জব্বারের বলীখেলা এবার হচ্ছে না মাঠ সংকটে

41

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ঐতিহাসিক ছয় দফার স্মৃতি সংরক্ষণে ২০২০ সালে লালদিঘি ময়দানকে ঘিরে ‘নগরীর লালদিঘি মাঠ সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। তাই মাঠটি উন্মুক্ত করা হয়নি। এ কারণে এ বছরও ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা আয়োজন করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও মেলা কমিটির সভাপতি চসিক কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী। গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, যদি এটি আগামী বছর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় তাহলে আমরা কুস্তি ও মেলার আয়োজন করবো। এর আগে করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর (২০২০ ও ২০২১) ধরে বন্ধ রয়েছে ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলা ও মেলা।
আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও মেলা কমিটি আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও মেলা কমিটির সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ জামাল হোসেন, সাবেক কমিশনার এ এস এম জাফর প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলার গুরুত্ব তুলে ধরে বলা হয়, ইংরেজ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে চট্টগ্রাম শহরে ১৯০৯ সালে এই বলীখেলার প্রচলন করেন বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর। এই বলীখেলা উপলক্ষে কয়েকদিন ধরে চলে মেলা যা প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়। বৃটিশ শাসনের অবসানের পর এই মেলার পরিধি ও জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পায়। ২০১৯ সাল পর্যন্ত নির্বিঘ্নে চলে এ উৎসব। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনার ভয়াবহতায় ২০২০ ও ২০২১ সালে স্থগিত ছিল বলীখেলা ও মেলা।মহামারি প্রতিরোধে গণটিকা প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যকর কর্মসূচির কারণে বর্তমানে দেশ ও জাতি অনেকটা নিরাপদে থাকলেও শত বছর ধরে ঘটে যাওয়া অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই মাঠের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ শেষ হয়ে বর্তমানে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকার কারণে এখনও উন্মুক্ত করা হয়নি। ফলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হিসেবে পরিচিত আবদুল জব্বারের বলীখেলা ও মেলা এবারও আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না।
মাটি ও মানুষের খেলা এই জব্বারের বলীখেলাসহ নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনের ঐতিহাসিক এ স্থাপনা দ্রæত উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানান তারা।
এদিকে কেবল ‘মাঠ সংকট’-এর কারণেই শতবছরের পুরনো সার্বজনীন উৎসব জব্বারের বলীখেলার আয়োজন স্থগিত করায় ক্ষুব্ধ চট্টগ্রামের সংস্কৃতিমনা মানুষেরা।
তাদের মতে, জব্বারের বলীখেলা নিছক কোনো খেলা নয়। এর রয়েছে ঐতিহাসিক তাৎপর্য ও গুরুত্ব। বাংলার যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা এবং শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর পাশাপাশি বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশের উদ্দেশ্যেই এই বলীখেলার প্রচলন। বলীখেলাকে কেন্দ্র করে লালদিঘির আশপাশের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসে বৈশাখী মেলা।
২০২০-২১ দুই বছর মহামারি করোনায় বলীখেলার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এবার পরিস্থিতি তো ভিন্ন। তারপরও কেন সম্ভব হচ্ছে না? ‘মাঠ সংকট’-এর যে যুক্তি দেখানো হচ্ছে তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত! নাকি আমরা পিছু হাঁটছি হাজার বছরের সংস্কৃতি থেকে, বাঙালিয়ানা ঐতিহ্য থেকে! তবে কি এভাবে ঠুনকো নানান অজুহাতে একে একে বন্ধ হয়ে যাবে ইতিহাস সৃষ্টিকারী ঐতিহাসিক সব আয়োজন!
একজন সংস্কৃতি কর্মী প্রশ্ন তুলেছেন, ছয় দফা মঞ্চ করতে কয় বছর লাগে?