পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে লবণশিল্প

28

লবণ শিল্পকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে কক্সবাজার জেলা বিএনপি। দেশের সিংহভাগ লবণ কক্সবাজার থেকে সরবরাহ করা হলেও চাষীরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না বলে দলটির নেতাদের অভিযোগ। উপরন্তু এই শিল্প নিয়ে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র চলছে। ষড়যন্ত্র থেকে উত্তরণ ও ষড়যন্ত্রকারিদের মুখোশ উন্মোচন করারও দাবি জানান বিএনপির নেতৃবৃন্দ। লবণ উৎপাদন ও বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ আনা হয়।
গতকাল রবিবার দুপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা আক্ষেপ করে বলেন, একদিকে মাঠে পড়ে আছে লাখ লাখ মেট্রিক টন লবণ, অন্যদিকে শিল্প লবণের নামে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করে সেই লবণকে খাদ্য লবণে প্রক্রিয়াজাত করছে আমদানিকারক নামধারি কতিপয় রক্তচোষা! আর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে সকল চাষীরা মাঠে লবণ উৎপাদন করছেন সেই সকল চাষীরা উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে মাঠ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন। যেহেতু তারা ঋণ কিংবা দাদন নিয়ে মাঠে নেমেছিল, সেহেতু সেই ঋণ শোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যারা মাঠে আছেন তারাও যে কোনো সময় মাঠ ছেড়ে পালানোর চেষ্টায় আছেন।
লিখিত বক্তব্যে জেলা বিএনপির সভাপতি বলেন, দেশের প্রধান লবণ উৎপাদন অঞ্চল হলো কক্সবাজার জেলা। তারপর দক্ষিণ চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় লবণ উৎপাদন হয়। এছাড়া দেশের আর কোথাও লবণ উৎপাদন হয় না কিংবা উৎপাদন উপযোগী পরিবেশ নাই।
কক্সবাজার জেলার দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলাতেই মূলতঃ দেশের চাহিদার সব লবণ উৎপাদিত হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী এবং আনোয়ারা উপজেলায় মাত্র ৫০ হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে লবণ চাষ হচ্ছে। এসব এলাকা ছাড়াও কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ও ইসলামপুর ইউনিয়নে বর্তমানে প্রায় ৩৪ একর জমিতে পলিথিন ছাড়া আধুনিক পদ্ধতিতে লবণের চাষ করা হচ্ছে।
দেশে প্রায় ৬২ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হয়। বিগত ২-৩ বছরে সরকারের মেগাপ্রকল্পের কার্যক্রমের কারণে জমি অধিগ্রহণ করে নেয়ায় প্রায় ১৪ হাজার একর লবণ চাষের জমি কমে গেছে, যেখানে এখন আর চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। একদিকে সরকারের মেগাপ্রকল্পের কারণে গেছে ১৪ হাজার একর, অন্যদিকে চাষীরা লবণের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় চাষাবাদ থেকে বাদ পড়েছে আরও ১২ হাজার একর জমি। এতো সংকটের পরও দেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ লবণ চাষের সাথে জড়িয়ে আছেন। যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লবণ চাষের সাথেই নিজেদের জীবন-জীবিকার নির্ভরশীল হয়ে আছেন। যাদের অধিকাংশই কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা।
বিএনপি নেতারা বলেন, বাংলাদেশি চাষীদের উৎপাদিত প্রায় ৯ লাখ মেট্রিক টন লবণ মাঠেই পড়ে আছে। এতো বিপুল পরিমাণ লবণ থাকার পরও সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় কতিপয় রক্তচোষা আমদানিকারক ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৭৫৮ মেট্রিক টন লবণ আমদানি করেছে! চলতি অর্থবছরে আবহাওয়া লবণ চাষের অনুক‚লে রয়েছে। তারপরও চাষীরা রয়েছেন হতাশায়। তাদের চলতি বছর লবণ উৎপাদনে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ছে ১০ টাকা, অথচ মাঠে লবণের বিক্রি মূল্য মাত্র ৪ টাকা কেজি। অপরদিকে বর্তমানে বাজারে যে প্যাকেটজাত যে লবণ পাওয়া যায় তা প্রতি কেজির মূল্য ৩০ থেকে ৩৮ টাকা। উৎপাদন মাঠ ও বর্তমান খুচরা বাজারে লবণের দামের এই বিশাল পার্থক্য চাষীদের লবণ চাষে অনুৎসাহিত করে তুলছে। মাঠে লবণের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় চাষীদের মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জানান বিএনপি সভাপতি।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চার ভাগের এক ভাগ চাষী মাঠ ছেড়ে পালিয়েছেন। অন্য চাষীরাও পালিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন। এই অবস্থায় সরকার যদি কঠোরভাবে উদ্যোগ নিতে না পারে, তাহলে সরকার ঘোষণা দিয়ে দেশি লবণ শিল্পকে বন্ধ করে দেয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে আর কোন চাষী যেন লবণ চাষে নামতে না পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া।