তাপমাত্রা নেমেছে সিঙ্গেল ডিজিটে

62

নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে হামলা-সংঘাতের পর দেশের মানুষের মনে ভোট নিয়ে উৎসবের পাশাপাশি চাপা শঙ্কা বিরাজ করলেও আপন কক্ষপথেই হাঁটছে পৌষের শীত। সাগরে নিম্ন চাপ থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফেথাই’-এর প্রভাব নিয়ে যাত্রা শুরু করা পৌষ আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাসকে এবার আর উপেক্ষা করেনি। পূর্বাভাস মেনেই পৌষের মাঝামাঝি অর্থাৎ ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এসে দেশের উত্তরাঞ্চলে বইছে চলতি শীত মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ। সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে এসেছে তাপমাত্রার পারদ। আর নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহেই দেশের অধিকাংশ এলাকাজুড়ে নামবে ঘন কুয়াশার চাদর।
এদিকে, আগামীকাল রবিবার ভোটের দিনও ঢাকার কিছু অংশ ছাড়া দেশের সব অঞ্চলেই জারি থাকবে শৈত্যপ্রবাহ থেকে শুরু করে মাঝারি কিংবা ভারি শীতের দাপট। সকালের দিকে হালকা ও মাঝারি মাত্রার কুয়াশায় ঢাকা থাকবে বিভিন্ন এলাকা। জনজীবনে ভোটের প্রভাবে তারতম্য থাকলেও শীতের দাপটে কোনও হেরফের না হওয়ার কথাই জানিয়েছে আবহাওয়াবিদরা। গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে। তবে, সারাদেশের মধ্যে চট্টগ্রামের পরিস্থিতি তুলনামূলক সহনীয় থাকতে পারে।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কথা হলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আবুল কালাম মল্লিক পূর্বদেশকে এসব তথ্য জানান। বিরাজমান আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, মধ্যরাত কিংবা ভোর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশজুড়ে হালকা থেকে মাঝারি আকারের কুয়াশা থাকবে। রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগ এবং বরিশাল ও সিলেটের কিছু অংশে তাপমাত্রার পারদ আট থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকবে। কোথাও আবার ছয় ডিগ্রি
সেলসিয়াসেও নেমে আসতে পারে। অর্থাৎ ছয় থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা উঠানামা করবে। ঢাকার কিছু অংশ ছাড়া দেশের সব অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহজনিত হাড়কাঁপানো ঠান্ডা ও প্রত্যাশামাফিক শীতলতা বিরাজ করবে। তিনি আরও বলেন, নদী অববাহিকায় যেখানে পানির সোর্স কাছাকাছি বা যেখানে গাছপালা বেশি সেখানে কুয়াশাও বেশি পড়বে। তবে ভোটের দিন দেশের কোথাও বৃষ্টিপাতের কোনও লক্ষণ বা আলামত এখন পর্যন্ত পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত দু’দিনধরে টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, বরিশাল ও ভোলা অঞ্চলসহ রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এছাড়া মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার আবহাওয়ার অবস্থায় বলা হয়েছে, রাতের তাপমাত্রা সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। গত কয়েকদিনের মতই গতকালও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারের টেকনাফে।, আর চট্টগ্রাম অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কুমিল্লায় ১০ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মূলতঃ বাংলাদেশে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত শীতের মৌসুম ধরা হয়। তার আগ পর্যন্ত হেমন্তের মিঠে-কড়া রোদ আর হিমেল বাতাসের শিহরণ-জাগানিয়া আরামদায়ক পরিবেশ বিরাজ করে প্রকৃতিতে। এরপর কুয়াশার চাদর বিছিয়ে শীত আসে। বাজারে ভিড় বাড়ে, বদলে যায় দিন ও রাতের হিসার। এমনকি, জীবনধারায় আসে পরিবর্তন। তাই সাজ পোশাকও বদলে যায়। গ্রামীণ জনপদে শীতের কড়া নাড়ার শব্দেই সৃষ্টি হয়েছে ভিন্ন আমেজ। উঁচু গাছের মাথায় কুয়াশার প্রলেপ আর পাতার গায়ে দেখা দিচ্ছে হলদে রঙ। অচিরেই তারা ঝরে পড়ার মর্মর শব্দ শোনাবে। সূর্য তড়িঘড়ি টুপ করে ডুব দিচ্ছে। রাত বাড়ার সাথে সাথে শরীরে লাগা ঠাÐা পরশেই মিলছে শীতের আগমন ধ্বনি। ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠার সাথে গরম চায়ে চুমুক। এই বদলে যাওয়াই জানান দিচ্ছে, হামাগুড়ি দিতে শুরু করেছে দেশের ছয়টি ঋতুর প্রধান তিনটির একটি শীতকাল।
আবহাওয়াবিদদের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশে শীতকালে সূর্য থাকে দক্ষিণ গোলার্ধে। ২২ ডিসেম্বর হচ্ছে সবচেয়ে ছোট দিন। এই সময় সূর্য সবচেয়ে দূরে থাকে। এ কারণে ডিসেম্বরে তাপমাত্রা কম থাকে। ২২ ডিসেম্বরের পর থেকে সূর্য ধীরে ধীরে উত্তর গোলার্ধের দিকে যেতে থাকে। বসন্ত বা ফেবুয়ারির প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তাপমাত্রা পুনরায় ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। মার্চে গিয়ে তা অনেক বেড়ে যায়। আবহাওয়াবিশারদরা একে ‘জেট উইন’ বলে থাকেন। পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে ইউরোপে সূর্য অনেক দূরে থাকে। রাতের তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। এ সময় প্রকৃতিতে একধরনের হিম শীতল বাতাস আসে, ওই বাতাস কাশ্মীর, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই চ্যানেল দিয়েই শীতের ঠান্ডা হাওয়া দেশের উত্তরাঞ্চল অর্থাৎ চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, রংপুর হয়ে ধীরে ধীরে দেশজুড়ে বিস্তৃতি লাভ করে।