চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভোটার তালিকা জীবিত থেকেও মৃত আছে দ্বৈত ভোটারও

6

চট্টগ্রামের পাঁচ জেলার বিদ্যমান ভোটার তালিকায় জীবিত থেকে মৃত ভোটার আছে ২১০ জন। আবার একই ব্যক্তি দুই জায়গার (দ্বৈত) ভোটার আছেন চার হাজার ৩৫৩ জন। চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভোটার তালিকায় এমন ভোটারের তথ্য মিললে তা সংশোধনে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে ইচ্ছেকৃতভাবে দ্বৈত ভোটার হওয়ার অভিযোগে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে ১৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আবার ভুলবশত দ্বৈত ভোটার হওয়ায় একটি ভোটার ডাটাবেজ থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান পূর্বদেশকে বলেন, ‘জীবিত থেকে যেসব ভোটার মৃত স্ট্যাটাস এসেছে সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। এগুলোর সংশোধন প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ। উপজেলা ও জেলা অফিসেই তাৎক্ষণিক ঠিক করে দেয়া যায়। অনেক সময় তথ্য সংগ্রহকারীরাই ডাটা সংগ্রহের সময় ভুল তথ্য লিপিবদ্ধ করায় এমন সমস্যা হয়েছে। দ্বৈত ভোটারের বেলায় একটি কমিটি আছে তারাই যাচাইবাছাই করে মতামত দিবে। অনেকেই ভুলবশত দ্বৈত ভোটার হয়, আবার অনেকেই ইচ্ছে করেই হয়। এক্ষেত্রে একই তথ্য ডাটাবেজে দুইবার থাকলে আমরা একটি বাতিল করি। যদি ছবি, বায়োমেট্রিক সবগুলো ঠিক থাকে শুধু নামের পরিবর্তন করে দ্বৈত ভোটার হলে এক্ষেত্রে আমরা বিচারের মুখোমুখি করতে পারি।’
সূত্র জানায়, সাধারণত দ্বৈত ভোটার হওয়ার ঘটনা ঘটে কিছুটা অজ্ঞতা বা অসচেতনতার কারণে। ভোটার হিসেবে নিবন্ধন হওয়ার পর দীর্ঘ সময়ে জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে না পাওয়া, নিবন্ধনের স্লিপ হারিয়ে ফেলা, প্ররোচনা, শিক্ষা সনদ ও জন্ম নিবন্ধনের বয়সের সঙ্গে ভোটার হিসেবে বয়সের গরমিল থাকায় দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেন অনেকে। এছাড়াও জেনে ও বুঝে উদ্দেশ্যমূলকভাবেও কেউ কেউ দ্বৈত ভোটার হয়ে থাকেন।
ভোটার তালিকা আইন-২০০৯ এর ১৮ ধারা অনুযায়ী, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ভোটার হওয়া, কর্তনের ক্ষেত্রে এমন কোনো লিখিত বর্ণনা বা ঘোষণা দেয়া বা মিথ্যা এবং যা তিনি মিথ্যা বলে জানেন বা বিশ্বাস করেন বা সত্য বলে বিশ্বাস করেন না, তা হলে তিনি অনধিক ছয় মাসের কারাদÐ বা দুই হাজার টাকা অর্থদÐ বা উভয় দÐে দÐিত হবেন।
গত বছরের নভেম্বর চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় দ্বৈত ভোটারের তথ্য মিলেছে চার হাজার ৩৫৩ জন। গত নভেম্বর পর্যন্ত খাগড়াছড়ি সদরে পাঁচজন, দীঘিনালায় সাতজন, মহালছড়িতে ১১৯ জন, রামগড়ে ১৭০ জন, মানিকছড়িতে এক হাজার ৬৪১ জন, বান্দরবান সদরে দুইজন, আলীকদমে ৯৪ জন, নাইক্ষ্যংছড়িতে ১২০ জন, রুমায় ১২৫ জন, রাঙামাটি সদরে চারজন, বাঘাইছড়িতে চারজন, কক্সবাজার সদরে ৪৩ জন, চকরিয়ায় ৮৫২ জন, মহেশখালীতে ১৩ জন, কুতুবদিয়ায় ছয়জন, রামুতে ৩১ জন, চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানায় দুইজন, রাউজানে ১০ জন, বোয়ালকালীতে পাঁচজন, কর্ণফুলীতে দুইজন, আনোয়ারায় পাঁচজন, লোহাগাড়ায় ১৮ জন, বাঁশখালীতে দুইজন দ্বৈত ভোটারের তথ্য মিলেছে। ইতোমধ্যে দ্বৈত ভোটার হওয়ার অভিযোগে কক্সবাজার সদরে ২১ জনের নামে একটি, চকরিয়ায় আটটি, হাটহাজারীতে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর রাঙ্গুনিয়ার উত্তর লালানগরের মোহাম্মদ দিদারুল ইসলাম ও ফাতেমা বেগম নামে এবং ৯ ডিসেম্বর বাঁশখালীর বাহারছড়া ইউনিয়নের ছাপাছড়ির বাসিন্দা মো. মমতাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দ্বৈত ভোটার হওয়ার অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের করা হয়।
চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় জীবিত হয়েও মৃত ২১০ ভোটারের তথ্যও মিলেছে ভোটার তালিকায়। এরমধ্যে বান্দরবানের সদরে তিনজন, আলীকদমে একজন, রোয়াংছড়িতে তিনজন, রুমায় একজন, খাগড়াছড়ি সদরে চারজন, মহালছড়িতে তিনজন, রাঙামাটি সদরে ২৪ জন, বাঘাইছড়িতে পাঁচজন, নানিয়ারচরে একজন, বরকলে একজন, কাউখালীতে ছয়জন, কাপ্তাইয়ে পাঁচজন, কক্সবাজার সদরে দুইজন, চকরিয়ায় আটজন, পেকুয়ায় একজন, মহেশখালীতে দশজন, রামুতে আটজন, উখিয়ায় একজন, টেকনাফে ছয়জন, চট্টগ্রামের ডবলমুরিংয়ে একজন, পাহাড়তলীতে দুইজন, সীতাকুন্ডে একজন, ফটিকছড়িতে ২০ জন, হাটহাজারীতে ছয়জন, রাউজানে ১৫ জন, বোয়ালখালীতে ২৪ জন, কর্ণফুলীতে ১৫ জন, আনোয়ারায় ১৫ জন, সাতকানিয়ায় ১৩ জন জীবিত হয়েও মৃত ভোটারের তথ্য মিলেছে। জীবিত হয়েও যেসব ভোটারের তথ্য মৃত দেখাচ্ছে সেগুলো তাৎক্ষণিক উপজেলা ও জেলা নির্বাচন অফিসে সংশোধন করা যাচ্ছে।