দুর্নীতি দমন কার্যক্রমে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা প্রদর্শন করতে বলেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

40

পূর্বদেশ অনলাইন

“আমি কমিশনের সকল পর্যায়ের কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দুর্নীতি দমন কার্যক্রমে তারা যেন সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা প্রদর্শন করেন। অন্যের দুর্নীতি চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার পূর্বে নিজেদের অনিয়ম ও অসততা দূর করতে হবে।”

আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) দুদকের আয়োজনে এক আলোচনা সভায় দেওয়া ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রপতির এ নির্দেশনা আসে।

রাষ্ট্রের দেওয়া দায়িত্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহার যারা করবে, তাদের ‘কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ’ করে প্রচলিত আইনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনার ওপর জোর দেন রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, “দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হবে এবং দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না- জনমনে এমন ধারণা জন্মাতে পারলেই দুদকের ওপর জনগণের আস্থা বাড়বে।”

‘আপনার অধিকার, আপনার দায়িত্ব: দুর্নীতিকে না বলুন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে এবারের আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। এ উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা মিলনায়তনে এ আলোচনাসভার আয়োজন করে দুদক।

দুদককে আগে ‘নিজেদের দুর্নীতি’ দূর করতে অভিযান চালানোর আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, “দুর্নীতি উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। দেশ ও সমাজ থেকে যে কোনো মূল্যে দুর্নীতি দূর করতে হবে। একজন দুর্নীতিবাজের পরিচয় শুধুই একজন দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক, দুর্নীতি করলে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।”

“আগামী দিনগুলোতে দুদককে দুর্নীতি দমনে আরো দৃঢ়তার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমি আশা করব, আপনারা নিজেদের ঘর থেকেই এ অভিযান শুরু করবেন। কিছু সংখ্যক লোকের জন্য যাতে পুরো দুর্নীতি দমন কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। একইসাথে দুর্নীতির মাধ্যমে কোনো অনৈতিক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রলুব্ধ না করার জন্যও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দুদকের কর্মীদের অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলার ওপর জোর দেন রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, “বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সাথে সাথে দুর্নীতিবাজদের কৌশলও বদলেছে। তাই তাদের আইনের আওতায় আনতে হলে দুদককেও আরো কৌশলী হতে হবে, প্রশিক্ষিত জনবল ও প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।”

সামাজিকভাবে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব ‘জেগে না উঠলে’ দুদকের একার পক্ষে দুর্নীতি দমন করা ‘সম্ভব নয়’ বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, “মানুষের মাঝে দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা তৈরি এবং দুর্নীতগ্রস্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমেই কেবল দুর্নীতিকে সহনশীল মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। কোনো মানুষ দুর্নীতিবাজ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে না।

“পারিবারিক, সামাজিক ও আশপাশের পরিবেশই মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। তাই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিজের ঘর থেকেই শুরু করতে হবে। দুর্নীতি ‍ও দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। সৎ, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবানদের সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। তাহলেই দুর্নীতি হ্রাস পাবে।”

দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, দুদক কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক খান, মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বক্তব্য প্রদান করেন।