চিনি নিয়ে কারসাজি মাঠে প্রশাসন ফারুক আবদুল্লাহ

8

চিনির দাম গত পাঁচ মাসে মোট চারবার বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কোনোবারই সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর হয়নি। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চিনি কিনতে হয়েছে ভোক্তাদের। এছাড়া নানা অজুহাতে বাজারে চিনির সংকট চলছে। আসন্ন রমজানে চিনির বাজার কেমন হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সাধারণ মানুষ।
সর্বশেষ গত ২৬ জানুয়ারি কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১ ফেব্রæয়ারি থেকে খুচরা পর্যায়ে খোলা চিনি কেজি ১০৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু সরেজমিনে বিভিন্ন সময়ে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। এমনকি সর্বশেষ চিনির দাম বাড়ানোর আগে যে দামে বিক্রি হচ্ছিল, দাম বাড়ানোর পর একই দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে চিনি কেজি প্রতি ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর শহরের অলিগলির দোকানগুলোতে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় চিনি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এর আগে যতবার চিনির দাম বাড়ানো হয়েছিল, কোনোবারই নির্ধারিত দামে চিনি কিনতে পারেননি ভোক্তারা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে চিনির দাম বেশি হওয়ায় খুচরায় সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে চিনির বাজারে হঠাৎ অস্থিরতায় দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে পড়লে অভিযানে নামে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক ও সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত।
এসময় সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে চড়া দামে চিনি বিক্রি, মূল্য তালিকা না থাকা এবং বিভিন্ন অনিয়মে ৪টি মামলায় ৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, বাজারে বিভিন্ন দোকানে জরিমানা করার পাশাপাশি চিনি উৎপাদনকারী মিলের বিষয়ে তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চিনি নিয়ে অস্থির পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান চলবে।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনিকভাবে এ অভিযান পরিচালনা করায় ক্রেতারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। জনগণ যাতে সরকার নির্ধারিত দামে চিনি ক্রয় করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে এই অভিযান পরিচালনা করছে জেলা প্রশাসন।
একইভাবে চিনির দাম মুছে বাড়তি দামে বিক্রি করায় নগরীর পলিটেকনিক মোড় এলাকার রহমান ট্রের্ডাসকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গত সোমবার (৬ ফেব্রæয়ারি) নগরীর পলিটেকনিক মোড়, আরেফিন নগর বাজার ও রৌফাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযানটি পরিচালিত হয়। এসময় নেতৃত্ব দেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার।
জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, সরকার নির্ধারিত দামের ব্যত্যয় করে চিনি বিক্রয় করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাজার মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বরাবরের মতোই বলছে, ঋণপত্র বা এলসি খোলাসংক্রান্ত সমস্যা থাকায় আমদানি কম। এ সমস্যার সমাধান না হলে সামনের দিনগুলোতে সরবরাহ বাড়বে কিনা তা বলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান বলেন, ঘোষিত দাম কার্যকরের আগেই কেউ বেশি দাম নিচ্ছে কিনা সেটি দেখভালের দায়িত্ব সরকারের।
তিনি বলেন, মূল কথা হলো এলসি (ঋণপত্র) সংক্রান্ত। ব্যাংক যদি এলসি খোলে, তাহলে চিনি আমদানি করা যাবে। তখন বাজারেও সংকট থাকবে না। কিন্তু এলসি না হলে পরিশোধনকারী চিনি সরবরাহ করবে কীভাবে।
কেন্দ্রিয় ব্যাংকের তথ্য মতে, এ বছর জানুয়ারিতে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪১ মেট্রিক টন চিনির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এক বছর আগের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ১১ হাজার ৪৯৩ মেট্রিক টন। এ বছরের জানুয়ারিতে ৫৪ হাজার ৪৪৮ মেট্রিক টন বেশি চিনির ঋণপত্র খোলা হয়েছে।