দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক দশক

12

রতন কুমার তুরী

২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে হাঁটিহাঁটি পাপা করে এক দশকে পদার্পণ করলো চট্টগ্রামের মানুষের প্রিয় পত্রিকা ‘দৈনিক পূর্বদেশ’। এ পত্রিকাটি একেবারে প্রান্তিক পর্যায় থেকে হঠাৎ করেই ওঠে এসেছে। প্রকৃতপক্ষে একটি দৈনিক পত্রিকাকে একটি অঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে জনপ্রিয় করে তোলা বেশ কষ্ট এবং শ্রমসাধ্য ব্যাপার। চট্টগ্রামের কৃতিসন্তান জনাব আলহাজ্ব মাস্টার নজির আহমদ সাহেব পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠাকালিন সময়ে বিশেষ করে চট্টগ্রামের অধিবাসীদের কথা চিন্তা করেই পত্রিকাটির কলেবর সাজিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠাকালিন সময় পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদের অন্যতম সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী পাশাপাশি ছিল একঝাঁক তরুণ ও দক্ষ সংবাদকর্মী। শ্রদ্ধেয় মাস্টার নজির আহমদ সাহেবের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং মেধাবি সম্পাদক কামাল লোহানীর নিবিড় পরিচর্যায় পত্রিকাটির দিনদিন উন্নতি ঘটতে থাকে সাথেসাথে পত্রিকাটি প্রথমদিকে আট পৃষ্ঠা ছাপা হলেও পরবর্তিতে পাঠক চাহিদার কথা ভেবে এটি পূর্ণকলেবরে অর্থাৎ চট্টগ্রামের অন্যান্য পত্রিকার মত বারো পৃষ্ঠা ছাপা হতে থাকে। পত্রিকাটির দিনদিন চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকায় সম্পাদক মহোদয় এতে কিছু ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনের সংযোজন ঘটাতে থাকে তারমধ্যে প্রধান প্রধান হচ্ছে- গাঁও গেরাম, চেরাগ নগর, পড়ালেখা, সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, নিখিল চট্টগ্রাম, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরদেশ, নন্দলোক, মাঠে ময়দানে, এর বাইরে রয়েছে প্রতি সপ্তাহের শুক্রবারের আয়োজন সাহিত্য ও সংস্কৃতি।
প্রকৃতপক্ষে পত্রিকাটি প্রতিদিন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি সম্পাদকীয়তে দেশের নানা সমস্যা এবং এর প্রতিকার বিষয়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা মূলক লেখনি লিখে পাঠক হৃদয়ে জায়গা করে নিতে থাকে। এর বাইরে দেশের নামকরা নবীণ, প্রবীণ এবং তরুণ লেখকদের নিয়ে উপসম্পাদকীয়তে বিভিন্ন মতামতধর্মী লেখা প্রকাশ হতে থাকলে পত্রিকাটির প্রকাশনার কপি গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পত্রিকাটি স্বল্প সময়ের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা পায় এবং পাঠক হৃদয়ে স্থান করে নেয়। বর্তমানে পত্রিকাটি শহর ছাড়িয়ে চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। মূলতঃ একটি পত্রিকার মূল প্রাণ হচ্ছে পত্রিকাটির সম্পাদক এবং নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া একঝাঁক সংবাদকর্মী ‘দৈনিক পূর্বদেশ’ পত্রিকাটিতে বর্তমানে উক্ত প্রাণশক্তি সবগুলোই শতভাগ পরিপূর্ণভাবেই রয়েছে ফলে পত্রিকাটি এমন করোনাকালিন সময়েও সফলভাবে তাদের সংবাদ সমূহ প্রান্তিকপর্যায় থেকে তুলে এনে পত্রিকার পাতায় ছাপার অক্ষরে রূপ দিতে পেরেছে, এটি সম্ভব হয়েছে পত্রিকাটির কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা আর উক্ত পত্রিকার সম্পাদক এবং সংবাদকর্মীদের দৃঢ়তার কারণে। সা¤প্রতিক পত্রিকাটি সম্পাদকীয় এবং উপসম্পাদকীয় বিভাগের পাশাপাশি ‘স্যোশাল মিডিয়া’ নামক একটি বিভাগের সংযোক হয়েছে যা অল্পদিনেই পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগে খুব সহজেই নতুন লেখকরা তাদের প্রতিভা তুলে ধরতে পারছে বিধায় এটির প্রতি সব পাঠকের দৃষ্টি আকৃষ্ট হচ্ছে। ভবিষ্যতে স্যোশাল মিডায়া বিভাগটি নতুন লেখক সৃষ্টিতে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি। গত একদশকে পূর্বদেশ পত্রিকা নিজের নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখত পেরেছে সর্বাঙ্গীনভাবে। পাশাপাশি কোনো পক্ষ অবলম্বন না করেই পত্রিকাটির সংবাদকর্মীরা সঠিক সংবাদ তুলে এনে তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছে। সামনের দিনগুলোতে পত্রিকাটি আরো নতুন নতুন আয়োজনের মাধ্যমে পাঠকপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করবেন এমন প্রত্যাশা সকলের।
লেখক: কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক