ধাক্কা ধাক্কির রাজনীতি এবং অপশব্দের ভিড় !

34

 

সুখে থাকিলে ভুতে কিলায়, এই প্রবাদটা আজ বড়ই মনে পড়িতেছে। ইনসান বড়ই না শোকর বান্দা। আমাদের আদিপিতা আদম আলাইহিসসালাম যদি শোকর গুজার হইতেন তাঁহাকে কী আর ধুলির ধরায় নামিতে হইত ? আমি কদাচিৎ ইহা কহিতেছিনা যে হযরত আদম আলাইহিস সালাম না শোকর বান্দা ছিলেন। বরং তিনি শোকর গুজার তওবাকারী আল্লাহ্র ফরমাবরদার বান্দা ছিলেন। মাগার তিনি মক্করবাজ শয়তানের ফান্দে পড়িয়া নিষিদ্ধ ফল খাইয়া সুখের অমরাবতী ছাড়িয়া দুনিয়ায় আসিয়া তশরিফ লইলেন। এই ব্যাপারে বাউল, বয়াতীরা নানান ছুরতের গীত বাঁধিয়াছে। বাউল বয়াতীদের প্রসঙ্গে না গিয়া বরং কোরআন হাদিস অনুসরণ করা বেহতর।আফসোস ! যাহারা ইসলাম লইয়া কথা কহিয়া থাকে তাহারা ইসলাম বিষয়ে পড়া লেখা করে না।
আমি রাজনীতি করিনা তাই রাজনৈতিক কথা-বার্তা বলিনা। ইহাতে ফাঁক থাকিয়া যায়, মিথ্যাচার থাকিয়া যায় । স্বার্থ থাকিয়া যায় । যেখানে ফাঁক থাকে সেখানে ধোকাও থাকে। কারণ ফাঁক আর ধোকা কায়া ও ছায়ার মতো। যেখানে মিথ্যাচার থাকে সেখানে ফাঁক আর ধোকা সাবলীল ভাবে ঢুকিয়া পড়ে। কারণ মিথ্যার অপর নাম ‘ধোকা’।আর মিথ্যা ও ধোকা সেখানেই সদর্পে উপস্থিত থাকে যেখানে স্বার্থ থাকে। সুতরাং সোজা কথায় আমার কোন স্বার্থ নাই।তাই আমি রাজনীতি করিনা। যাহা করি সেইটা হইলো, দেশ ও সমাজের জন্য কল্যাণের কথা বলিয়া থাকি । কোন পদ-পদবীর লোভ নাই আমার নির্বাচন করার ইচ্ছা নাই। কারণ আমি বিশ্বাস করি দেশ ও সমাজের কল্যাণে মানুষের জন্য কাজ করিতে হইলে কিংবা কাজ করিবার ইচ্ছা থাকিলে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না থাকিয়াও করা যায়। রাজনীতি করেননা এমন জনদরদী সমাজ সেবকের সংখ্যা বিরল নয়। খুঁজিলে পাওয়া যাইবে এই শস্য শ্যামল সবুজ বাংলায়। চেয়ারে বসিয়ায় শুধু জনসেবা করা যায় অন্যথায় নহে , এহেন ধারণা ভুল। ইচ্ছা থাকিলে উপায় হয়। কেহ অর্থ দিয়া করেন, কেহ কণ্ঠ দিয়া করেন। কেহ কায়া দিয়া করেন কেহ ছায়া দিয়া করেন। কেহ লেখিয়া করেন তো কেহ শিখিয়া করেন। প্রতিটি সৎ দেশ প্রেমিক লোক স্ব-স্ব অবস্থান হইতে নিজের মতো করিয়া জনকল্যাণ তথা সমাজ সেবা করিয়া যাইতে পারেন। দরকার শুধু ইচ্ছার। ১১৬ জন মাওলানার বিরুদ্ধে মামলা হইয়াছে ধর্ম লইয়া ব্যবসা করিতেছে বলিয়া।