দুই মাসের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যান শেষ করবে সিডিএ

86

এম এ হোসাইন

জঙ্গল সলিমপুরে অবৈধ দখলমুক্ত হওয়া ভ‚মিসহ পুরো এলাকার মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। দখল-বেদখল হওয়া পুরো এলাকা থাকবে মাস্টারপ্ল্যানের আওতায়। জঙ্গল সলিমপুরে ৫ মৌজায় পাহাড় ও গাছপালাবেষ্টিত ৩ হাজার ১০০ একর খাস ভূমি রয়েছে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অবৈধ দখলে চলে যাওয়া ৭০০ একর সরকারি খাসভ‚মি ইতিমধ্যে উদ্ধার করেছে জেলা প্রশাসন। এখনো কিছু জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। ইতিমধ্যে উদ্ধার হওয়া জমি বরাদ্দ পেতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। সরকারি বিশাল এই সম্পত্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করছে সিডিএ।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, জঙ্গল সলিমপুর নিয়ে আমরা একটি মাস্টারপ্ল্যান করছি। সার্ভের মাধ্যমে এ মাস্টারপ্ল্যান হবে। কোথায় কি আছে, পার্ক বা অন্যান্য কি হবে সেটা দেখে তারপর ডিপিপি করা হবে। পাহাড়গুলো কোথায় কেমন আছে সেটা দেখা হবে। পুরো সাড়ে তিন হাজার একর এলাকায় সার্ভের আওতায় থাকবে। আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে মাস্টাপ্ল্যানের কাজ সম্পন্ন হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সাড়ে তিনশ একর জায়গা চেয়েছি। পূর্নবাসনসহ আমরা এই জায়গা চেয়েছি। মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে কি কি হবে, না হবে সেটা নির্ধারণ করা হবে।
সীতাকুÐের জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় পাঁচটি মৌজার ৩ হাজার ১০০ একর সরকারি খাস ভূমি রয়েছে। পাহাড় ও গাছপালাবেষ্টিত এসব জায়গার বিশাল একটি অংশ গত তিন দশক ধরে চট্টগ্রাম মহানগর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় পরিষদ নামের ব্যানারে কিছু লোক অবৈধভাবে দখল নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করেছে। ভূমিদখলদাররা জঙ্গল সাফ করে প্লট তৈরি করে বিক্রি করে আসছিল। দখল হাতবদলের মাধ্যমে তারা কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে। দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধচক্র সেখানে ১৩টি সমবায় সমিতির নামে পাহাড় কেটে অবৈধভাবে প্লট তৈরি করে বিক্রি করে আসছে। সমিতির নেতারা ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্টাম্পের মাধ্যমে খাস জমির দখল বিক্রি করেছিল। কাঁচা ও পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে নিম্ন আয়ের মানুষদের ভাড়া দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে পানি, বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এখানে প্রায় ১৯ হাজার মানুষ বসবাস করে আসছিল। দখলকৃত এলাকাটি মাদকসেবী, বিক্রেতা ও সন্ত্রাসীদের গোপন আস্তানা ছিল। অবশেষে চট্টগ্রামের বর্তমান জেলা প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে অবৈধ দখলে থাকা সরকারি ৭০০ একর খাস জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে তা দখলে নিয়েছে। কিন্তু দখলমুক্ত হওয়ার পরই এসব খাসজমি বরাদ্দ নিতে প্রভাবশালীরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। সলিমপুরে ব্যবহার উপযোগী ভূমিতে পুলিশের চেকপোস্ট, আনসার-ভিডিপি ও র‌্যাবের ক্যাম্প কার্যালয়, স্পোর্টস ভিলেজ, ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য আবাসন ব্যবস্থা, কারাগার, আর্মি স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য আবেদন জমা পড়েছে। এছাড়া ব্যবহার উপযোগী ভূমির মধ্যে ৫৭ একর নাইট সাফারি পার্ক নির্মাণের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া জমিতে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ১০ একর ভূমি বরাদ্দ চেয়েছেন। এছাড়া স্বতস্ত্র গার্মেন্টস জোন স্থাপনের জন্য সংগঠনটি সরকারের কাছ থেকে ২০০ একর জমি বরাদ্দ চেয়েছে। তারা নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে থাকা গার্মেন্টস কারখানাগুলো সলিমপুরে স্থানান্তরের আবেদন করেছেন। জঙ্গল সলিমপুরে হকার পুনর্বাসনে হলিডে মার্কেট প্লেসসহ ৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)।
চসিকের প্রস্তাবনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ, বিনোদনের সুবিধা বৃদ্ধিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রকল্প নিতে ১২০ একর ভূমি চাওয়া হয়। একইভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য সিডিএ, ওয়াসাসহ বিভিন্ন সংস্থা জমি বরাদ্দের আবেদন করেছে।
এ অবস্থায় গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায় কাউসের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জঙ্গল সলিমপুর নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জঙ্গল সলিমপুরে ৩১০০ একর জমি উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা এবং জমি উদ্ধারের পর সেখানে জীব-বৈচিত্র্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখে সরকারের পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে কয়েকটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠিত হয়। গঠিত টাস্কফোর্স কমিটিসমূহ এক মাসের মধ্যে উচ্ছেদ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন এবং উদ্ধারকৃত সরকারি খাস জমিতে জীব-বৈচিত্র্য রক্ষাপূর্বক পরিবেশ অক্ষুণœ রেখে উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর থেকে মাস্টারপ্ল্যানের কাজ শুরু করে সিডিএ। টাস্কফোর্স এক মাসের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কথা বললেও সিডিএ বলছে এ কাজ শেষ করতে দুই থেকে তিনমাস সময় লাগতে পারে।