নেশা

14

 

মনুষ্য জীবন ক্ষুদ্র নেশার নিমিত্তে নয়। বিষয় নেশার জন্য নয়।ভোগের নেশা হয়,নেশা হতে হবে জীবনকে উপভোগ করতে, সত্য সুন্দরে উদ্ভাসিত করতে। সহযোগে-সহভাগে, পারিপার্শ্বিক বাঁচা বাড়ার নেশা। নেশার টানেই আমরা ছুটছি সেই থেকে, যেদিন থেকে আমরা জীবনকে বুঝতে শিখছি।বলা হয়ে থাকে ‘জীবন তুমি নেশা’। জীবনের আর এক নাম নেশা। আর এই নেশা সর্বত্র সর্ব মানবে।কেউ অর্থ, কেউ প্রচার, কেউ প্রদর্শন, কেউ প্রেম, কেউ পাগল বন্ধুর নেশায়। কারো নেশা সৃজন-মননের,কারো নেশা শুদ্ধ-বুদ্ধ-মুক্ত-মুক্ত হওয়ার আপ্রনাতায়।কেউ প্রকৃতি পরিবেশের নেশায় হন গৃহ বিবাগী। প্রত্যেকেই আমরা কমবেশি নেশার শিকার।আর এসকল নেশা শুধুমাত্র জীবনকে ভোগ উপভোগের নিমিত্তে। যেখানে হয়ত তেমন জীবনের অস্তিত্ব সংকট নেই, নেই কোনো সমাজ রাষ্ট্রের বিনষ্টির উপাদান। কিন্তু কিছু কিছু নেশা রয়েছে যা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। জীবন স্বপ্নকে শেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। যেখানে রয়েছে মাদকাসক্তি,কিশোর অপরাধ, মোবাইল আসক্তি, কুপ্রবৃত্তির নেশা। পথ চলতে দেখা যায় দিনের সাদা আলো থেকে রাতের রঙিন আলোর বীভৎসতা।উ লঙ্গ উলম্ফন নৃত্যের মহড়া। দেখা মিলে পথ ধারে নিরবে নিভৃতে কোমল পানীয়তে মদ ঢেলে একশ্রেণী জীবনকে উদযাপন করছে। কখনো কখনো গাঁজা ইয়াবা হিরোইন জাতীয় কিছুর নেশায় বুঁদ হয়ে আছে। যেখানে কিশোর বা তরুণ প্রজন্মের অংশীদারিত্ব চোখে পরার মতো। যারা জীবনকে মাত্র বুঝতে শিখছে। নবম দশম একাদশ শ্রেণির পর্যায়ের এবং ঐ বয়সের মধ্যে বিস্তার। শেকড়েই যারা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। যা আমাদের কমবেশি দৃশ্যমান। আর আমরা তা দেখেও দেখছি না,করছি না প্রতিবাদ,মনোযোগী হচ্ছি না এই নেশার নিরাকরণে।যতবার অন্যায় অত্যাচার দেখেও দেখব না,যতবার মুখ ফিরিয়ে নেব,প্রতিবাদ ও প্রতিকারের চেষ্টা করব না, ততবার আমাদের অন্তরাত্মার গভীরে মারা যাবে সেই মানুষ যে মানবতার প্রতীক।
যে সকল কোমলমতি শিশুরা পরিবারে স্নেহ মায়া মমতা প্রেম প্রীতি ভালোবাসা বঞ্চিত, সমাজ ও রাষ্ট্রের অবহেলা,ক্ষেত্রমতে কারো কারো প্ররোচনা,অল্প সময়ে বিত্ত বৈভবে সমৃদ্ধ করার লোভনীয় টোপ,নেতৃত্বের মরীচিকা নেতিবাচক নেশায় এদের নেশাগ্রস্ত করে তুলছে। রাতারাতি হয়ে উঠার প্রবনতা ইতিবাচক নেশার পরিবর্তে নেতিবাচক নেশায় ধাবিত হচ্ছে এরা। যেখানে এরা হয়ে উঠছে কারো কারো হাতের ক্রীড়নক। যেখানে দেখা যায় অনেকের দৈনন্দিন খাওয়াটা ঠিকভাবে হয় না,অথচ এই বয়সের তারা মেতে উঠে কু-নেশার রঙিনতায়। জড়িয়ে পড়ে অপরাধ জগতে। পরিবার সমাজ হয়ে উঠে অশান্তি, অস্থিরতা এবং নৈরাজ্যের তীর্থভূমিতে।
শহরের মূল সড়ক থেকে ভেতরের গলির দিকে হাঁটতে গেলে দেখা যায় এদের। কখনো কখনো পরিত্যক্ত বাড়ী বন্ধ স্কুল, নির্মাণাধীন বা অসমাপ্ত ভবন মার্কেটে হয়ে উঠে এদের স্বর্গরাজ্য।যার বিস্তার এখন গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বিগত দুই বছর কোভিড-১৯ এর সংক্রমণজনিত কারণে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিবিধ বদভ্যাস ও নেশা তীব্র হয়ে উঠছে। শাসনের সীমাবদ্ধতা এক্ষেত্রে আগুনে ঘি ঢালার শামিল। অভিভাবকদের অতিমাত্রায় সন্তানস্নেহ, একশ্রেণির প্রচ্ছন্ন উস্কানি,দল ভারী করার প্রবনতায় অর্থ ও নেশাদ্রব্যের যোগান, মাতব্বরি ফলানোর দুর্দমনীয় স্পৃহা, মান-সম্মান-ইজ্জত হারানোর ভয়ে সজ্জনদের নীরবতা শিশু কিশোরদের আরো বেশি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খলতায় ধাবিত করছে,হচ্ছে নেশাগ্রস্ত। ছোটদের প্রতি স্নেহ বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান আজ যাদুঘরে ঠাঁই নিতে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এগুচ্ছি কিন্তু ক্রমাগত যে পিছনে ধাবিত হচ্ছি তা তলিয়ে দেখছি না, ভাবনা ও বোধে নিচ্ছি না। হয়ত যখন নিব তখন হয়ত উত্তরণের পথ খুঁজে পাব না।
বড়র প্রতি শ্রদ্ধানতি,ছোটর প্রতি স্নেহ,
যেই হারালি-অমনিরে তোর রইল না আর কেহ।