জেলা সদরের সাথে ৫ উপজেলার লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ

7

রাঙামাটি প্রতিনিধি

রাঙামাটি জেলা সদরের সাথে ৫ উপজেলা সদরের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে এসব উপজেলাগুলোতে লঞ্চ যেতে পারছে না। তার একটাই কারণ কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা দেখা দিয়েছে। অতিবর্ষণ ও ভারী বৃষ্টিপাত না হলে এই মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি সীমা রেখার নিচে চয়ে যায়। যার কারণে লঞ্চ চলাচলে বিঘœ ঘটে। ৫ উপজেলা হচ্ছে, বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি। এসব উপজেলায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
লংগদু যাত্রী কল্যাণ সমিতির আহবায়ক এডভোকেট আবদুর রাজ্জাক মুঠো ফোনে জানান, জেলা সদর থেকে লংগদু আসতে প্রায় ৩-৪ ঘন্টা সময় লাগে লঞ্চে। যাত্রীদের দুর্ভোগ, কষ্ট নিদারুণ হয়ে পড়েছে। অপরদিকে শিশু-বাচ্চা ও গর্ভবতী মা-বোনদের যে কষ্ট হচ্ছে তা না দেখে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না। প্রতি বছর এই সময়ে লংগদুসহ ৫ উপজেলার মানুষের ভোগান্তির সীমা থাকে না। অন্যদিকে জেলা সদরের ফিসারি ঘাট থেকে স্পিড বোট ছাড়ে, সেখানেও তারা অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে। স্পিড বোট সেবার মানও তেমন ভাল না।
রাজ্জাক আরো বলেন, লংগদু উপজেলার সাথে বাঘাইছড়ি এবং নানিয়ারচর কানেটিং রোড চালু করা হলে আপাতত তিন উপজেলার মানুষ সহজে জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হতো। একদিকে সময় কম লাগত, অন্যদিকে খরচও কম পড়ত। জীবন যাত্রার মান আরো উন্নত হত। মুহূর্তে জেলা সদরের কাজ সেরে নিজ নিজ এলাকায় চলে যেতে পারত তিন উপজেলার মানুষ।
বাঘাইছড়ি প্রেস ক্লাবের সভাপতি দীলিপ কুমার দাশ বলেন, উপজেলার সাথে জেলা সদরের যাতায়াত ব্যবস্থা দীর্ঘ বছরের। চরম দুর্ভোগ হতে যাত্রীরা রক্ষা পেতে মারিশ্যা হতে লংগদু ভায়া নানিয়ারচর পর্যন্ত নির্মাণাধীন সড়ক দ্রæত সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন বাঘাইছড়িবাসী। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৬ মাস কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যায়, তাই লঞ্চ চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়। লঞ্চ যাত্রীদের জেলা শহর খাগড়াছড়ি হয়ে রাঙামাটি জেলা সদরের যেতে হয়। দুর্ভোগের শেষ নেই বাঘাইছড়িবাসীর।
লঞ্চ যাত্রীরা বলেন, আর কত বছর কষ্ট করে যাবো। বিশেষ করে বাঘাইছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচর, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়িতে জরুরি কাজে আসলে স্পিড বোট ভাড়া করে আসতে হয়। এত বহুল খরচ সবার দ্বারা সম্ভব নয়। সরকার মেগা প্রকল্প হাতে নিলে প্রথমে বাঘাইছড়ি, লংগদু ও নানিয়ারচরের সাথে সড়ক যোগাযোগ সম্ভব হতো।
রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ মঈন উদ্দিন সেলিম মুঠোফোনে বলেন, প্রায় ৫ উপজেলার সাথে জেলা সদরের লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই লঞ্চ নিয়ে বড়ই বিপদে আছি। প্রতি বছর এই মৌসুমে হ্রদে পানি না থাকলে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসব বিষয়ে নদী রক্ষা জাতীয় কমিটি ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনেক বার চিঠি লিখেছি। জেলা প্রশাসকগণ অনেকবার প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। তারপরেও কাপ্তাই হ্রদ ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হচ্ছে না। সরকারকে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব দিয়েও লঞ্চ চালাতে পারছি না। আর কোন প্রকার বৈধতা ছাড়াই অবৈধভাবে চলছে রাঙামাটিতে স্পিড বোট দিয়ে যাত্রী সেবা। বর্তমানে আমার বেশ কয়েকটি লঞ্চ বসে আছে। বেকার হয়ে পড়েছে লঞ্চ স্টাফরা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিংয়ের ব্যাপারে উপর মহল থেকে কোন সুরাহা এখনো আসেনি। তবে কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিং করার ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদ রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। আর নানিয়ারচর হয়ে লংগদু, বাঘাইছড়ি সড়ক যোগাযোগ প্রকল্পের কাজ চলছে।