চবি ছাত্রলীগের ৭ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

56

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক নিয়োগে মৌখিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় সাবেক এক ছাত্রকে অপহরণ করার অভিযোগে ছাত্রলীগের ৭ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমির আদালতে মামলাটি দায়ের হয়।
মামলার বাদি মো. এমদাদুল হক ময়মনসিং গৌরিপুর থানার মো. আজিজুল হকের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০০৮-০৯ সেশনের ছাত্র। খবর বাংলানিউজের
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের ছাত্র আনোয়ার হোসেন, একই বিভাগের আসিফ মাহমুদ শুভ, মোকসেদ আলী ওরফে মীলু প্রামানিক, একই বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের জাহিদুল হাসান, রফিকুল ইসলাম, একই বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের আসির উদ্দিন ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শরিফ উদ্দিন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদির আইনজীবী মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, গত ২৭ মার্চ প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা দিতে ক্যাম্পাসে যান এমদাদুল হক। ওইদিন সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাকে প্রশাসনিক ভবন থেকে তাকে তুলে নিয়ে চবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মারধর করে। পরে প্যাগোডায় নিয়ে
আরেক দফা মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এরফলে এমদাদ মৌখিক পরীক্ষা দিতে পারেননি।
এমদাদ তার বিভাগের প্রথম হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর গোল্ড মেডেল লাভ করেন। এছাড়া তার তিনটি জার্নালও রয়েছে। শিক্ষক হওয়ার দৌঁড়ে প্রথম দিকে থাকায় এমদাদকে তারা মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়নি। হাটহাজারী থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নেওয়া চট্টগ্রাম আদালতে এ মামলাটি করেন তিনি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে
ছাত্রলীগের
দু’গ্রুপের
সংঘর্ষ
চবি প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের এলাকায় একের পর এক ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে অন্তত দু’বার ছিনতাইয়ের শিকার হন ১২ শিক্ষার্থী।
এরপরই নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা চত্বরে ব্যানার ও পোস্টার নিয়ে মানববন্ধনে হাজির হন কয়েকশ শিক্ষার্থী। আর এ কর্মসূচি চলাকালে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জয় বাংলা চত্বরের অপরপাশে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। এসময় তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ শিক্ষক লাউঞ্জ সংলগ্ন জাঙ্গালিয়ার পাম বাগানে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ১০ শিক্ষার্থী বন্ধুর জন্মদিন পালন করতে গিয়ে ছিনিতাইয়ের শিকার হন। এরপর গত বৃহস্পতিবার সমাজবিজ্ঞান অনুষদের পাশে টেলিটক হিলে উঠে ছিনতাইয়ের শিকার হন দুজন। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইভেন্ট খুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধনের ডাক দেন। গতকাল রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে জয় বাংলা চত্বরে জড়ো হতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এসময় ‘নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, ‘ছাত্রবান্ধব প্রশাসন, নাকি ছিনতাই বান্ধব প্রশাসন’, ‘টেলিটক হিল ঝর্ণা, নিষেধাজ্ঞা আর না আর
না’, ‘এ ক্যাম্পাস কি তবে দস্যুদের?’, ‘প্রশাসনের চোখ বন্ধ কেনো?- এসব স্লোগান সম্বলিত হাতে লেখা পোস্টার প্রদর্শনের মাধ্যমেও প্রতিবাদ করেন তারা।
মানববন্ধনের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্যে বলেন, চবি প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। সা¤প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করতে গিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। তাছাড়া বহিরাগতদের দৌরাত্যে অতিষ্ঠ ও লাঞ্ছিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন নিরাপত্তার কথা বলে রাত ১১টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করে দেয়? অথচ শিক্ষার্থীরা ছিনিতাইয়ের শিকার হলে বলে, এত দূরে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। এটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটা মুরগির খোয়ার নয়। এখানে শিক্ষার্থীদের মুরগির খোয়ারে ঢুকিয়ে দিলে মেনে নেয়া হবে না। ২ হাজার ১০০ একরে যদি আমাদের নিরাপত্তা দিতে না পারেন তবে আমাদের এত বড় ক্যাম্পাস দরকার নাই। প্রয়োজনে ১০০ একর করে দিন, তারপরও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেন ক্যাম্পাসের অবাধ বিচরণ করতে পারে তার ব্যবস্থা করুন।
এসময় শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েক দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তাভ‚ক্ত ২ হাজার ১০০ একর এলাকায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দর্শনীয় স্থানগুলো থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রগুলোর হোতাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা, ভুক্তভোগিদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা, মাদক, ইভটিজিং ও ছিনতাই প্রতিরোধে মনিটরিং টিম গঠন করা, আইডি কার্ডের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো ও নিরাপদ ছাত্রজীবন নিশ্চিত করা। শিক্ষার্থীরা এসব দাবি-দাওয়া সম্বলিত একটি স্মারকলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের হাতে তুলে দেন। এ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা সমর্থন জানিয়ে অংশ নিয়েছেন।
এদিকে জয় বাংলা চত্বরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনস্থলের মাত্র ২০ গজ দূরে সংঘাতে জড়িয়েছে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। ফেসবুকের পোস্টে রিয়েক্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে বিবাদে জড়ায় ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক সংগঠন চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) ও বিজয় পক্ষের নেতাকর্মীরা।
এসময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিন ছাত্রলীগ কর্মী আহত হয়েছেন? পক্ষ দুটিই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
আহতরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তনয় কান্তি দাশ, আরবি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের জোবায়ের আহামেদ ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের কাজল দাশ। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে ২০ গজ দূরে অগ্রণী ব্যাংকের সামনের সড়কে তনয় কান্তির ওপর অতর্কিত হামলা চালায় সিএফসি পক্ষের কর্মীরা। তনয় বিভাগের ফেসবুক গ্রুপে সিএফসিকে ব্যঙ্গ রিয়েক্ট দিয়েছে- এমন অভিযোগে তার ওপর হামলা করা হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিজয় পক্ষের কর্মীরা রামদা ও লোহার রড নিয়ে সিএফসি নিয়ন্ত্রিত শহীদ আবদুর রব হলের দিকে গিয়ে সিএফসি কর্মীদের ধাওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে সিএফসি পক্ষের কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পাল্টা ধাওয়া দিলে পিছু হটে বিজয়ের কর্মীরা। এসময় মানববনন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিবাদমান ছাত্রলীগের উভয় পক্ষ শাহ আমানত ও সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে সশস্ত্র অবস্থান নেয়? এসময় ফের সংঘাতে জড়ায় দুই পক্ষ। এসময় তনয়, কাজল দাশ ও জোবায়ের আহমেদ আহত হন। পরে পুলিশ দুই পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
বিজয় গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী সুজন বলেন, প্রশাসনের কাছে অনুরোধ এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
সিএফসি গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির উপ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পিয়াস সরকার বলেন, জুনিয়রদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা বসে বিষয়টা সমাধান করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, নিরাপদ ক্যাম্পাসের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা সাত দফা দাবির স্মারকলিপি দিয়েছে। তাদের দাবির বিষয়ে আমরা আন্তরিক। এর মধ্যে বেশিরভাগ দাবিই আমরা পূরণ করেছি। সংঘাতের বিষয়ে তিনি বলেন, দুপক্ষের সংঘাতের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।