আমাদের প্রশ্ন হইল, ধর্ম লইয়া কী শুধুই হুজুরগণ ব্যবসা করিতেছেন ? রমজানে যখন নিত্য পণ্যের মূল্য বর্ধিত হয় হাজী সাহেব গাজী সাহেব কর্তৃক তখন গণ কমিশন কী করে ? হজ লইয়া ওমরা লইয়া ব্যবসা হয়, এই মুল্লুকে ধর্মের আড়ালে ঈদ কোরবান লইয়া ব্যবসা হয়, ব্যাংক লইয়া অর্থনীতি লইয়া ব্যবসা হয় মাগার তাহাতে কোন গুনাহ হয়না। হুজুরদের বেলায় সব। আমরা তথাকথিত উচ্চ মূল্যের হেলিকপ্টার বক্তাদের পক্ষে নয়। শুধুই বলিতে চাই সব মাছেই মল খায় বদনাম পাঙ্গাস মাছের কেন ? যাহা হোক, এই কথা যাহারা কহিতেছেন তাহারা নিজেরাই বিতর্কিত। স্বজন কর্তৃক অভিযুক্ত। সুতরাং তাহাদের বকবকানি পরিত্যাজ্য। কথায় আছে- আপনি আচরি ধর্ম অন্যকে শেখায়’। মোল্লা নাসির উদ্দিনের একটা গল্প আছে- তিনি কিছুদিনের জন্য কাজীর দায়িত্বে ছিলেন। ঐ সময়ে কাজী যাহাই কহিতেন তাহাই আইন ছিল। একদা এক বুড়ি তার ছোট্ট নাতিটাকে লইয়া মোল্লা নাসির উদ্দিনের নিকট আসিয়া নাতির বিরুদ্ধে চিনি খাওয়ার নালিশ করিলেন। নাসির উদ্দিন কহিলেন এক সপ্তাহ পরে লইয়া আসিবেন। বুড়ি এক সপ্তাহ পরে আসিলে কহিলেন আগামী সপ্তাহে আসেন। এই ছুরতে বুড়িকে বেশ কয়েক সপ্তাহ ঘোরাইয়া একদিন বুড়ির নাতিকে কাছে ডাকিয়া গালে মৃদু চপেটাঘাত করিয়া কহিলেন- আর চিনি খাইবানা কইলাম। বুড়ি তাজ্জব হইয়া কহিলেন এই কথাটা কহিতে এতদিন ঘোরাইলেন কেন বলিবেন কী ? মোল্লা নাসির উদ্দিন কহিলেন- বুড়ি মা, আগে আমার চিনি খাওয়ার আদত টা ছাড়াইতে হইবে তো। ইহার পর আমি অন্যকে নিষেধ করিতে পারিব । আসলে এটাই নিয়ম। আমরা বদ কিসমতি। অনেক সময় নানা কারণে আমাদেরকে এমন কিছু লোক হইতে চারিত্রিক সনদ লইতে হয় যাহার নিজের চরিত্র বলিতে কিছু নাই। তারপরেও বছরের পর বছর ঐ কুরছিটা আঁকড়াইয়া রাখাই তাহার কেরামতির যোগ্যতা। রাজনীতিতে ধাক্কাধাক্কি নতুন কিছু নয়। একদা বিরোধী দল কহিয়াছিল, এই সরকারকে ধাক্কা দিয়া ফেলিয়া দিবেন। আরেক জনকে ধাক্কা দিতে হইলে নিজের অবস্থানের দৃঢতা পরখ করিয়া দেখা বুদ্ধিমানের কাজ। শুধু খোঁচাইলে হয়না। তালি জোড়া দেওয়া পদ্মাসেতু ভাঙিয়া পড়িবে এই ছুরতের অশুভ কথা যাহারা কহিতে পারেন তাহাদের রাজনীতির ঘিলু ল্যাবে পরীক্ষা করা উচিৎ। গেল সপ্তাহে সকিনার বাপ কহিয়াছিলেন, প্রধানমন্ত্রী মজা করিয়া কহিয়াছিলেন পদ্মাসেতু হইতে টুপ করিয়া ফেলিয়া দিতে ইহাতেই তাহারা ক্ষেপিয়া গেলেন। মজা বা মশকরা না বুঝিলে মশকরা না করাই উত্তম। যদি ইহা মশকরা না