টিসিবির পেঁয়াজে আগ্রহ নেই ক্রেতাদের

35

টিসিবির পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৪৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৩৫ টাকা করা হয়েছে। এরপরেও কেনার মানুষ নেই। পেঁয়াজের ট্রাকের সামনে নেই আগের মতো উপচে পড়া ভিড়। অনেক স্থানেই বিক্রেতারা ডেকে ডেকে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। রাজধানীর ৫০টি স্থানে ট্রাকভর্তি টিসিবির পেঁয়াজ থাকলেও অধিকাংশ স্থানেই অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা থেমে থেমে আসছেন। নিজেদের মতো করে কেউ এককেজি, কেউ দুই কেজি, আবার কেউ পাঁচ কেজি করে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। রাজধানীর কয়েকটি স্থানে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম পরিদর্শন করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
রাজধানীর তোপখানা রোডে অবস্থিত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এবং মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক ছেড়ে কিছুটা দূরে অবস্থানকারী টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির ট্রাক দেখা গেলেও ক্রেতাদের কোনও লাইন ছিল না। উভয় স্থানেই ট্রাক দুটিকে ঘিরে কয়েকজন মানুষের জটলা দেখা গেছে। তারা নিজেদের চাহিদা মাফিক পরিমাণ মতো পেঁয়াজ কিনছেন। অথচ মাত্র কয়েকদিন আগেও রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পেঁয়াজ স্বল্পমূল্যে কেনার জন্য বিশাল লাইন থাকত।
মতিঝিলে টিসিবির ট্রাক থেকে পেঁয়াজ কিনতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী রোকেয়া খাতুন জানান, আগে ৪৫ টাকা থাকলেও এখন ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে কিনতে এলাম। আগেও লাইনে দাঁড়িয়ে ভিড় ঠেলে মাত্র এককেজি পরিমান পেঁয়াজ কিনতে পারতাম। এখন চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ কিনতে পারছি।
তিনি আরও জানান, বাজারে দেশি পেঁয়াজ উঠতে শুরু করলেও দাম এখনও আমাদের নাগালের বাইরে। এককেজি পেঁয়াজ কিনতে লাগে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, যা আমাদের পক্ষে অনেকটাই কষ্টকর, বিধায় এখনও টিসিবির পেঁয়াজ খাচ্ছি।
প্রেসক্লাবের সামনে টিসিবির ট্রাক থেকে পেঁয়াজ কিনতে আসা রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের কর্মচারী ইদ্রিস মোল্লা একই তথ্য জানান। তিনি আরও বলেন, ‘এখান থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কিনেছি এতোদিন। আজ অবশ্য লাইনে দাঁড়াতে হয়নি।’
অপর ক্রেতা মফিজুর রহমান কাজ করেন নিউ মার্কেটের একটি শাড়ির দোকানে। তিনিও দাঁড়িয়েছেন প্রেসক্লাবের সামনে পেঁয়াজের ট্রাকের সামনে। তিনি বলেন, ‘জীবনে এমন সাইজের, এমন স্বাদের, বা এমন রঙের পেঁয়াজ দেখিনি। দাম কম। তাই পাঁচ কেজি কিনলাম ১৭৫ টাকা দিয়ে। আগে তো বাজারে এই দামে এককেজি পেঁয়াজও পেতাম না। নিয়ে নিলাম, মাকে দেখাবো বলে।’
প্রেসক্লাবের সামনে টিসিবির ট্রাকে পেঁয়াজের বিক্রেতা হাবিবুর রহমান জানান, চাহিদা কমে গেছে। দামও কমে গেছে। বাজারে উঠতে শুরু করেছে নতুন পেঁয়াজ। একারণে দাম আগের তুলনায় কমেছে। তাই টিসিবির এসব বিদেশি পেঁয়াজ বিক্রির পরিমাণও কমেছে।
তিনি আরও জানান, আগে শত শত মানুষ ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়াতো। সরবরাহ কম এবং চাহিদা বেশি থাকায় দিতে পারতাম না। আর এখন লাইনে পাঁচ জন মানুষও দাঁড়ায় না। আগে প্রতিজনকে এককেজি করে দিলেও এখন যে যা চাচ্ছেন, তাকে সেই পরিমাণের পেঁয়াজই দিচ্ছি। তারপরও দিন শেষে অনেক সময় কিছু পেঁয়াজ অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে, যা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিলার মনসুর আলী বলেন, ‘সরকার যতোদিন চাইবে, ততোদিনই আমরা পেঁয়াজ বিক্রি করবো। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ শতভাগ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত টিসিবির এই কার্যক্রম চলবে বলে আমরা জেনেছি।’
তিনি আরও বলেণ, ‘প্রতিদিন চার টন করে বরাদ্দ পাচ্ছি। পুরোটাই বিক্রি করার চেষ্টা করি। কিছু অবিক্রিত থেকে যায়, যা পরের দিন বিক্রি করার জন্য আনি। চাহিদা কমে গেছে। তাই বরাদ্দ পাওয়া পেঁয়াজ পুরোটা বিক্রি করতে সময় লাগছে। যতোক্ষণ পর্যন্ত ক্রেতা আসেন, ততক্ষণ পর্যন্তই থাকি।’
এ প্রসঙ্গে টিসিবির চেয়ারম্যানের পক্ষে তার পিএস হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। পেঁয়াজের দামও ৪৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৩৫ টাকা করা হয়েছে। সরবরাহও বেড়েছে। আগে প্রতিট্রাকে এক টন পেঁয়াজ দেওয়া হলেও এখন চার টন করে পেঁয়াজ দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ায় সারাদেশে পেঁয়াজের সংকট তৈরি হয়। সরকার এই সংকট মেটাতে নানা উদ্যোগ নিয়েও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকা পর্যন্ত ওঠে।