চট্টগ্রামের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

46

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর ঘোষণার পর থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলো বাংলাদেশের মানুষ। ২১ ফেব্রুয়ারি এখন বিশ্বের সব ভাষাভাষী মানুষের কাছে নিজস্ব ভাষার প্রতি প্রেম ও শ্রদ্ধার একটি দিন। এদিন ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে তাদের স্মরণ করে বাংলাদেশের মানুষ। আমাদের জাতীয় জীবনে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো, বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তির প্রেরণা জোগায় শহীদ মিনার। তবে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন চট্টগ্রামের অধিকাংশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পেরিয়ে গেলেও চট্টগ্রামের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার।
তবে সরকারিভাবে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলো পালন করার নির্দেশনা রয়েছে। এসব দিবসে শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার কথা থাকলেও শহীদ মিনার না থাকায় তা আর সম্ভব হচ্ছে না। অনেক স্কুলে অস্থায়ী শহীদ মিনারেই শ্রদ্ধা নিবেদন করে শিক্ষার্থীরা। ২০০৯ সালে এক আদেশ জারির মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে শহীদ মিনার নির্মাণ বাধ্যতামূলক করে সরকার। কিন্তু দীর্ঘদিনেও বন্দরনগরীর অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার। চট্টগ্রামের মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসও জানে না তাদের কয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ আছে বা নেই তার সঠিক সংখ্যা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলা ও নগরের ৬টি থানা মিলে ২ হাজার ২৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে নগরের ৬ থানার ১শ’ ৮৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার। অপরদিকে জেলার ১৪ উপজেলার মধ্যে শহীদ মিনার নেই ১ হাজার ৫৫২টি স্কুলে। এদিকে কয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সে তালিকাও নেই জেলা শিক্ষা অফিস ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে। যদিও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে ৪৮ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর নাহার জানান, আসলে কয়টি স্কুলে শহীদ মিনার আছে তা আমার জানা নেই। তবে বেশ কিছু স্কুলে আমরা পরিদর্শনে গিয়ে শহীদ মিনার দেখেছি। আবার অনেক স্কুলে নির্মাণধীন শহীদ মিনারও দেখেছি।
তবে শিক্ষা প্রকৌশলের তথ্যমতে চট্টগ্রামে মাত্র ২১টি স্কুলে শহীদ মিনার আছে। এর মধ্যে রয়েছে মিরসরাইয়ের পাঞ্চমাননেছা উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্ব বাকলিয়া সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, সরকারি মহসিন কলেজ, সরকারি মহসিন স্কুল, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়, পাথরঘাটা মহিলা কলেজ, জেএমসেন উচ্চ বিদ্যালয়, মহিলা পলিটেকনিক, সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়, সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি কমার্স কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, পতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ হালিশহর উচ্চ বিদ্যালয়, পটিয়া আবদুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় ও চরখাগরিয়া খাদেম আলী উচ্চ বিদ্যালয়। এছাড়াও শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ও হালিশহর হাউজিং স্টেট উচ্চ বিদ্যালয়।
এদিকে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় শহীদ মিনার না থাকায় কলাগাছ বা কাঠ দিয়ে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে দিবসটি পালন করে শিক্ষার্থীরা। উপজেলার ১২৭টির মধ্যে ১১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এখনো শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়নি। এ কারণে পার্বত্য অঞ্চলের নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা ভাষা দিবসে বীর সেনানীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের যথাযথভাবে সুযোগ পাচ্ছে না।
এ বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে ভাষা সৈনিক আবদুস সালাম মাস্টারের পুত্র সাইফুদ্দীন সালাম মিঠু জানান, জাতি হিসাবে আমরা সত্যিই দুর্ভাগা যে, ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পূর্ণ হলেও এখনো সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারিনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশই হলো শহীদ মিনার। এখান থেকেই একজন শিক্ষার্থী দেশ, মাতৃভাষা ও স্বাধীনতা সম্পর্কে জানবেন। দেশ তথা ভাষার ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা ছাড়া একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কখনও মূলধারায় আসতে পারে না। পাশাপাশি ভাষা সৈনিক ও ভাষা শহীদদের জীবনী, তাঁদের বীরত্ব নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য আহবান জানাবো।