‘ছাত্রলীগের বাইরে সব ক্যান্সেল’

8

চবি প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য ড. শিরীন আখতার তাঁর মেয়াদের ৫ বছরজুড়েই ছিলেন নানা আলোচনায়। সর্বশেষ গত সোমবার নতুন ভিসি নিয়োগের ংবিষয় জানাজানি হতেই একদিনে ৪৪ জনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেন তিনি। এগুলো নিয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে হৈ হুল্লোড়। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে যারা ছাত্রলীগের বাইরের, তারা এখন পড়েছেন বেকায়দায়। তাদেরকে কাজ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এদের একজনকে রেজিস্ট্রার অফিসে ঢুকে মারধরও করেছেন তারা। এ সময় ছাত্রলীগের বাইরের যারা নিয়োগ পেয়েছেন, সবার চাকরি বাতিল বলে সাফ জানিয়ে দেন তারা।
গতকাল বুধবার দুপুরে সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. শিরীন আখতারের কম্পিউটার ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগ দেয়া ব্যক্তিকে রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের ভেতরে আটকে মারধর করেছেন। এ সময় তারা রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নূর আহমেদকে ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন।
চবির রেজিস্ট্রার অফিস থেকে পাওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদের সামনে বসে আছেন বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা। এর মধ্যে ছাত্রলীগ কর্মীদের বাইরে সব নিয়োগ ক্যান্সেল করতে রেজিস্ট্রারকে প্রথমে শাসাতে থাকেন শাখা ছাত্রলীগের উপ-গ্রুপ বিজয়ের একাংশের নেতা ওয়াহিদুল ইসলাম। তিনি রেজিস্ট্রারের দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলতে থাকেন, ‘এখনো পিছনে বসে আছে ও। ও ছাত্রলীগ করে না। তবুও ওরে চাকরি দিয়েছেন। ওর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ খাইছে ভিসি ম্যাম।’
এরপর শাসাতে থাকেন একই গ্রুপের নেতা শাখা ছাত্রলীগের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোরশেদুল আলম রিফাত। এসময় তিনি রেজিস্ট্রারকে বলতে থাকেন, ‘ছাত্রলীগের বাইরের এগুলা ক্যান্সেল। ছাত্রলীগ কর্মী না। ছাত্রলীগের বাইরের নিয়োগ ক্যান্সেল। ছাত্রলীগের পোলারে নিয়োগ দিলে সমস্যা নাই। ছাত্রলীগের বাইরে যেগুলা, ওইগুলা ক্যান্সেল। ছাত্রলীগের পোলাপাইনের চাকরি লওয়ার অধিকার আছে। বাইরের পোলাপাইনের কী অধিকার! ছাত্রলীগের বাইরে সব ক্যান্সেল।’
এসময় তাদের সঙ্গে উপস্থিত সব ছাত্রলীগ নেতাকর্মী রেজিস্ট্রারকে শাসাতে থাকেন। শাখা ছাত্রলীগের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন একাকার গ্রুপের নেতা মইনুল ইসলাম রাসেল, ভার্সিটি এক্সপ্রেসের (ভিএক্স) আল-আমিন শান্ত, রায়হান ও আশিব তানিম। আর ভিসিকে এসব নিয়োগের ব্যাপারে বলার জন্য তাদের পক্ষে রেজিস্ট্রারকে বোঝাতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. সুমন মামুন ও সাধারণ সম্পাদক মো. মনসুর আলী। এসময় রেজিস্ট্রার অফিসে আরো উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নাজেমুল আলম মুরাদ, মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন, আব্দুল মান্নান ও শঙ্কর বড়ুয়া।
জানা যায়, ছাত্রলীগের হাতে মারধরের শিকার ব্যক্তির নাম ইয়াহিয়া টিপু। তাকে ৫৫০ টাকা দৈনিক মজুরির শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে কম্পিউটার ল্যাব সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে যান সদ্য সাবেক ভিসি। গতকাল বুধবার তিনি রেজিস্ট্রার অফিসে জয়েন করতে এসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হন।
ভুক্তভোগী ইয়াহিয়া টিপু বলেন, ‘আমার চাকরি এপ্রুভ হইছে। সে জন্য তারা আমার গালে মারছে। আমি জয়েন করতে আসছিলাম রেজিস্ট্রার অফিসে। আমাকে জিজ্ঞেস করছে, আমি ছাত্রলীগ করি কিনা। না উত্তর দেয়ায় তখন তারা আমাকে মারধর করে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নূর আহমেদ বলেন, ‘আমার অফিসে এসে তারা এরকম আচরণ করেছে। এটা আমার জন্য অপমানজনক। আমি তো তাদের নিয়োগ দিতে পারবো না। নিয়োগ দিবে ভিসি। তবুও তারা আমার এখানে এসে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে।’