ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ ৮০ শতাংশের উপরে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কঠোর ‘অ্যাকশন’

5

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকায় মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর হতে যাচ্ছে সরকার। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের
মহামারীর দুই বছর গড়ানোর পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখন আবার কোভিড রোগী বাড়ছে। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে গত এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগী প্রায় ১৭ হাজার বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার কিছু বিধি-নিষেধ ফিরিয়ে আনলেও মানুষকে তা মানাতে বেগ পেতে হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা বলে দিয়েছি, আগে ২/১দিন অবজার্ভ করব, তার পরে আমরা একটু অ্যাকশনে যাব। কারণ প্রথম থেকেই অ্যাকশনে যেতে চাই না। আমরা দেখতে চাচ্ছি, উনারা (জনগণ) মানেন কি না (স্বাস্থ্যবিধি)। অলরেডি আমরা প্রশাসনকে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ওয়াচ করতে বলেছি, তারপরে ইনশাল্লাহ আমরা কাল-পরশুর মধ্যে কিছু একটা চেষ্টা করব।’
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ‘যথেষ্ট বিপজ্জনক নয়’ বলে ধারণাটি ভুল বলে বলে মন্তব্য করেন আনোয়ারুল।
দেশে এখনও ডেল্টার দাপট চলছে বলেও সবাইকে সতর্ক করেন তিনি, করোনাভাইরাসের যে ভ্যারিয়েন্টটি গত বছরের মাঝামাঝিতে দেশে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। সরকারি প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর’র গবেষণার বরাত দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সর্বশেষ যেটা স্টাডি করেছে, সেটাতে ৮৭ শতাংশ ছিল আপনার ডেল্টা এবং ১৩ শতাংশ ছিল ওমিক্রন। এখন হয়ত ওমিক্রন একটু বেড়ে মোর অর লেস ৮০/২০ এর দিকে আসছে। একটা মেজর পোর্শন কিন্তু আমাদের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। সো ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ইজ অলওয়েজ ভেরি রিস্কি এবং আমাদেরকে সেজন্য একটু খেয়াল রাখতে হবে। একটু কেয়ারফুল যদি না থাকি তাহলে কিন্তু একটা ডিজাস্টার সামনে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই যে সংক্রমণ এড়ানোর প্রধান অস্ত্র, তা মনে করিয়ে দেন খন্দকার আনোয়ারুল।
তিনি বলেন, কোনোভাবেই যদি আমরা কমিউনিটি অ্যাওয়ারনেস, কমিউনিটি সেফটি মেজর যদি আমরা না কভার করি, মাস্ক না পরলে কোনোভাবেই এটা ঠেকানো সম্ভব না। এটা মানুষকে বুঝতে হবে।
অপরদিকে, দেশে স¤প্রতি করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে সার্বিক অবস্থা জানাতে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছেন, এখন পর্যন্ত দেশে ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আইডিসিআরের যে তথ্য আছে তাতে দেখা যাচ্ছে ঢাকা শহরে অমিক্রণের হার বেশি। অন্য শহরে কম। এখন পর্যন্ত সামগ্রিক বিচারে ডেল্টা ভাইরাসের সংক্রমণের সংখ্যা ৮০ শতাংশের উপরে। তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ আগেও যে সংক্রমণের হার দুই শতাংশের নিচে ছিল সেটা আজকের (সোমবার) হিসেবে ২০.৮৮ শতাংশ। সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়াকে ‘একটা অশুভ ইঙ্গিত’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, অমিক্রনের সংক্রমণ আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সংক্রমণ হচ্ছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে বেশি। ঢাকার বাইরে অমিক্রনের প্রাদুর্ভাব নেই বললেই চলে। তবে ঢাকায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বেশি প্রাধান্য বিস্তার করছে। তিনি মন্ত্রিপরিষদ থেকে যে ১১-দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল সেগুলো প্রত্যেকটা উল্লেখ করে তিনি বলেন সেগুলো মেনে চলতে হবে।
গতকাল সোমবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে কোভিড-১৯ এর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আায়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি জানান বুস্টার ডোজের টিকার বয়স ৬০ বা তার বেশি বয়স থেকে কমিয়ে ৫০ বছর করা হয়েছে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে। তবে যারা সম্মুখসারিতে কর্মরত তাদের কোন বয়সসীমা নেই বলে তিনি মনে করেন।
অমিক্রন সংক্রমণ বাড়লেও তাদের সবাইকে হয়তো হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না বলে এই বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। কোন হাসপাতাল বন্ধ করা হয় নি। বিছানাগুলো অন্য রোগিদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল। তবে সংক্রমণ বাড়ার কারণে বিছানাগুলো আবারো প্রস্তুত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সক্ষমতার একটা সীমাবদ্ধতা আছে। হাসপাতাল, চিকিৎসক এবং নার্সের চেয়ে যদি রোগী বেড়ে যায় তাহলে সেটা সামাল দেয়া কষ্টকর এবং দূরহ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে ১২-১৭ বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হচ্ছে। তবে যারা পড়ালেখার করছেন না তাদেরকে প্রশাসনের মাধ্যমে খুঁজে বের করে টিকার আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।