চারটি গাড়িকে চাপা দিয়ে ১৪ জনের প্রাণ নিল ট্রাক

4

পূর্বদেশ ডেস্ক

ঝালকাঠি সদর উপজেলায় গাবখান ব্রিজের কাছে একটি ট্রাক তিনটি ইজিবাইক ও একটি প্রাইভেট কারকে চাপা দিলে শিশুসহ অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়। ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, গতকাল বুধবার দুপুর ২টার দিকে ঝালকাঠির শহরতলীর গাবখান ব্রিজের টোলপ্লাজায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে ঝালকাঠি শহরমুখী একটি সিমেন্টবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থাকা তিনটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও একটি প্রাইভেট কারকে ধাক্কা দেয় এবং বাহনগুলিসহ ট্রাকটি পাশের খাদে পড়ে যায়। এ সময় ট্রাকের নীচে চাপা পড়ে ইজিবাইক ও প্রাইভেট কার দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই সাত জন মারা যান। আর আহতদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক আরও চার জনকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার অভিযান শুরু করলে আরেকজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় আহত কয়েকজনকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন এইচ এম জহিরুল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আরও দু’জন। তবে নিহতদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত জেলা প্রশাসক ফরহাদুল নিঝুম জানান, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোন করে দুর্ঘটনার ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছেন। এছাড়া দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য এক লাখ টাকা সহায়তা করা হবে। খবর বিডিনিউজ’র
এদিকে ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান সেতুর টোলপ্লাজায় চারটি বাহনকে চাপা দিয়ে ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ট্রাকের চালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে ঘটনার পর পরেই চালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল। গ্রেপ্তার চালকের নাম আল আমিন হাওলাদার। তার বাড়ি ঝালকাঠি সদরের নবগ্রামে। আর সহকারী নাজমুল শেখ খুলনা সদরের বাসিন্দা। পুলিশ সুপার বলেন, আল আমিন নিয়মিত চালক ছিলেন না; তিনি বদলি চালক হিসেবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তিনি খুলনা থেকে সিমেন্টের বস্তা নিয়ে নিজ বাড়ি যাচ্ছিলেন।
আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তাদের মধ্যে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন দুজন। বাকিরা ঝালকাঠিতেই মারা গেছেন।
বরিশালে মারা যাওয়া দুজন হলেন- পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলার মেসন্ডা এলাকার সুবিদ আলী হাওলাদারের ছেলে মো. রুহুল আমিন (৭০) এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার রামনগর এলাকার বাদশা মিয়ার প্রতিবন্ধী ছেলে মো. শহীদুল ইসলাম (৩৫)।
পরিবারের লোকজনের সঙ্গে বৌভাত অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন রুবেল হোসেন (৩০)। তিনি একটি ইজিবাইকে ছিলেন। দুর্ঘটনার শিকার হলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। পরে তিনি আহত স্বজনদের নিয়ে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন।
রুবেল হোসেন বলেন, গাবখান ইউনিয়নের ওস্তকার মাঝি বাড়ি থেকে কীর্তিপাশা ইউনিয়নের ছাগলকান্দা শশীর হাটে যাইতেছিলাম বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠানে। গাবখান ব্রিজ পার হইয়া চারডা অটো (ইজিবাইক) নিয়া যাইতেছিলাম। দুইটা অটো পাশ কইরা গেছে। দুইটা টোল দিতেছিল। পেছন থেকে ট্রাক আইসা আমরার ওই দুইটা অটো প্লাস আরও দুইটা অটোরে মাইরা দিছে। ব্রেক ফেইল কইরা মাইরা দিয়া ও নিজে গর্তে পইড়া গেছে।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত রুহুল আমিনের মরদেহের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তার মেয়েজামাই গাবখানের বাসিন্দা হেমায়েত উদ্দিন। তিনি বলছিলেন, ছাগলকান্দা আমরা ভাইঝি বিয়া দিছি। সেইখানে আমরা মেলা করছি (রওনা দিয়েছি)। আমরা সামনের গাড়িতে, তারা পিছের গাড়িতে, অটোতে। চারডা অটোতে মেলা করছি; দুইডা অটো সামনে গেছে। দুইডা পিছে টোল দেয়; আর ট্রাক আইয়া মাইরা দিছে। আমাগো লোক মারা গেছে পাঁচ-ছয়জন। ঝালকাঠির রামনগরের বাদশা মিয়ার ছেলে সাইদুল বলেন, তার প্রতিবন্ধী ভাই শহীদুল (৪৫) গাবখানে ভিক্ষা করেন। তিনি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।

তদন্ত কমিটি গঠিত : ঝালকাঠিতে ট্রাকের চাপায় ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল দুপুরে দুর্ঘটনার পর পরই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক রুহুল আমীনকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নিহত ১৪ জনের পরিবারকে মোট ৫ লাখ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে।