ছেলেদের ভয়ে হাসপাতালেই থাকতে চান মা!

14

পূর্বদেশ ডেস্ক

তিন ছেলে ও পুত্রবধূ মিলে মাকে মারধর করে ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে দিচ্ছেন। মা জীবন বাঁচাতে ডাক-চিৎকার করছেন। এ ধরনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের কালবিলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে আহত অবস্থায় মা স্বরস্বতী মন্ডলকে (৬২) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এখন সুস্থ হওয়ার পরও হাসপাতালে থাকতে চাইছেন তিনি। বাড়িতে গেলে আবারও ছেলে ও পুত্রবধূ মারধর করবে এমনটি জানিয়েছেন তিনি।
হারতা ইউনিয়নের কালবিলা গ্রামের অমল মন্ডলের স্ত্রী স্বরস্বতী মন্ডলের অভিযোগ, বড় ছেলের স্ত্রীর সঙ্গে ছোট দুই ছেলের সম্পর্ক থাকার বিষয়টি জানালে তিন ছেলে ও পুত্রবধূ একত্রিত হয়ে তাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। এ সময় তাদের বাবাকেও মারধর করা হয়। অভিযুক্তরা হলো ছেলে অমল মন্ডল, শ্যামল মন্ডল, বিমল মন্ডল ও পুত্রবধূ মুক্তা মন্ডল। মুক্তা অমলের স্ত্রী।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন স্বরস্বতী জানান, বিভিন্ন কারণে অমলের স্ত্রী মুক্তার সঙ্গে বিবাদ লেগেই থাকতো। এ কারণে প্রায়ই দুই পক্ষ থেকে বিচার দেওয়া হলে ছেলেরা মাকেই মারধর করতো। সর্বশেষ ১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় মুক্তা তার শাশুড়ির বিরুদ্ধে নালিশ দেয় স্বামী ও দেবরদের কাছে। এ সময় শাশুড়ি অমলকে জানান মুক্তার সঙ্গে শ্যামল ও বিমলের সম্পর্ক রয়েছে। এ অভিযোগ দেওয়ায় মুক্তা এবং তিন ছেলে মাকে মারধর করতে করতে ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে দেয়।
এ সময় স্বামী এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করে ছেলেরা। একপর্যায়ে তাকে বাড়ির সামনের সড়কে ফেলে আসে। আর বাড়িতে গেলে আবারও মারধর করা হবে বলে জানিয়ে দেয়। গ্রামবাসী উদ্ধার করে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এখন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বাড়িতে ফিরতে চান না ছেলেদের মারধরের ভয়ে।
হারতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অমল মল্লিক বলেন, ছেলেদের মারধরের হাত থেকে রক্ষায় স্বরস্বতী ও তার স্বামী অমল গত শনিবার ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেন। তখন দুই ছেলেকে ডেকে শুনানির দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু শুনানির আগেই ছেলেরা মিলে আবারও মা-বাবাকে পিটিয়েছে। খবর পেয়ে স্বরস্বতীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মাকে মারধর করায় ছেলেদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে।
উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক হামিন সুলতানা বলেন, ছেলেদের মারধরে আহত হয়েছেন স্বরস্বতী। এখন তিনি সুস্থ। তবে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। নিজেকে হাসপাতালে নিরাপদ মনে করছেন। এখান থেকে যেতে চাচ্ছেন না। আমরাও তাকে যাওয়ার জন্য কোনও চাপ দিচ্ছি না।
উজিরপুর মডেল থানার ওসি কামরুল হাসান বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। এরপর হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়ে নিশ্চিত হই। তবে এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ পাইনি। তারপরও এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।