চকরিয়া পৌর শহররক্ষা বাঁধে ফাটল, আতঙ্ক

13

ইকবাল ফারুক,চকরিয়া

কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পৌর শহররক্ষা বাঁধের বিভিন্নস্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানির তুড়ে বাঁধটি যে কোনো সময় ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। গত এক সপ্তাহে ভূমিসহ অন্তত ছয়টি ঘর পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় পৌর শহররক্ষা বাঁধের আশপাশের বাসিন্দাদের কাটছে নির্ঘুম রজনী। বাড়ি হারার ভয়ে তারা চরম আতংকে ভুগছেন। দিবারাত্রি নারী-পুরুষ এককাট্টা হয়ে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন। নদীভাঙন এখন শহর রক্ষাবাঁধ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ায় তাদের আতংক আরো বেড়ে গেছে। ফলে শতাধিক ঘরের সদস্যরা তাদের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। চকরিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দিগরপানখালী গ্রামে বিরাজ করছে এই আতঙ্ক দৃশ্য। এদিকে শুক্রবার বিকাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরী নির্মাণ কাজের অংশ হিসেবে জিও ব্যাগ ফেলে পৌর শহর রক্ষা বাধ রক্ষার চেষ্টা করছে।
সরজমিন ঘুরে ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টানা চারদিনের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি তোড়ে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে হঠাৎ করে শহর রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। এর কিছুক্ষণ পরে বাঁধের একটি অংশে নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। এতে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ে বাঁধ সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দরা। পরে তারা স্থানীয় সাংসদ ও মেয়রসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি জানিয়ে খবর দেন। সাথে সাথে তারা ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহায়তার বালির বস্তা ও মাটি ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা চালায়। এদিন রাতে কোন রকমে বাঁধটি রক্ষা করা হলেও কতক্ষণ ঠিকে থাকবে এই বাঁধ তা নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে।
বাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, শহর রক্ষা বাঁধের ভাঙ্গন ঠেকাতে বর্ষার আগেই ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিলো। সঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নেয়ায় বাঁধ সংলগ্ন লোকজনদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। নদীর তীরে বøক, বালি দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। ভাঙ্গন শুরু হলে নিকটস্থ বিভিন্ন বাসিন্দাদের সহায়তার বালির বস্তা ও মাটি দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা অল্প পানির ধাক্কায় বাঁধ পানিতে ভেসে যায়। ফলে, সড়ক কাম বাঁধে ফাটল ধরে। যেকোন মহুর্ত্বে ওই বাঁধ ভেঙ্গে পৌরশহর ও পার্শ্ববর্তী ফাঁশিয়াখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা এহেছানুল হক বলেন, স্থানীয়ভাবে লোকজনের সহায়তায় বালির বস্তা বাঁধের উপর ফেলে পৌর শহর বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে বাঁধটি স্থায়ীভাবে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা না হলে শতশত পরিবার তাদের আশ্রয়স্থল হারিয়ে পথে বসবে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, পৌর শহররক্ষা বাঁধটি ভাঙার খবর পেয়ে রাতেই স্থান পরিদর্শন করেছি। বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহন করা হবে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গন রোধে চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম শেষ হলে জরুরী ভিত্তিতে বাঁধটি স্থায়ীভাবে নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হবে।
চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, পৌর শহররক্ষা বাঁধটি বর্তমানে খুবই হুমকির মুখে। বৃহস্পতিবার রাতে বাঁধের অর্ধেক অংশ পানির স্্েরাতে ভেসে গেছে। বাঁধটি রক্ষা জন্য সারারাত শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেছি। এই বাঁধ ভেঙ্গে গেলে পৌরশহরে ব্যাপক ক্ষতি হবে পাশাপাশি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক টিকিয়ে রাখাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, বন্যার পানির তোড়ে পৌর শহর রক্ষা বাঁধ ভাঙনের খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বাঁধটির বিষয়ে ডিসি স্যারকে অবহিত করেছি। স্থায়ীভাবে পৌর শহর রক্ষা বাধ নির্মাণের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) সংসদ সদস্য জাফর আলম বলেন, রাতে খবর পেয়ে বাঁধটি রক্ষা জন্য চেষ্টা চালিয়েছি। স্থায়ী বাঁধ নির্মান ছাড়া এই বাঁধটি ঠিকিয়ে রাখা সম্ভব না। তিনি আরও বলেন, পৌর শহর রক্ষা বাঁধটি রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলবো। ইতোমধ্যে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বাঁধটি দেখে গেছেন। বাঁধটি রক্ষার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।