টেকনাফে অবিক্রিত লবণ নিয়ে বিপাকে চাষিরা

32

দাম পড়ে গেছে, ক্রেতা নেই লবণের। তাই মাঠেই স্তূপ করে রাখা হয়েছে লবণ। এভাবে উৎপাদিত হাজার হাজার মণ লবণ মাঠেই পড়ে রয়েছে। এমন চিত্র কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার। এখানকার অধিকাংশ মানুষ এখন লবণ চাষে যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু লবণের দাম কমে যাওয়ায় তাদের দূর্দিন চলছে।
অভিযোগ রয়েছে, একটি চক্র লবণ নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা লবণ আমদানি করতে লবণ শিল্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তাই সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগী চাষিরা।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে কক্সবাজারের অন্য উপজেলার ন্যায় টেকনাফেও লবণ উৎপাদন শুরু হয়। এ উপজেলায় তিন হাজার একর জমিতে উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন অসংখ্য চাষি-শ্রমিক। গত বছর শুধু টেকনাফ উপজেলায় ১ লাখ সাড়ে ১৪ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়। সরকার সারাদেশে ভোক্তা ও শিল্পখাতের এ চাহিদার বিপরীতে বিসিক লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ১৮ লাখ ৫০ হাজার টন। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সীমান্তের নাফ নদের কিনারায় সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ ও হ্নীলায় দেড় হাজার একর জমিতে লবণের স্ত‚প পড়ে আছে। প্রতিটি স্ত‚পে ৪০-৫০ মণ করে লবণ। এছাড়া টেকনাফ উপজেলায় সদর, হোয়াইক্যং ও শামলাপুর ইউনিয়নে আরও দেড় হাজার একর জমিতে লবণের উৎপাদন হয়েছে। ইতিমধ্যে গুটা উপজেলায় চলতি মৌসুমে উৎপাদিত ৫’শ মণ লবণ পড়ে আছে মাঠে ও গর্তে। মো. শরীফ হোসেনের ৭০ হাজার টন, মো. সালামের ৫০ হাজার টন, মো. শফিক মিয়ার ৩০ হাজার টন, হাফেজ উল্লাহর ২৫ হাজার টন, মো. সেলিমের ২০ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া আরও ৫ শতাধিক চাষির উৎপাদিত হাজার হাজার মণ লবণ মাঠে পড়ে আছে। এসব লবণের মূল্য পড়ে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন লবণ চাষিরা।
এ প্রসঙ্গে সাবরাংয়ের লবণ চাষি মোহাম্মদ শরীফ হোসেন বলেন, মিল মালিক তথা বড় বড় কোম্পানিগুলো লবণের দাম কমিয়ে দেওয়ায় মাঠপর্যায়ের চাষিরা দেউলিয়া হয়ে যাবে। ধার-দেনা করে লবণ চাষ করেন চাষিরা। এতে লাভ দূরে থাক, বিনিয়োগ করা টাকাই উঠাতে পারছেন না। পানির দামেও বিক্রি করা যাচ্ছে না লবণ। উৎপাদন যত বেশি হচ্ছে, লবণের দামও তত কমছে। আমার উৎপাদিত ৭০ হাজার টন লবণ মাঠের গর্তেই পড়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতি একরে লবণ মাঠে খরচ পড়েছে ৫০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে লবণ বিক্রি করে একর প্রতি ১০ হাজার টাকাও পাওয়া যায়নি। চলমান দরে লবণ বিক্রি করা যাচ্ছে না। ফলে অবিক্রিত লবণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
লবণচাষি সেলিম ও সালাম জানান, শীতকাল থেকে তারা লবণ চাষ শুরু করেন। বৃষ্টি শুরু হলে চাষ বন্ধ হয়ে যায়। এ বছর পর্যাপ্ত রোদ ও কম বৃষ্টিপাত থাকায় লবণ উৎপাদন ভালো হয়েছে। কিন্তু এখন হঠাৎ লবণের দাম কমে গেছে। ডিলাররা লবণের দাম প্রায় অর্ধেক বলছেন। এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে চাষিদের। অন্য বছর প্রতিমণ লবণ যেখানে বিক্রি হতো ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়, সেখানে বর্তমানে দাম দেওয়া হচ্ছে মাত্র ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা লবণচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফিক মিয়া জানান, বর্তমানে মাঠে পলিথিন দিয়ে রাখা হয়েছে হাজারো মণ লবণ। মধ্যস্বত্বভোগীরাও সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে দেওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। কিন্তু লবণের ন্যায্যমূল্য নিয়ে কেউ ভাবছেন না। একন লোকসান দিয়ে লবণ বিক্রি করেও দাদনের টাকা পরিশোধ করা যাবে না।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) টেকনাফের ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ইতিমধ্যে এখানে ৩৪ হাজার মণ লবণ উৎপাদন হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় লবণ উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু লবণের দাম কম হওয়ায় চাষিরা হতাশ। এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষেকে জানানো হয়েছে।