চবিতে ঘন ঘন মৃদু সংঘর্ষ কিসের আলামত

27

শাহরিয়াজ মোহাম্মদ, চবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগ নানা গ্রুপ-উপগ্রুপে বিভক্ত। বগিভিত্তিক এসব গ্রুপগুলো পান থেকে চুন খসলেই জড়িয়ে পড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতেই এসব গ্রুপ-উপগ্রুপের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা, রাম দা নিয়ে একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসলেও এর সুষ্ঠু প্রতিকার করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
২০১৯ সালের ১৪ জুলাই রেজাউল হককে সভাপতি ও ইকবাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যর কমিটি করে কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৬০ বার ছোটবড় সংঘর্ষে জড়িয়েছে শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপগ্রুপ। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫ বার তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে মাত্র দুটি।
এসব ঘটনার মধ্যে ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগের ১২ কর্মীকে ৬ মাস থেকে ১ বছর মেয়াদে বহিষ্কার করলেও পরে মানবিক দিক বিবেচনায় সাতজনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর এখন পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোাগ্য পদক্ষেপ নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত কাউকে চিহ্নিতই করতে পারেনি প্রশাসন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া বলেন, হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে বিনা অপরাধীরাও শাস্তির আওতায় চলে আসতে পারে। বিনা অপরাধে যেন কেউ শাস্তি না পায়, এ বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করার জন্যই শাস্তি দিতে বিলম্ব হচ্ছে। তাছাড়া অনেকেই সংঘর্ষের ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যকলাপে জড়াবেন না মর্মে অঙ্গীকার দিয়েছিলেন। এসব দিক বিবেচনায় ক্ষমা করা হয়েছে।
গত ৫ মাসে ছাত্রলীগের উপগ্রুপগুলো সংঘর্ষে জড়িয়েছে মোট ১২ বার। এসব সংঘর্ষে বিভিন্ন গ্রুপের ৫৬ নেতা-কর্মী আহত হন। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে একই ঘটনায় দ্বিতীয়বারের মতো সংঘর্ষে জড়িয়েছে শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ ভার্সিটি এক্সপ্রেস ও সিক্সটি নাইন। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার শাটল ট্রেনের সিটে বসা নিয়ে তর্কাতর্কির জের ধরে এ সংঘর্ষ হয়। দুদিনের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৬ নেতাকর্মী আহত হন। এছাড়া সংঘর্ষ থামাতে এসে সহকারী প্রক্টর শহিদুল ইসলামও ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হয়েছেন। তবে এ ঘটনায় উভয় পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করছে।
সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতা শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাইদুল ইসলাম বলেন, প্রথম শাটল ট্রেনে জুনিয়রদের মধ্যে বাকবিতন্ডার জেরে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। আমাদের ছেলেপেলেদের তারা সোহরাওয়ার্দী হল থেকে বের করে দিয়েছে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তারা তাতে সাড়া না দিয়ে পরেরদিন রাতে আমাদের ছেলেদের উপর পুনরায় হামলা করেছে। আমাদের ছেলেরা তা প্রতিহত করেছে।
ভিএক্স গ্রুপের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, আগের দিনের ঘটনাটা আমরা সিনিয়ররা কথা বলে অনেকটাই সমাধান করে ফেলেছিলাম। দুএকদিন পর পরিস্থিতি কিছুটা ঠান্ডা হলে আমরা ছেলেদের যার যার হলে পাঠিয়ে দিতাম। কিন্তু এর মধ্যে তারা বিনা উস্কানিতে আমাদের ছেলেদের উপর অতর্কিত হামলা করেছে। আমাদের ছেলেরা তাদের আক্রমণ প্রতিহত করেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসন ও পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
এর আগে গত ২ ডিসেম্বর রাতে এএফ রহমান হলের দেয়ালে চিকা মুছে দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল দুটি উপগ্রুপ বিজয় ও ভিএক্স। এতে ১৩ নেতা-কর্মী আহত হয়েছিলেন। বিজয় গ্রুপের নেতা-কর্মীদের রাম দা উঁচিয়ে স্লোগান দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল।
এসব বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে বগিভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বগিভিত্তিক সংগঠনের নামে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ থাকবে।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, এখানে পক্ষ বিপক্ষ দেখার সুযোগ নেই। অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিও অপরাধীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার আহবান থাকবে।