দ্রব্যমূল্যের বেসামাল দামে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন শ্রেণীর মানুষেরা অসহায়

12

মো. আবদুল কাদের রাজু

অনাহারে অর্ধাহারে মানুষ দিন কাটাচ্ছে, সেটা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই, জানে মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছরে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে দেশ, ভেসে যাচ্ছে মানুষ-ভেসে যাচ্ছে মূল্যবোধ। যেসব মানুষ আগে ডালা ভরে বাজার করত এখন তা নামকাওয়াস্তে বাজার করে। তার মানে সামনে একটা প্রজন্ম অপুষ্টিতে বেড়ে উঠছে। সেই প্রজন্ম আমার দেশে যখন নেতৃত্ব দেবে আমরা তার থেকে কী আশা করব?
করোনার সংক্রমণ কমার পর হঠাৎ করে চাহিদা বৃদ্ধি ও সরবরাহ সংকটের কারণে আন্তর্জাতিকসহ দেশীয় বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। এ বাড়াটা সব দেশেই কমবেশি বেড়েছে। কিন্তু রমজানের সময় বাজারে পণ্যের দাম অযথাই চড়া হয়ে ওঠে এ সংকট নতুন নয়। ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোতে এ সময় পণ্যমূল্য কমে আসা, নানা ধরনের অফার থাকে। মানুষ স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে কমমূল্যে পণ্য কেনে। আমাদের দেশে তা পুরোটাই উলটো। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে মুনাফালোভী সিন্ডিকেট কাঁচিতে শান দিতে থাকে কতভাবে সাধারণ মানুষের পকেট কাটা যায়। মানুষ করোনার কামড়ে বড় অসহায়। তারপরও রমজানের রোজা থেকে ইফতার করবে, সাহারী খাবে- এগুলো তার ধর্মীয় বিধান। কিন্তু তাতে কী আসে যায় মুনাফা লোভীদের? আমরা কদিন আগে দেখেছি সয়াবিনের বাজার থেকে এক হাজার কোটি টাকা লোপাট। মুনাফালোভীরা আন্তর্জাতিক বাজারের কথা বলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে লুটে নিয়ে গেছে টাকা। এটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা ছাড়া আর কী? রমজানকে ঘিরে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার প্রবণতায় পণ্যের দাম বাড়ছে। বাজারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তাপ এখনো শেষ হয় নাই, তার মধ্যে রমজান সময় লাফিয়ে বাড়ছে পণ্যমূল্য। রাষ্ট্র কোনো জায়গারই লাগাম টেনে ধরতে পারছে না। আমাদের অধিকাংশ রাজনীতিবিদ এখন ব্যবসায়ী আর ব্যবসায়ীরা রাজনীতিবিদ। জনগণের সংকটে কার কী আসে যায়? বাজার মনিটরিং হবে, গোয়েন্দারা নজর রাখছে বাজারের দিকে এসব কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে আমরা আশায় বুক বাঁধি। কিন্তু পরে দেখা যায়, এত পদক্ষেপ নেয়ার পরে বাজার থেকে গৃহকর্তা ফিরছে পাঁশুটে মুখ নিয়ে। যদিও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক আমরা শুনেছি, এসব পণ্য আমদানির বিপরীতে এলসি কমিশন ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতকিছুর পরও বাজার লাগামহীন। বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলার ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্যে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আর কত দাম বাড়বে তা জানে না কেউ। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার অন্যান্য সেবা খাদ্য-শিক্ষা, চিকিৎসাব্যয় সব বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। প্রায় সব খাতেই বাড়তি ব্যয় সামাল দেয়ার মতো আয় বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কমাতে হচ্ছে খাদ্য, বিনোদন ও অন্যান্য চাহিদা। এছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে পরিবহন খরচ ও সেচ খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে গড়ে ৪ শতাংশ। এভাবে সব পণ্য ও সেবার দাম বেড়েছে। গত এক মাসের ব্যবধানে তো আয় বাড়েইনি।
গত এক বছরের ব্যবধানেও বাড়েনি। উলটো অনেকের আয় কমেছে। তাহলে হিসাবটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াল? রাজনীতিবিদ অর্থবাণিজ্য করেছে। আর সিন্ডিকেট সবখানে। এরা বাড়ছেই। জোঁকের মতো শুষে খাচ্ছে এরা। এদের সংখ্যা বেশি, এরা সংঘবদ্ধ। মানুষের টাকা খেয়ে এরা সব ফ্যাকাশে করে দেবে। আর একটি প্রজন্ম বাড়বে অপুষ্টি নিয়ে। এই বৈষম্য বাড়ছেই। বাজারে দ্রব্যমূল্যেও আগুন, সে তাপ পাচ্ছে অসহায় মানুষগুলো,ধনীর গোষ্ঠী পায় না, পায় না জনপ্রতিনিধিরাও। যারা পায় তারা আমজনতা। তাদের রক্ষা করবে কে?
সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গায় এখন কেউ নেই। কিন্তু ফলাফলে দেখা যায় উল্টো, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভালো শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একই সঙ্গে খাদ্য বাজেটে কাটছাঁট করায় পুষ্টি গ্রহণের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ার শঙ্কা আছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপেও পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে অপুষ্টিতে ভোগার তথ্য উঠে এসেছে।
পণ্যের বেসামাল দামে মধ্যবিত্ত অসহায়। তার চেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো, সব মিলে এই দুই শ্রেণির মানুষের আয়ের সঙ্গে পরিবারের সব ব্যয় সামলাতে পারছে না। প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত মানুষগুলো, হয়তো আমাদের জানা নেই সামনে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে আমাদের মত অসহায় মানুষদের, রাষ্ট্রের কোন জায়গারই লাগাম টেনে ধরতে পারছে না, আমাদের অধিকাংশ রাজনীতিবিদ এখন ব্যবসায়ী আর ব্যবসায়ীরা রাজনীতিবিদ, জনগণের সংকটে কার কি আসে যায়, বাজার মনিটরিং হবে গোয়েন্দারা নজরে রাখছে বাজারের দিকে, এসব কথা গণমাধ্যম অথবা স্যাটেলাইটে প্রকাশ হলে সাধারণ মানুষ আশায় বুক বাঁধে,কিন্তু পরে দেখা যায় তথাপূর্বক, দ্রব্যমূল্যের আগুন বাজারে লেগেই থাকে, সামান্য ডিমের হালি ৪৪ টাকা, সব দ্রব্যের দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে, যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, তারা কি করে আমাদের বোধগম্য নয়, বাজারে গেলে সাধারন মানুষের মুখের দিকে তাকানো যায় না, আমাদের গণপরিবহন শহরের রাস্তা-ঘাটে আগেও ভিখারি ছিল, এখনো আছে কিন্তু এখন ভিখারীর মান আগের মত নয়, লোক লজ্জা ছেড়ে রাস্তায় নেমেছে ভিক্ষায়,যখন কেউ বলে এক প্লেট ভাত খাওয়ান, তখন বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠে। টিসিবির ট্রাকের পিছনে দাঁড়ানো আমার বাংলাদেশ।
লেখক: প্রাবন্ধিক