পিতা-পুত্রের সম্পর্কের মূল্য ৩৫ লাখ টাকা!

43

রাহুল দাশ নয়ন

বড় ব্যবসায়ী পিতার সন্তান সালাউদ্দিন। এ দাবিটি ছেলের হলেও জীবদ্দশায় তা মানেননি পিতা। যে কারণে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ছেলে। ঘটনাটি আদালতে বিচারাধীন থাকলেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই ছেলেকে স্বীকার করেননি পিতা। সামাজিকভাবে ঘটনাটি মীমাংসার চেষ্টা করলেও পিতার ‘একগুয়েমির’ কারণে সেটিও হয়নি। বছরখানেক আগে পিতার মৃত্যু হয়। আবারও ঘটনাটি মীমাংসায় সামাজিকভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়। এবার পিতা-পুত্রের সম্পর্কের দাম উঠেছে ৩৫ লক্ষ টাকা! এই টাকা দিয়েই পৈত্রিক সম্পত্তিসহ সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে সালাউদ্দিনকে বঞ্চিত করতে চান তার সৎভাইসহ প্রভাবশালীরা।
জানতে চাইলে মো. সালাউদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমার পিতা দেলোয়ার কোম্পানি। আমি পিতার পরিচয় পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। এখনো মামলাটি চলছে। এরমধ্যে বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসা করার জন্য বৈঠকে বসার কথা আছে। ৫-৬ মাস আগে আমার সাথে একবার কথা হয়েছিল। তারা আমাকে ৩৫ লাখ টাকা দিবে বলেছিল। এরপর জাহেদ বিদেশ চলে যায়। কয়েকদিন আগে বিদেশ থেকে সে এসেছে। এখনো কোন কথা বলেনি। সামাজিকভাবে বিষয়টি মীমাংসা করার কথা বললেও আমি এখনো কিছু বলি নাই।’
জানা যায়, বায়েজীদ থানাধীন ৩নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া পশ্চিম শহীদ নগর এলাকার বাসিন্দা সালাউদ্দিন। তার হাতে থাকা স্মার্ট কার্ডে উল্লেখ আছে পিতার নাম মো. দেলোয়ার কোম্পানি ও মাতার নাম মরজিনা বেগম। সে হিসেবেই বিভিন্ন মেয়াদে পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করা শফিকুল ইসলাম ও কফিল উদ্দিন খানের দেয়া জাতীয়তা সনদপত্রেও পিতা হিসেবে দেলোয়ার কোম্পানির নাম আছে। কিন্তু সালাউদ্দিন নিজের ছেলে নয় বলে বেঁচে থাকাবস্থায় অস্বীকার করেছেন দেলোয়ার কোম্পানি। জালিয়াতি করে কাগজপত্র করেছে বলে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতারণার অভিযোগ করেছিলেন দেলোয়ার কোম্পানি। আদালত সেটি নিষ্পত্তি করেছিল। দেলোয়ার কোম্পানির বর্তমান সংসারে ছয় কন্যা ও এক ছেলে আছে। সালাউদ্দিনের বয়সও এখন ৪৩।
স্থানীয়রা জানান, দেলোয়ার কোম্পানি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। শিপের ব্যবসা, ব্রিকফিল্ড ব্যবসার পাশাপাশি কক্সবাজারের হোটেল সী পার্কের মালিকও দেলোয়ার কোম্পানি। সালাউদ্দিন দেলোয়ার কোম্পানির ছেলে এটা অনেকেই জানে। সালাউদ্দিনের মায়ের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক করেছিল দেলোয়ার কোম্পানি। এমনকি ছোটকালে দেলোয়ার কোম্পানির ঘরেই ছিল সালাউদ্দিন। রহমানিয়া স্কুলে ভর্তি করিয়েছিল সালাউদ্দিনকে। পরে দেলোয়ার কোম্পানি ছেলে-মেয়েরা বড় হলে তাকে বের করে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে পিতার পরিচয় পেতে স্থানীয় কাউন্সিলরসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দুয়ারে ঘুরছে সালাউদ্দিন।
৩নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘পিতার পরিচয় পাওয়ার বিষয়টি এখনো ঝুলানো অবস্থায় আছে। দেলোয়ার কোম্পানি মৃত্যুর পর ছোট যে ছেলে (জাহেদ) আছে সে ৩৫ লাখ টাকা দিবে বলেছিল। আগের ছেলেটি সেটি মানেননি। যে কারণে সমঝোতা হয়নি। যদিও দেলোয়ার কোম্পানির ছেলে দাবি করলেও তার মাকে বিয়ে করেছে সেরকম কোন কাবিন নেই। একসময় ডিএনএ টেস্টের কথা বলেছিলাম। দেলোয়ার কোম্পানি থাকতে সেটি করতে পারলে একটি সমাধান হতো। এখন দেলোয়ার কোম্পানি মারা যাওয়ায় সেটা কিভাবে সম্ভব। এরপরেও সে চাইলে ৩৫ লাখ টাকা যেটি দেয়ার কথা সেটি দিবে। আমি বললে তারা আমার কথা শুনবে।’
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস্ ফাউন্ডেশন চট্টগ্রামের সভাপতি অ্যাডভোকেট এএম জিয়া হাবীব আহসান বলেন, ‘বাবা-১, মা-২। এক্ষেত্রে বাবা মারা গেলে ডিএনএ টেস্ট করা যায় কিনা সেটি আগে নিশ্চিত হতে হবে। বিশেষজ্ঞরা এটি ভালো বলতে পারবেন। এরপরেও যদি বাবা-মায়ের বিয়ের কাবিননামা কিংবা সাক্ষী দিয়ে প্রমাণ করতে পারে ওই ব্যক্তির ছেলে সে তাহলে একটি ফলাফল আসতে পারে। ছেলেটি আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আইনী সহায়তা দিব।’
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শাফি মোহাইমেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ আদালতের দ্বারস্থ হলে আদালতের নির্দেশনার ভিত্তিতে মৃত ব্যক্তির লাশ তুলে ডিএনএ টেস্ট করা যায়। এ ঘটনার ক্ষেত্রে একটিই সমাধান এটি।’