নারী-শিশুসহ নিহত ৭

53

নগরীর পাথরঘাটা এলাকার একটি ভবনের নিচতলায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বিস্ফোরণের পর ভবনের একাংশের দেয়াল ধসে পড়ে। এ ঘটনায় অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কজনক বলে জানা গেছে। বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে চারটি তদন্ত কমিটি করেছে চার পৃথক সংস্থা।
গতকাল সকাল ৯টার দিকে পাথরঘাটা এলাকার ব্রিকফিল্ড রোডের ধনা বড়ুয়ার পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় গ্যাস পাইপলাইনে বিস্ফোরণ হয়। এই ঘটনায় হতাহতের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম।
নিহতরা হলেন পটিয়ার মেহেরআটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অ্যানি বড়ুয়া (৩৮)। তিনি শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকৌশলী পলাশ বড়ুয়ার স্ত্রী। আইনজীবী আতাউর রহমানের স্ত্রী ফারজানা (৩২)। তিনি বাসা থেকে বের হয়েছিলেন ছেলে শুভকে (১০) নিয়ে ব্রাদার্স ফ্লেভিয়ান কিন্ডারগার্টেনে যাওয়ার জন্য। তারা স্কুলে পৌঁছার আগেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মা-ছেলে দুজনই। নিহত ফারজানার বাড়ি সাতকানিয়া।
নগরীর বাকলিয়া বাস্তুহারা কলোনিতে বসবাস করতেন রঙমিস্ত্রি নুরুল ইসলাম (৩০)। নিহতের বাড়ি টেকনাফের উখিয়ায় বলে জানা গেছে। এছাড়াও মহেশখালীর ভ্যানচালক মো. সেলিম (৪০) ও পটিয়া উপজেলার রিকশাচালক আবদুস শুক্কুর (৫০) নিহত হয়েছেন। বাকি একজনের পরিচয় এখনও মিলেনি। তাই অজ্ঞাত হিসেবে তার ময়নাতদন্ত করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, বিস্ফোরণের পর ভবনের একটি দেয়াল ধসে পাশের রাস্তা ও বাড়ির ওপর গিয়ে পড়ে। এই ঘটনায় দুই ভবনের বাসিন্দা ও পথচারীরা হতাহত হন। নিহত ৭ জনই ছিলেন পথচারী। আহত নয়জনকে চট্টগ্রম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজনকে আইসিইউ’তে ভর্তি করা হয়েছে এবং ১ জনকে ঢাকা পাঠানো হয়েছে।
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনার পর চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নয়জন আহতের মধ্যে চারজনকে ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে, একজনকে অর্থোপেডিক্স বিভাগে এবং অর্পিতা নাথকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া তিনজনকে রাখা হয়েছে আইসিইউতে। তবে বার্ন ইউনিটে থাকা অর্পিতা নাথের মুখমÐলে বার্ন ইনজুরি থাকায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম বলেন, গুরুতর অবস্থায় ৭ জনকে হাসপাতালে আনা হয়। পরে তাদের মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। নিহতদের মধ্যে দুজন নারী ও একজন শিশু রয়েছেন।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে দেখা যায়, ভবনটি আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল ফায়ার সার্ভিস। ভবনের সামনে ব্রিকফিল্ড সড়কটি সংকীর্ণ। সময়টা সকালে হওয়ায় ওই এলাকার পিএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝেও আতঙ্ক বিরাজ করছিল। এছাড়া ভবনটি বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিডিএ।
এই ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স পৃথক চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন বিস্ফোরণে হতাহতের খবর পেয়ে সকালেই ঘটনাস্থলে যান। পরিস্থিতি ঘুরে দেখার পর তিনি পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করার কথা সাংবাদিকদের জানান। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ জেএম শরিফুল হাসানকে প্রধান করে গঠিত এই কমিটিতে ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সদস্য হিসেবে থাকছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান। এই কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন নগর বিশেষ শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মঞ্জুর মোরশেদ এবং কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা।
এইদিকে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের জিএম সরওয়ার হোসেনকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে সংস্থাটি। এছাড়াও চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স করেছে আরও একটি তদন্ত কমিটি।
ঘটনার দুইঘণ্টার মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে এক লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন। এছাড়া জরুরি লাশ পরিবহন ও অন্যান্য খরচের জন্য ২০ হাজার টাকা প্রদানেরও ব্যবস্থা করেন। পরিদর্শনের সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সেবা সংস্থারগুলো সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সেখানে কেউ অপরাধী প্রমাণ হলে অবশ্য শাস্তি পেতে হবে।