মকর্তা তদন্তে অস্ত্র উদ্ধারের সঙ্গে আসামির কোনো সম্পৃক্ততা পাননি মর্মে উল্লেখ করেন। ওই প্রতিবেদনের ওপর গতকাল বুধবার শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত সমর চৌধুরীকে অব্যাহতি দেন।
সমর কৃষ্ণ চৌধুরী বলেন, মিথ্যা মামলা করে পুলিশ আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। আমাকে জেল খাটতে হয়েছে। আমার পরিবারকে কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিক-আইনজীবীসহ সারাদেশের মানুষ আমার পাশে ছিল। পিবিআই তদন্ত করে সত্য উদঘাটন করেছে। দুঃসময়ে যারা আমার পাশে ছিল, আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আর যারা আমাকে বিনাদোষে হয়রানি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনের আশ্রয় নেব। আমি তাদের বিচার চাই।
সূত্র জানায়, গত বছরের ১২ জুলাই সমর জামিনে মুক্তি পান। জামিনে মুক্ত হয়ে সমর গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তাকে ক্রসফায়ারে দিতে চেয়েছিল।
সমরকে গ্রেপ্তারেরর ঘটনা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া ডিআইজি মনিরুজ্জামানকে গত বছরের জুলাই মাসে বদলি করা হয়। এছাড়া সমরকে ফাঁসানোর অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা পুলিশ সুপার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্তে বোয়ালখালী থানার তিন পুলিশ কর্মকর্তা এতে জড়িত থাকার প্রমাণ পায় কমিটি। অভিযুক্তরা হলেন, ওসি হিমাংশু দাশ রানা, এসআই আতিকুর রহমান ও এসআই আরিফুল ইসলাম। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওই বছরের ১৯ জুলাই আরিফুর ও ১১ আগস্ট আতিকুরকে প্রত্যাহার এবং ২৫ আগস্ট হিমাংশুকে বোয়ালখালী থানা থেকে বদলি করা হয়।