পটিয়ায় সাপে কাটা শিশুর প্রাণ গেল বৈদ্যের হাতে

83

পটিয়ায় সাপে কাটা চার বছর বয়সের এক শিশুর প্রাণ গেছে ভুয়া বৈদ্যের হাতে। শিশুটির হাতের রগ কেটে দেয়ায় রক্তক্ষরণ আর বাহুর তিনটি বাঁধন খুলে দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়ার পর ওই শিশুর মৃত্যু ঘটে। গত সোমবার সকালে সাপে কাটার পর বেলা ১১টার দিকে শিশুটির মৃত্যু হয়। সাপে কাটা মাশফি (৪) জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের পাইরোল গ্রামের মহিউদ্দীনের পুত্র। তার মা শারমিন আক্তার একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। অন্যদিকে মৃত্যুর তিনদিন পরও শিশুটির প্রাণ আছে দাবি করে তাকে চিকিৎসার মাধ্যমে জীবিত করার চ্যালেঞ্জ দিয়ে গত বুধবার রাতে কবর থেকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে আরেক বৈদ্য। পরে স্থানীয় লোকজন এবং পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অজ্ঞাতনামা এসব প্রতারক বৈদ্য পালিয়ে যায়।
সরেজমিনে জানা যায়, গত সোমবার সকাল ৭টায় মহিউদ্দিনের শিশু সন্তান মাশফি তাদের পাকাঘরের সামনে বসে খেলার সময় বিষধর গোখরা সাপ হাতে ছোবল মারে। এ সময় মাশফি কেঁদে উঠলে বাড়ির লোকজন সাপটিকে মেরে ফেলে। পরে বাড়ির লোকজন তার হাতের বাহুতে নিয়ম মোতাবেক রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করতে পর পর তিনটি বাঁধন দেয়। এসময় কয়েক লোকের পরামর্শে শিশুটির বাবা ও মা মাশফিকে উপজেলার ভাটিখাইন ইউনিয়নের বাক্খালী গ্রামের ভুয়া সর্প চিকিৎসক তাপস বড়ুয়ার বাড়িতে নিয়ে যায়। তাপস বড়ুয়া মাশফির হাতের রগ ব্লেড দিয়ে কেটে দেয় এবং তাকে লবণ পড়া খাওয়ায়। এরপর শিশুটি বিষমুক্ত হয়েছে জানিয়ে হাতের তিনটি বাঁধন খুলে দেয়। এর ফলে একদিকে রক্তক্ষণ অন্যদিকে বিষ পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে বেলা ১১টার দিকে শিশুটি মারা যায়।
এ বিষয়ে তাপস বড়ুয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার পৈত্রিক পাওয়া তন্ত্রেমন্ত্রে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা করে আসছেন। পূর্বের রোগীদের মতই লবণপড়া আর রগ কেটে রক্ত ফেলে দিয়ে শিশুকে সুস্থ করে দেয়া হয়। তার রক্তে বিষ পাওয়া যায় নি। তাহলে শিশুর মৃত্যু রক্তক্ষরণে কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি জানেন না জানিয়ে বলেন, আপনারা চাইলে আজ থেকে লোকজনের সেবা বন্ধ করে দেবো। কারো উপকার করবো না। লবণপড়ায় বিষমুক্ত হওয়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, লেখাপড়া বেশি করিনি। দাদা সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা করতেন। তারই কথা রাখতে গিয়ে তিনি এ ধরনের রোগীর চিকিৎসা করেন এবং শত শত রোগী সুস্থ হয় বলে দাবি করেন।
মাশফির পিতা মহিউদ্দিন জানান, শিশুর মৃত্যুর রাতে তাকে কবর দেয়া হয়। ঘটনার দুইদিন পর গত বুধবার কোন বৈদ্যকে লাশ তোলার জন্য বলেননি। আরেকবার দেখার জন্য তার পুত্রের লাশ কবর থেকে তোলার অনুমতি চেয়ে হুজুরের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন। তবে কোন অনুমতি মেলেনি।
পটিয়া থানার ওসি বোরহান উদ্দীন জানান, বৈদ্যের দ্বারা সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা করা হবে জানতে পেরে তিনি ঘটনাস্থলে এসআই সাখাওয়াত হোসেন সহ একদল পুলিশ পাঠিয়েছিলেন। তবে ভুয়া বৈদ্যকে না পেয়ে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।