হয় তাহা হইলে মিথ্যার বেসাতি না করাই বেহতের। এই মুল্লুকে একটা সমস্যা হইল না বুঝিয়া ক্ষেপিয়া যাওয়া। এক হুজুর মুক্তিযোদ্ধাদের নাকি জঙ্গি কহিয়াছেন। জঙ্গি বলিতে আমরা হত্যাকারী, ধর্মের নামে নাশকতাকারীদেরকে বুঝি। মাগার আসল কথা হইল, জঙ্গি উর্দ্দু শব্দ। ইহার অর্থ হইল- যোদ্ধা। এই শব্দটি বাংলাদেশে বিকৃত হইয়াছে কিছু পথভ্রষ্ট মুসলমান নামধারী উছৃংখল গোষ্ঠীর কারণে। যেমন হইয়াছে “রেজাকার” শব্দটি লইয়া। রেজাকার শব্দটি এই মুল্লুকে বিকৃত হইয়া হইয়াছে ‘রাজাকার’। যাহা একটি গালি সদৃশ। রাজাকার বলিতে আমরা সেইসব ঘৃণিত লোকদেরকে বুঝি যাহারা ৭১এ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীকে বাঙালি নিধনে সহায়তা করিয়াছিল। অথচ রেজাকার একটি উর্দ্দু শব্দ। যাহার অর্থ হইল-‘স্বেচ্ছাসেবক’। মাগার এই মুল্লুকে ঐ মূল শব্দের অর্থ কেহ নেন না। এটাই স্বাভাবিক। ঐতিহাসিক ঘটনা গুলির সহিত জড়িত অনেক শব্দার্থই কলুষিত হইয়া বিকৃত হইয়া গিয়াছে, এই ছুরতের আরেকটি শব্দ হইল-‘মীরজাফর’। যার বিকৃত অর্থ বিশ্বাসঘাতক। অথচ ইহা বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব সিরাজ দৌলার সেনাপতি মীর জাফর আলী খাঁ’র নাম। এই ছুরতের অনেক শব্দ যাহা আমাদের অনেকের জানা নাই।ভিন দেশী ভাষা হইতে অনেক শব্দ বিকৃত হইয়া আমাদের শব্দভান্ডারে এই ছুরতে অনুপ্রবেশ ঘটিতে দেখা যায়। আরেকটি বহুল পরিচিত হিন্দি শব্দ ‘ আম জনতা’ যাহার অর্থ হইল সাধারণ জনগণ। মাগার কতিপয় সাংবাদিক এই আম জনতা শব্দটাকে ম্যাঙ্গো পিপল লিখিয়া বাংলা ভাষার শব্দকোষে এক আজীব ও গরীব পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটাইয়াছে। এই আম যে মধু মাসের মরসুমি ফল আম নয় তাহা তাহারা বিলকুল অবগত নয়। এই ছুরতের সাংবাদিকদের পাল্লায় পড়িয়াছিলেন এক মশহুর আদমি জেনারেল ক্রুশ্চেভ। একবার তিনি একটি শুয়োরের খামার পরিদর্শনে গিয়াছিলেন। শুয়োরের খাচার সামনে খাড়াইয়া ছবি তুলিলেন। মাগার সাংবাদিকরা পড়িলো মহা বিপদে। কাল সকালের পত্রিকায় জেনারেলের ছবি আসিবে মাগার ছবির ক্যাপশন কি হইবে?

“শুয়োর পরিবেষ্টিত জেনারেল ক্রুশ্চেভ” – না হইলো না।
“শুয়োরদের সাথে জেনারেল ক্রুশ্চেভ” – না এবারো হইলো না।
পরদিন পত্রিকায় ছবি আসিল, ছবির ক্যাপশন হইলো; “জেনারেল ক্রুশ্চেভ, বাম হইতে তৃতীয়”!

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট