নগরীতে বাল্যবিয়ে পন্ড করলেন ম্যাজিস্ট্রেট

38

নগরীর বাকলিয়া এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে বাল্যবিয়ের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগমুহূর্তে হাজির হলেন ম্যাজিস্ট্রেট। কনের বয়স মাত্র ১৫ বছর হওয়াতে বিয়ে পন্ড করে দেয়া হয়। অল্প বয়সে বিয়ে দেয়ার অপরাধে বর পক্ষকে ৫০ হাজার এবং কনে পক্ষকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে উভয়ের কাছ থেকে মুচলেকা নেন ম্যাজিস্ট্রেট।
বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও বিয়েতে রাজী হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে বরকে আটক করার নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আক্তার। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে নগরীর বাকলিয়া থানার তুলাতলী ওয়েডিং পার্ক কমিউনিটি সেন্টারে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আক্তার ও মাসুদুর রহমান।
জানা যায়, কর্ণফুলী উপজেলার শাহমীরপুর গ্রামের মরহুম আবুল কালাম সওদাগরের ছেলে হাফেজ ছগির আহমদ খোকনের (২৮) সাথে পটিয়া উপজেলার চরকানাই গ্রামের মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের মেয়ে এবং কামালে ইশকে মোস্তফা ফাজিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্রীর সাথে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়। গত বুধবার তাদের মেহেদী অনুষ্ঠান শেষ হয় এবং গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।
দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহীদ বশরুজ্জামান চত্বরের পাশে অবস্থান নেন ম্যাজিস্ট্রেট। ৩টা ৪৫ মিনিটে বরযাত্রীর আসলে কমিউনিটি সেন্টারে ম্যাজিস্ট্রেট হাজির হন। মেয়ের অভিভাবকদের ডেকে জানতে চাইলেন, মেয়ের বয়স কত এবং কোন শ্রেণিতে পড়ে। এসময় অভিভাবক উল্টাপাল্টা মিথ্যা তথ্য প্রদান করতে থাকেন। ম্যাজিস্ট্রেট মেয়ের শিক্ষার সনদ এবং আসল জন্মতারিখ দেখালেন। এতে দেখা যায় মেয়ের বয়স মাত্র ১৫ বছর ৭ মাস। অন্যদিকে বরের বড়ভাইকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি মেয়ের বয়স সম্পর্কে কিছুই জানতেন না বলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জবানবন্দি দেন।
পরে বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৭ এর ৭(১) ও ৮ ধারা অনুযায়ী বর হাফেজ ছগির আহমদ খোকনকে ৫০ হাজার টাকা এবং মেয়ের বাবা মোহাম্মদ নজরুল ইসলামকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একই সাথে বরকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয় এবং কনে উপযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে করলে শাস্তির মাত্রা বুঝিয়ে দিয়ে বাড়িতে ফিরে যাবার নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ।
ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আক্তার পূর্বদেশকে বলেন, ‘মেয়ের বয়স ১৮ বছর না হওয়ায় বিয়েটি বন্ধ করে দিয়েছি। উভয় অভিভাবকদের ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। মেয়েটির ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবেন না মর্মে মুচলেকা দিয়েছেন অভিভাবকরা। অন্যথায় কঠিন শাস্তি হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়’।