নোবেলজয়ীর নির্লজ্জ মিথ্যাচার

29

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানির দ্বিতীয় দিনে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে অং সান সু চি’র দেওয়া বক্তব্যকে নির্লজ্জ ও মিথ্যাচার বলে মন্তব্য করেছেন শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। এটা একজন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর জন্য লজ্জার বিষয়। তাহলে মিয়ানমারে উদ্বাস্তÍ হয়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রিত হয়েছে কেন? এমন প্রশ্ন ছিল অনেক রোহিঙ্গা নেতাদের। এদিকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বক্তব্যে অং সান সু চি রাখাইনে সহিংসতার কথা স্বীকার করলেও একে কোনোভাবেই গণহত্যা বলা যায় না বলে মন্তব্য করেন। এই খবর জানতে প্রথম দিনের মত দ্বিতীয় দিনেও আইসিজেতে চলমান রোহিঙ্গাদের দৃষ্টি ছিল টেলিভিশন, রেডিও ও মোবাইলের দিকে।
ফলে বাংলাদেশের সময় ৩ টার দিকে ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা কেউ মোবাইলে, কেউ চায়ের দোকানে খবর দেখতে ভিড় জমান। এসময় মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি শুনানিতে গণহত্যা সমর্থনে দেওয়া বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন।
সরেজমিনে গতকাল বুধবার বিকালে দেখা যায়, গণহত্যার অভিযোগে নেদারল্যান্ডের হেগ-এ শুরু হওয়া মামলার শুনানির দ্বিতীয় দিনের খবর দেখতে কক্সবাজারের টেকনাফের জাদিমুরা রোহিঙ্গা শিবিরের একটি চায়ের দোকানে ভিড় করেন রোহিঙ্গারা। বৃদ্ধসহ বেশ কিছু রোহিঙ্গা সেখানে টিভিতে খবর দেখেন। এতে ইংরেজিতে পারদর্শী রোহিঙ্গা যুবকরাও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া টেকনাফের নয়াপাড়া, শালবন, লেদা উখিয়ার লম্বাশিয়া, জামতলী, মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লোকজন টিভি ও মোবাইলে খবর দেখতে ব্যস্ত ছিল। কেননা অং সান সু চি কি বলছিল সেইটি দেখতে বেশি আগ্রহী ছিলেন তারা।
টিভিতে খবর দেখতে আসা রোহিঙ্গা বৃদ্ধ আবদুস সালাম বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা বিষয়টি কিভাবে, গণহত্যা বলা যায় না বলে মন্তব্য করলেন অং সান সু চি। মানুষ কত নির্লজ্জ হলে এই কথা বলতে পারে তা ভেবে ক‚ল পাচ্ছিনা। তবে গাম্বিয়া ও বাংলাদেশেকে ধন্যবাদ জানায়, অবেশেষে যে মিয়ানমার সরকারকে কাঠগড়ায় নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, টিভিতে দেখেছি কিভাবে পেঁচার মত তাকিয়ে ছিল অং সান সু চি। দেখে মনে হলে তিনি কিছুই জানেন না। নিজের স্বার্থে, যত দিন বেঁচে থাকবেন সু চি তত দিন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষেই নিবেন। এটি খুব সহজে বোঝা গেল। রোহিঙ্গারা সুষ্ঠু বিচার পাবে আমরা আশা করছি।
ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছোট একটি কসমেটিক দোকানে মোবাইলে খবর দেখছিল মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, গাম্বিয়ার হেগে গণহত্যা মামলার শুনানি হওয়ায়, আশায় বুক বেঁধেছেন নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। ন্যায়বিচার হলে শাস্তি পাবে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত মিয়ানমার সেনাবাহিনীরা। এতে করে নাগরিকত্ব পাওয়াসহ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হলে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে রাজি হবে। বুধবার থেকে ক্যাম্পের ইনটারনেট সেবা পাওয়া যাচ্ছে। ফলে গাম্বিয়ার খবরটি রোহিঙ্গাদের দেখতে সুবিধে হচ্ছে।
রোহিঙ্গা নেতা মোস্তফা কামাল ও মোহাম্মদ আলম বলেন, আমাদের ওপর যে গণহত্যা চালানো হয়েছে, ধর্ষণ করা হয়েছে, তার শাস্তি তারা পাবে। এজন্য কয়েকদিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোজা, দোয়া মাহাফিলসহ বিশেষ প্রাথনা করা হচ্ছে। তাছাড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের ওপর বর্বরতার সাক্ষ্য দিতে ভিকটিম হিসেবে গাম্বিয়ার হেগে ৩ জন রোহিঙ্গা হেগে গেছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা রাখাইনে ঘটে যাওয়া নির্মম ঘটনাগুলো তুলে ধরবেন। আমরা আশা করি আইসিজিতে সঠিক বিচার হবে। বিচার পেলে আমরা সেচ্ছায় মিয়ানমার চলে যাব।
সংবাদ মাধ্যামের বরাত দিয়ে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বলেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে অং সান সু চি দেওয়া বক্তব্য মিথ্যাচার এবং সাজানো ছিল। কিভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর সংগঠিত গণহত্যাকে অস্বীকার করলেন তিনি। বিষয়টি আমাদের মর্মাহত করেছে। এতে বুঝেছি আসলে তিনি নির্লজ্জ। আমরা আশা করছি রোহিঙ্গারা বিচার পাবে। এতে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর কাঠোর শাস্তি হবে।
বাংলাদেশ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এর কর্মকর্তা ও টেকনাফের শালবন, জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ (উপ-সচিব) মোহাম্মদ খালিদ হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে দেয়া অং সান সু চি’র বক্তব্য নিয়ে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের কোন ধরনের কর্মসূচি ছিলনা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান তিনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের শুনানি নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতে কেউ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আমরা সর্তক অবস্থানে রয়েছি।