পাঁচলাইশের ‘জাতিসংঘ পার্ক’ উন্মুক্ত হচ্ছে জুনে

16

ওয়াসিম আহমেদ

এক দশক পরিত্যক্ত থাকার পর ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে উঠছে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা সংলগ্ন জাতিসংঘ পার্ক। অনেকটা আগ্রাবাদের জাম্বুরি পার্কের আদলে গড়ে ওঠা পার্কটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে। আগামী জুন মাসে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর।
বিষয়টি নিশ্চিত করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ পূর্বদেশকে বলেন, ‘পার্কটি নির্মাণের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ। এখন সাজসজ্জার কাজগুলো করা হবে। আশা করছি দুই-তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে এবং জুনের দিকে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওয়ার্কওয়েগুলো দৃশ্যমান। স্ট্রাকচারাল কাজগুলো প্রায় শেষ। তবে গাছ লাগানো, নকশা অনুযায়ী সবুজের দৃশ্য এখনও অনুপস্থিত। তবে এসব কাজ শেষ হতে বেশি সময় লাগবে না বলে জানান নির্মাণে নিয়োজিত থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।
মূলত পার্কটি আগ্রাবাদের জাম্বুরি পার্কের আদলেই সাজছে। পার্কজুড়ে ৯৪০ বর্গমিটার ওয়াকওয়ে, ৭০ হাজার গ্যালন ধারণক্ষমতার ভ‚-গর্ভস্থ জলাধার ও ফাউন্টেন, শিশুদের খেলার সরঞ্জমাদি, বসার সিট, শরীরচর্চার হরিজন্টাল বসার সিট এবং মেটার পারখোলা সুবিধাসহ নান্দনিক রূপে গড়ে উঠছে জাতিসংঘ পার্ক।
চসিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৪ সালে গণপূর্ত বিভাগ পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় এক একর জায়গায় পার্কটি গড়ে তোলে। ২০০২ সালে এটি জাতিসংঘ পার্ক নামকরণ করা হয়। ২০১২ সালে তৎকালীন সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম জাতিসংঘ পার্কে দুটি সুইমিং পুলের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১২০ ফুট ও প্রস্থ ৫০ ফুট। একটির গভীরতা ৮ ফুট এবং আরেকটির সাড়ে ৮ ফুট এবং সাত হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর জিমনেশিয়াম গড়ে তোলেন। তবে জিমনেশিয়ামের ভেতরে শরীরচর্চার কোনো সরঞ্জাম ছিলো না। ২০১৫ সালের জুন মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনাগুলো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে। একই বছরের জুলাইয়ে সিটির নতুন মেয়রের দায়িত্ব নেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। মেয়র বদলের পর পার্কটির সুইমিং পুল-জিমনেশিয়াম কোনো কাজে লাগানো হয়নি। ২০১৬ সালে পার্কের মালিকানা নিয়ে গণপূর্তের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের বিরোধ দেখা দেয়। নাছির উদ্দীন মেয়র হওয়ার পর উদ্যান, জিমনেশিয়াম ও সুইমিং পুল বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নেন। ২৫ বছরের জন্য ইজারা দিতে ২০১৬ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে সিটি করপোরেশন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বাণিজ্যিকভাবে পার্ক ইজারা দেওয়ার উদ্যোগের প্রতিবাদ জানায় গণপূর্ত বিভাগ। তৎকালীন গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন তখন সিটি মেয়রের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই দু’জন দায়িত্বে থাকাকালে পার্কের উন্নয়নে সিটি করপোরেশন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর পৃথকভাবে উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এতে উদ্যানটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। সুইমিং পুল দুটিতে ২০১৭ সালের ৬ মে একদিনের জন্য সাঁতার প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস)। সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন তখন সিটি মেয়র ছিলেন। পরে ২০২১ সালে সিটি করপোরেশনের অনাপত্তির ভিত্তিতে ১২ কোটি ৭০ লাখ টাকার প্রকল্প নেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর। ২০২২ সালের শেষের দিকে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। বর্তমানে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুনেই পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।