নতুন করে কর বাড়বে না আওতা বাড়ানো হবে

28

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর বৃদ্ধি করছে বলে আলোচনা-সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নতুন করে কর হার বৃদ্ধি হবে না। কর আদায়ের আওতা ও পরিধি বাড়ানো হবে। কোনো ভবন দুই তলা থাকা অবস্থায় যে কর দিত এখন যদি তিন তলা, চার তলা বা বহুতল হয়ে যায় তা হলে বর্ধিত অংশের জন্য কর ধার্য কোনোভাবে অযৌক্তিক হয় না। গতকাল বৃহস্পতিবার সিটি কর্পোরেশনের ৬ষ্ঠ পরিষদের পঞ্চম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র আরো বলেন, চসিককে নগরবাসীর করের টাকা দিয়ে চলতে হয়। কিন্তু বর্তমানে অর্জিত আয় দিয়ে সেবার পরিধি বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই নিজস্ব ভূ-সম্পত্তিতে আয়বর্ধক প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কোনো এলাকায় কি ধরনের আয়বর্ধক প্রকল্প করা যায় সেজন্য কাউন্সিলরদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হবে। চসিকের অব্যবহৃত ভূ-সম্পত্তিতে একাধিক বিনিয়োগ প্রস্তাবনা এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রস্তাবনা যথাযথ কিনা তা বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে যাচাই-বাচাই করে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমতি দেয়া হবে। চট্টগ্রামে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্তাপনা ও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎসহ নিত্য ব্যবহার্য পণ্য রূপান্তরেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের প্রস্তাব বিবেচনাধীন। চসিকের দু’টি টেন্সিং গ্রাউন্ড আছে। এগুলো এখন পাহাড়সমান স্তূপে পরিণত হয়েছে। ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এখানকার স্ত‚প অপসারণে উদ্যোগী একাধিক প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলোও বিবেচনাধীন।
চলমান জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়নকালে নগরীতে সৃষ্ট জলজটে নগরবাসীর দুর্ভোগে উদ্বেগ প্রকাশ করে সিটি মেয়র বলেন, এর দায় সিডিএ’কে নিতে হবে। কারণ পুরো প্রকল্পটি তাদের হাতে এবং বাস্তবায়ন হচ্ছে সেনা বাহিনীর তত্ত¡াবধানে। আমরা সিডিএ’কে অনুরোধ করেছিলাম, বর্ষার আগেই খালগুলোর যে অংশে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহের পথ অটকানো হয়েছে তা অপসারণ করতে। কিন্তু কথা দিয়েও সিডিএ কর্তৃপক্ষ কথা রাখেনি।এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, সিডিএ খালের দু’পাশের যে অংশে রিটার্নিং ওয়াল তুলেছে সেখানে খালের মাঝেই মাটির স্তূপ করেছে এবং এই মাটি না সরিয়ে স্কেভেটর দিয়ে সমান করায় খালের মধ্যে রাস্তা হয়ে গেছে। সিডিএ বলেছে তারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ব্যবস্থাপনা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু প্রকল্পই যখন বাস্তবায়ন হয়নি তখন ব্যবস্থাপনার কথা আসে কেন? সম্পূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বুঝিয়ে না দেয়ার আগে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিতে পারি না। মেয়র প্রশ্ন করেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ আরো তিন বছর বাড়ানো হলেও এই সময় নগরীকে জলজট থেকে মুক্ত করার কোনো পথ সিডিএ করেছে কি? তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। পরিবহণ সেক্টর ও যোগাযোগ অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন না হলে মেগা প্রকল্পগুলোর সুফল পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করে মেয়র বলেন, নগরীতে মেট্রোরেল ও মনোরেল করার প্রস্তাব এসেছে। মেট্রোরেলের ব্যাপারে একটা জরিপ আমাদের আছে, কিন্তু মনোরেলের ব্যাপারে কোনো ধারণা নেই। মনোরেলের প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করতে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এটা সত্য যে, একটি আধুনিক শহরের জন্য দু’টি রেল সিস্টেম খুবই কার্যকর।
তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে ওয়ান সিটি টু টাউন ধারণা মাথায় রাখতে হবে। বে-টার্মিনাল, গভীর সমুদ্র বন্দর, আন্তঃদেশীয় মহাসড়ক ও রেল যোগাযোগ চট্টগ্রাম নগরীর উপর দিয়ে সম্প্রসারণ এবং কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে ট্যানেল হয়ে গেলে চট্টগ্রাম নগরীর জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক গুরুত্ব বেড়ে যাবে। সর্বোপরি চট্টগ্রাম হয়ে উঠবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক হাব। মিরসরাই, আনোয়ারায় অর্থনৈতিক জোন হয়ে গেলে ৭ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এসব কারণে চট্টগ্রাম নগরীর গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে আমাদেরকে এখন থেকে ভাবতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, পলিথিন সভ্যতার অভিশাপ। কর্ণফুলীতে পলিথিনের জমাট ও ভারী আবরণে ড্রেজিং করা যাচ্ছে না। শহরের খাল-নালায় ও পলিথিনের স্ত‚প পড়ে আছে। এই পলিথিন জলাবদ্ধতার বড় কারণ। পলিথিন মুক্ত নগরী গড়তে আইন চাই। তিনি আরো বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ চলমান থাকবে। যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলা, অবৈধ স্থাপনা ও অসামাজিক কার্যকলাপ রোধে আইনি ক্ষমতা সম্পন্ন সিটি আদালত চাই। তিনি জানান, নালা-নর্দমা থেকে মাটি উত্তোলন ও তা সরিয়ে ফেলতে প্রত্যেক ওয়ার্ডে কাউন্সিলরকে ৮ লক্ষ টাকা করে মোট ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
মেয়র আরো বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিল কার্যালয়কে আয়বর্দ্ধক করতে হবে। তাই কার্যালয় ভবনে কমিউনিটি সেন্টারসহ অন্যান্য স্থাপনা থাকবে। তিনি বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদের দিনে ১২ ঘন্টার মধ্যে পশুর বর্জ্য সরিয়ে ফেলতে হবে। এ জন্য পরিচ্ছন্ন ও যান্ত্রিক বিভাগকে তৈরি থাকার নির্দেশ দেন। মেয়র চট্টগ্রামকে সাজিয়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রত্যাশা করে বলেন, এই নগরী আমার একার নয়, সকলের। আমি ভাল পরামর্শ ও মতামতকে কাজে লাগাতে উদগ্রীব।
সিটি কর্পোরশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মাহমুদের পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছালে আহম্মদ চৌধুরী, মো. সাহেদ ইকবাল বাবু, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইসমাইল, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, নাজমুল হক ডিউক, ড. নিছার আহমদ মঞ্জু, মো. মোবরক আলী, আবদুল বারেক, হাসান মুরাদ বিপ্লব, আবদুস সালাম মাসুম, মো. শহিদুল আলম, মো. নুরুল আমিন, গাজী মো. সফিউল আজিম, শেখ মো. জাফরুল হায়দার চৌধুরী, মো. কাজী নুরুল আমিন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর নিলু নাগ, আঞ্জুমান আরা, শাহিন আক্তার রোজী, রূমকি সেন গুপ্ত, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, অতি. প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোর্শেদুল আলম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ ভার্চুয়াল সংযোগে অংশগ্রহণ করেন।