চকরিয়ার প্রাইভেট হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ

4

চকরিয়া প্রতিনিধি

চকরিয়া পৌর সদরের বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র জমজম হাসপাতালের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২৪ নভেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে ভুয়া ডাক্তার শনাক্ত ও ভুল তথ্য উপস্থাপনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশের আলোকে কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ নির্দেশনা লিখিতভাবে জমজম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন দত্ত।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে। তবে হাসপাতালটিতে আগে থেকেই রোগী ভর্তি আছে, তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ৭২ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। যাতে ভর্তিকৃত রোগীরা ছাড়পত্র নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে পারেন। এ সময় নতুন কোন রোগী ভর্তি করাসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
ডা. শোভন দত্ত আরও বলেন ৭২ ঘণ্টার পর যদি হাসপাতালের কার্যক্রম চালু রাখা হয়, তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জমজম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম কবির বলেন, হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ রাখা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পত্রটি হাসপাতালের দায়িত্বরত ম্যানেজার প্রাপ্তিস্বীকারমূলে গ্রহণ করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও জানান ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
প্রসঙ্গত, বিএমডিসি নম্বরযুক্ত কোন সনদ না থাকলেও এমবিবিএস এবং লিভার, ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞসহ নামের পাশে বড় বড় ডিগ্রি লাগিয়ে চকরিয়া জমজম হাসপাতালে রোগী দেখার নামে প্রতারণা করে আসছিলেন হুমায়ুন কবির নামে এক ভূয়া চিকিৎসক।
বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসলে গত ১৬ নভেম্বর হাসপাতালটিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ-জামান।
এ সময় মো. হুমায়ুন কবির ভূয়া চিকিৎসক প্রমাণিত হওয়ায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ও সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলার পর তাকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। এছাড়া ৫০ হাজার টাকা অর্থদÐ দেয়া হয়, তা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদন্ড দিয়ে জেলহাজতে পাঠোনো হয়।
জমজম হাসপাতাল থেকে ভূয়া চিকিৎসক গ্রেপ্তারে চকরিয়ার সর্বত্রই তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগও নড়েচড়ে বসে। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে জমজম হাসপাতালের সকল চিকিৎসকের বৃত্তান্ত সিভিল সার্জন কার্যালয়ে প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালটি সাময়িক বন্ধের ব্যাপারে নির্দেশনা আসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, জমজম হাসপাতালের ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের ছাড়পত্র দিতে ৭২ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে।