পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আসছে বিধিমালা

11

নিজস্ব প্রতিবেদক

অনলাইন তরল বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। পরিবেশ দূষণ রোধ ও দূষণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে এই ব্যবস্থা। আগামী ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ুমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। পরিবেশ দূষণকারীদের নিয়ন্ত্রণে একটি বিধিমালা তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
পরিবেশ দূষণ রোধে সরকারের পরিকল্পনা জানতে চাইলে পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে বায়ুদূষণ রোধে একটি বিধিমালা করতে যাচ্ছি। এটি আগামী সংসদে পাস হলে বায়ুদূষণ রোধ করতে সরকারের যা করণীয় তাতে হাত দেব। আমরা ইতোমধ্যে সে কাজ করে যাচ্ছি। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পরিমাপক যন্ত্র আমরা বসিয়েছি। ‘এতে আমরা জানতে পারছি যে কী পরিমাণে, কোথায় দূষণ হচ্ছে। আপনারা জানেন যে আমাদের উন্নয়নমূলক কাজ চলছে এই কাজের জন্য কিছু বায়ুদূষণ হয়। গাড়ির কালো ধোঁয়া, ইন্ডাস্ট্রি ও ইটভাটাগুলো বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। ইটভাটাগুলোকে আমরা এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণে এনেছি। নতুন আইন আমরা করেছি। ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি সব স্থাপনায় পুরোনো ইট ব্যবহার করব না। পুরোনো ইট বায়ু দূষণ করছে, মাটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে এটা বন্ধের প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি। এর প্রজ্ঞাপনও আমরা জারি করেছি। আমরা ২০২৫ সালে বøক ইটে চলে যাব। এতে দূষণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘গাড়ির কালো ধোঁয়ার বিষয়ে আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের আওতায় একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর অধীনে কালো ধোঁয়া পরিমাপক যন্ত্র বসিয়ে সেটাকে মাপা হবে। এটার তথ্য সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে দেয়া হবে, যাতে সেই গাড়ি আর ফিটনেস না পায়। এ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।
‘কালো ধোঁয়া, ইটের কালো ধোঁয়া, উন্নয়নের কারণে দূষণ এবং ইন্ডাস্ট্রিগুলো যে দূষণ করছে এর পুরোটাকেই আমরা ইটিপির আওতায় নিয়ে আসব এবং অনলাইনে নিয়ে আসব। যাতে করে অফিসে বসেই দেখা যায় এই ইটিপিগুলো চালাচ্ছে কি না।’
নতুন পরিবেশ বিধিমালায় কী আছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘পরিবেশ আইনের সঙ্গে দূষণমুক্ত একটি বিধিমালা প্রণয়ন করব, তাতে বায়ুদূষণ হচ্ছে যেসব কারণে সেগুলো বন্ধ করতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে আইনে বিস্তারিত থাকবে।’
এ সময় শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘জাতীয় জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা ও মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
‘ইটভাটায় সৃষ্ট দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষিজমির উর্বর মাটি রক্ষার লক্ষ্যে সরকার ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯)’ জারি করেছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ১ হাজার ৫১৬টি অভিযান পরিচালনা করে ২ হাজার ৫৯৪টি ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮২৮টি অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ বা কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে এবং ৬২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমের অধীন পরিবেশ অধিদপ্তর জলাশয় ভরাট, পাহাড় বা টিলা কর্তন, কৃষিজমির ক্ষতি, নদীর পানিদূষণ, বায়ুদূষণসহ পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার ক্ষয়ক্ষতির জন্য দূষণকারী ৯ হাজার ৪১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২২৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে। ‘পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য কাক্সিক্ষত পরিমাণে বনভূমি থাকা আবশ্যক। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় কাক্সিক্ষত পরিমাণে বনভূমি সৃজন কষ্টসাধ্য। বর্তমানে দেশে বৃক্ষাচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ মোট ভূমির ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং বনাচ্ছাদন ১৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের বৃক্ষাচ্ছাদন ২৫ শতাংশে এবং বনাচ্ছাদনের পরিমাণ মোট ভূমির ১৬ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে বনায়ন ও বন সংরক্ষণ, ২০১৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত বন অধিদপ্তর ৪ হাজার ৭২৯ হেক্টর বনভূমি জবরদখল মুক্ত করে বনায়ন করেছে বলেও জানান শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বন অধিদপ্তর প্রায় ৭ হাজার ২২০ হেক্টর সমতল ভূমি ও শালবন পুনরুদ্ধার, ১ লাখ ৩০ হাজার ৫৮০ হেক্টর পাহাড়ি বন পুনরুদ্ধার, ৫০০ হেক্টর আগর বন, ১৫ হাজার কিলোমিটার দ্বীপ বাগান, ৫০ হাজার হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগানসহ অন্যান্য বাগান করা হবে। ‘বনাচ্ছাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে ম্যানগ্রোভসহ ২৯ হাজার ১২৪ হেক্টর বøক বাগান এবং গোলাপাতাসহ ১ হাজার ৫৭৪ কিলোমিটার দ্বীপ বাগান করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
এদিকে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপনে সরকারের কর্মসূচি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ জুন বেলা ১১টায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। একই সঙ্গে ৫ থেকে ১১ জুন পর্যন্ত পরিবেশ মেলা ও ৫ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা উদ্বোধন করবেন।
তিনি জানান, জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে অনলি অন আর্থ: লিভিং সাসটেইনেবিলিটি ইন হারমনি উইথ ন্যাচার, এর ভাবানুবাদ হয়- একটাই পৃথিবী: প্রকৃতির ঐকতানে টেকসই জীবন। জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- বৃক্ষ-প্রাণে প্রকৃতি প্রতিবেশ, আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ।