পানির দাম ৬১% বাড়াতে চায় চট্টগ্রাম ওয়াসা

25

এম এ হোসাইন

দেড় বছরের ব্যবধানে আবার বড় আকারে পানির দাম বাড়াতে চায় চট্টগ্রাম ওয়াসা। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ৩৮ শতাংশ দাম বাড়িয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। এবার ৬১.৩৪ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ওয়াসা। চলতি মার্চ মাস থেকে এ দাম কার্যকর করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ঋণ চুক্তি অনুযায়ী ঋনের টাকা পরিশোধ করতে গ্রাহকের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায়ের কথা বলছে ওয়াসা। যদিও ৫ শতাংশের বেশি পানির দাম বাড়ানোর এখতিয়ার নেই ওয়াসার।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রতি হাজার লিটার (এক ইউনিট) পানির বর্তমান গড় বিক্রয় মূল্য ১৯.৭১ টাকা। এই দাম বাড়িয়ে সংস্থাটি প্রতি ইউনিট পানির গড় বিক্রয় মূল্য করতে চায় ৩১.৮০ টাকা। এতে করে পানির দাম বাড়বে ৬১.৩৪ শতাংশ। মূলত ঋণের শোধ দিতে দাম বৃদ্ধির খড়গ নগরবাসীর ওপর বসাতে চাচ্ছে ওয়াসা। এখতিয়ার বহির্ভ‚তভাবে পানির দাম বাড়ানোর এমন প্রস্তাব আসে গত ১৪ মার্চ চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের ৭৯তম সভায়। বোর্ড থেকে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বোর্ড সদস্য সিদ্ধার্থ বড়–য়া এফসিএকে আহŸায়ক করে গঠন করা কমিটির প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে এ প্রস্তাব অনুমোদন হবে। দশ দিনের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করবে। বোর্ডের অনুমোদন পেলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দাম বাড়ানোর আবেদন পাঠানো হবে। এরপর প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রণালয় এবং বাড়তি দাম আদায় করবে ওয়াসা।চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘আমরা তো স্বাভাবিকভাবে পাঁচ শতাংশ দাম বাড়াতে পারি। কিন্তু সেটা এবার করা হয়নি। এখন দাম সমন্বয়ের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। ঘাটতি যেটা আছে সেটা সমন্বয় করার জন্য নতুন দাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এখন বোর্ড সেটার সিদ্ধান্ত দিবে।’
এমনিতে প্রতিবছর ৫ শতাংশ করে পানির দর বাড়ায় ওয়াসা। দেড় দশকে এবারই সবচেয়ে বেশি পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। এর আগে ২০২২ সালে আবাসিকে ৩৮ শতাংশ ও বাণিজ্যিকে ১৬ শতাংশ হারে পানির দাম বাড়িয়েছিল। ২০০৯ সালে আবাসিকে প্রতি ইউনিট পানির দাম ছিল ৫ টাকা ৪১ পয়সা, বাণিজ্যিকে ১৫ টাকা ৩২ পয়সা। পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালে আবাসিকে পানির দাম হয় ৬ টাকা ৯০ পয়সা, বাণিজ্যিকে ১৯ টাকা ৫৯ পয়সা। আর ২০২০ সালে এসে আবাসিকে পানির দাম দাঁড়ায় ১২ টাকা ৪০ পয়সা আর বাণিজ্যিকে ৩০ টাকা ৩০ পয়সা। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে করা হয় আবাসিকে ১৩ টাকা ও বাণিজ্যিকে ৩১ টাকা ৮২ পয়সা। ৮ মাসের মাথায় সেই দাম বাড়িয়ে করা হয় আবাসিকে ১৮ টাকা ও বাণিজ্যিকে ৩৭ টাকা।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘দুই বছর আগেও ৩৮ শতাংশ দাম বাড়িয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। একই যুক্তি দিয়ে ৬১ শতাংশ দাম বাড়ানো অন্যায্য ও অযৌক্তিক। প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সময় অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়নি। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নিয়ে সেটার দায় ভোক্তার উপর চাপানোর পাঁয়তারা চলছে। অথচ ওয়াসা প্রতিমাসে সিস্টেম লসের নামে ৩০/৩৫ শতাংশ পানি নিয়ে নয়ছয় করে। সেদিকে নজর না দিয়ে ভোক্তার উপর দায় চাপাতে চাচ্ছে। পানির দাম বাড়াতে হলে গণশুনানির প্রয়োজন আছে।’
ওয়াসা বোর্ডের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে ওয়াসার মোট সংযোগ সংখ্যা ৮৮ হাজার ৭৭১টি। এর মধ্যে ৮২ হাজার ৬৪২টি আবাসিক ও ৬ হাজার ১২৯টি অনাবাসিক। এখন পানির দাম প্রতি হাজার লিটার আবাসিকে ১৮ টাকা এবং অনাবাসিকে ৩৭ টাকা, যা ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল। বর্তমান সংযোগের মধ্যে পানির ব্যবহার ৯১ শতাংশ আবাসিকে ও ৯ শতাংশ অনাবাসিকে। এ হিসাবে বর্তমানে প্রতি হাজার লিটার পানির গড় বিক্রয় মূল্য ১৯ দশমিক ৭১ টাকা।
শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের খরচ বিবরণী থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, বেতন-ভাতা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার আওতাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সুদ-আসলসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাড়ার ফলে প্রতি হাজার লিটার পানির উৎপাদন ব্যয় হচ্ছে ৩১ দশমিক ৮০ টাকা। এতে দেখা যায়, প্রতি হাজার লিটারে ঘাটতি থাকে ১২ টাকা। এ ঘাটতি পূরণ করতে পানির বর্তমান দাম ন্যূনতম ৬১ দশমিক ৩৪ শতাংশ বাড়াতে হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ওয়াসার আওতাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ চুক্তি অনুযায়ী সুদ-আসলসহ মোট ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৫৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা আগামী অর্থ বছর থেকে পরিশোধ করতে হবে। এসব কারণ দেখিয়ে চলতি মার্চ থেকে প্রতি ইউনিট পানিতে আবাসিকে ২৯ টাকা ও অনাবাসিকে ৫৯ টাকা ৭০ পয়সা প্রস্তাব করা হয়েছে।